কচি কলাপাতায় সরষের তেল মাখিয়ে তার মাঝে বাটা নারকেল আর সরষে মাখা ভেটকি মাছ। চাটুতে সেঁকা হোক বা, ডুবো তেলে ভাজা বাঙালি পাতুরি যতটা ভেটকি মাছের, ঠিক ততটাই কলাপাতার। কলাপাতায় গরম ভাত বাঙালির আবেগ। কখনও কখনও তা বদলে যায় খিচুড়িতে। তাতে আবেগ কমে না।
আজকাল সেরামিক্স, বোন চায়না, থার্মোকলের দৌলতে হারিয়ে গিয়েছে বাঙালির কলাপাতায় পাত পেড়ে খাওয়ার ট্র্যাডিশন। বিশেষ করে দামে সস্তা থার্মোকল তার দাপট দেখাচ্ছে শহর থেকে গ্রামে। কিন্তু সাদা প্লেটের দৌরাত্ম্য আজ প্রকৃতি সুরক্ষার প্রশ্নে বড় উপদ্রব।
কোথায় পাব কলাপাতা?
উৎসবে অনুষ্ঠানে পঙত্তি ভোজনে কেন ব্রাত্য কলাপাতা যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে প্রথমেই উত্তর আসে দিন বদলেছে। সাধারনের কাছে দর্শনধারীর প্রশ্নে কয়েক যোজন এগিয়ে সেরামিক্সের আয়োজন। কিন্তু একটু বাজার ঘুরে দেখলে ঘরোয়া অনুষ্ঠানেও দ্বিতীয় উত্তর অবধারিতভাবে ‘কোথায় পাব অত কলাপাতা?’
তবে ইকো-ফ্রেন্ডলি ট্রেন্ডে সওয়ার হয়ে খুব হালকা চালে হলেও ফিরছে কলাপাতার ট্র্যাডিশন।
কলাপাতার অনেক গুণ। অ্যান্টি অক্সিডেন্টস-এর ‘পাওয়ার হাউস’ বলা যায় কলাপাতাকে। কলাপাতায় নিয়মিত আহার বা কলাপাতায় রান্না করা পদ শরীরের কোষকে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। ক্যান্সার সমেত বিভিন্ন ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’র বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সাহায্য করে। ব্যাকটেরিয়ার উপদ্রব থেকে সামলে রাখে।
কলাপাতার ওপর থাকে মোমের আস্তরন। গরম খাবার পরিবেশন করা হলে সেই আস্তরন খাবারে মিশে যায়। যা ক্ষতিকারক তো নয়ই, উপরন্তু তাতে খাবারের স্বাদও বাড়ে।
কলাপাতা ব্যবহারের পর বর্জ্য হিসেবে পরিতক্ত্য হলে তা মাটিতে মিশে, কোনও অবশেষ থাকে না। জমিতে সারের কাজ করে। বহু জায়গায় ব্যবহৃত কলাপাতা জমিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এতো গেল পরিবেশ, স্বাস্থ্য এ সংক্রান্ত সুবিধা। কলাপাতা কিন্তু হেঁশেলে গৃহিণীদের উপকারী বন্ধু। চেনা রান্নাকেউ বদলে দেওয়া যায় শুধু কলাপাতায় মুড়ে। রান্না থেকে পরিবেশন সবেতেই। আবার, কলাপাতায় খেলে শরীরে সাবান যাওয়ার ভয় নেই। বাসন ধোয়া-মোছার খাটুনি কমে যায়। বাড়তি বাসন ব্যবহারও কমে যায়। ‘উইজ অ্যান্ড থ্রো’ বলে জল অপচয়ও কমে।
এমন উপকারী বন্ধুকে কি বাতিল করা উচিত, নাকি ব্যবহার বাড়িয়ে হয়ে ওঠা উচিত একটু বেশি ইকো-ফ্রেন্ডলি- সাশ্রয় ভাবনায়? কী বলবে জনতা?