আমরা বেশ কিছুদিন থেকে 'আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সি' কথাটার সঙ্গে বেশ পরিচিত। আমাদের ফোনে সর্বক্ষণ আমাদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকে এই এআই নির্মিত 'অ্যালেক্সা'। অ্যালেক্সা আমাদের প্রচুর প্রশ্নের উত্তর দেয়, প্রচুর মজার মজার কথা বলে হাসানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সব সময় তা স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনা। স্যামসাং-এর তরফে এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে বিক্সবি-কে আনা হয়েছিল, কিন্তু তেমন সাফল্য পাওয়া যায়নি।
ক্রমাগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গিয়ে স্যামসাং-এর স্টার ল্যাব-এর প্রণব মিস্ত্রি বিশ্বে প্রথম কৃত্রিম মানব তৈরী করেছেন। স্যামসাং-এর সিইএস ২০২০ তে এই কৃত্রিম মানুষ 'নিওন'-এর দেখা পাওয়া যাবে। নিওন তার সঙ্গীর দুঃখে সান্ত্বনা দেবে প্রিয় বন্ধুর মত। একেবারে মানুষের মতো করে কথা বলতে পারবে। ভাষাও কোনও রকম বাধা হয়ে দাঁড়াবেনা। নিওন কথা বলতে পারবে হিন্দি সহ বিশ্বের প্রথম সারির প্রচুর ভাষায়। অ্যালেক্সা-বিক্সবি বা সিরি-র মতো ডিজিট্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট অথবা যন্ত্রমানবের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে-এরকমটা একদম মনে হবেনা। সেই কারণেই এটিকে যন্ত্রমানব না বলে কৃত্রিম মানব বলা হচ্ছে স্যামসাং-এর তরফ থেকে।
স্যামসং-এর তরফে জানানো হয়েছে, নিওনকে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিং-এর মাধ্যমে এমন এক হিউম্যানয়েড অবতার (মানুষের যান্ত্রিক প্রতিরূপ) হিসেবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যে তার সঙ্গীর সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদান করতে পারবে একেবারে মানুষের মতোই খুব কম সময়ের প্রতিবর্ত ক্রিয়ার মাধ্যমে। স্যামসাং-এর সিক্সথ সেন্স প্রযুক্তি এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটি গ্যালাক্সি গিয়ার হেডসেট তৈরির মুখ্য কারিগর স্টার ল্যাবের সিইও এবং প্রেসিডেন্ট প্রণব জানিয়েছেন, এটি হল কমপিউটারে তৈরি করা জ্ঞান এবং অনুভূতির মিশ্রনে তৈরি এমন এক মানব, যাকে কর্তৃপক্ষ নিজের পছন্দমতো যে কোনও কাজকর্ম করার জন্য প্রোগ্রামিং করেছেন। রিয়েলিটি, রিয়েল টাইম রেসপনসিভনেস, থ্রি আর মিশ্রণে আগামী দিনে যখন এই অবতার বাণিজ্যিকভাবে মার্কেটে আসবে, তখন সেটিকে আরও গ্রাহকবান্ধব, আরও মানবিক, আরও চিন্তাশীল করে তোলার কাজ হবে। উক্ত প্রকল্পটিও ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
স্যামসাং-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি বছরের মাঝামাঝিতে 'নিওন ওয়ার্ল্ড ২০২০' প্রদর্শনীতে নিওনের মূল চালিকাশক্তি স্পেকট্রা প্রযুক্তির খুঁটিনাটি দেখানো হবে। সেই সময় নিওনের আরও উন্নত সংস্করণ দেখতে পারবেন আগ্রহীরা। প্রণব মিস্ত্রি জানান, আগামী দিনের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে নিওন, বিজ্ঞানের এক নতুন জগতে পৌঁছে দেবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, আগামী দিনে স্পেকট্রার প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হয়ে হিউম্যান ইমোশন, ইন্টেলিজেন্স এবং এক্সপ্রেশনকে অন্য স্তরে পৌঁছে দেবে। যার ফলস্বরূপ এই কৃত্রিম মানবকে আসল মানুষের সঙ্গে তফাৎ করা মুশকিল হয়ে পড়বে। আপাতত নিওনের বিটা পাইলট টেস্টিং-এর জন্য ভারত সহ একাধিক দেশের একাধিক সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান প্রণব।