রাবণের মন্দির

রামায়ণ মানেই রাম রাবণের যুদ্ধ। রামের স্ত্রী সীতাকে হরণ করেই সেই লড়াইয়ের সূত্রপাত করেন রাবণ। কিন্তু পরের স্ত্রীকে নিয়ে পালানো যত নষ্টের মূল এই রাবণকেই পুজো করেন ভারতীয়রা। আর সেই রাবণ একটা দুটো নয়, সারা দেশ জুড়ে অন্তত পাঁচ পাঁচটি রাজ্যে একাধিক মন্দির পূজিত হন ! কী আশ্চর্য! সত্যিই সারা ভারত জুড়ে নানান রাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে রাবণের মন্দির।
 
লঙ্কা নরেশ রাবণ হলেন পরাক্রমী বীর। শিবের উপাসক। ঋষিপুত্র রাবণ বীরত্ব অসীম। তিনি শ্রেষ্ঠতম ব্রাহ্মণও বটে। দেখে নেওয়া যাক, আজও কোথায় কোথায় তিনি পুজো পান। মন্দোর রাবণ মন্দির যা যোধপুর, রাজস্থানে অবস্থিত। মন্দোরের মৌদগিল ব্রাহ্মণেরা বিশ্বাস করেন যে, তারা রাবণের বংশধর। তারাই পূর্বেপুরুষের পুজোর জন্য ওই মন্দিরটি যোধপুরের মন্দোর অঞ্চলে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।তারা দশেরা উদযাপন করে না, তবে শ্রাদ্ধ করেন এবং একই দিনে পিন্ড দান করেন।
 
 
Ravana1
 
উত্তরপ্রদেশের কানপুরে অবস্থিত রাবণের মন্দিরটি বছরে একটি দিনেই খোলা হয়ে থাকে। স্থানীয়দের বক্তব্য, দশেরা বা দশহারা তিথিতে জন্মেছিলেন রাবণ। তাঁর মৃত্যুও হয়েছিল একই দিনে। তাই প্রতি বছর দশেরার দিন ওই মন্দিরে রাবণের পূজো হয়।
 
বিসরাখ রাবণ মন্দিরটিও উত্তরপ্রদেশেই অবস্থিত। মনে করা হয়, উত্তরপ্রদেশের গ্রেটার নয়ডায় বিসরাখ রাবণের জন্মস্থান। এই গ্রামে রাবণের উপাসনা করা হয় এবং এখানকার মানুষেরা দশের উদযাপন করেন না। রাবণের প্রতিমাও পোড়ান না, কারণ তাদের কাছে নবরাত্রি আনন্দের নয়, শোকের সময়। 
 
অন্ধ্রপ্রদেশের অন্তর্গত কাকিনারার রাবণের মন্দিরে দশ মাথা বিশিষ্ট অতিকায় রাবণের মূর্তিকে পুজো করা হয়। মন্দিরটি আজ যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছে, মনে করা হয় রাবণ নিজেই সেটিকে নির্বাচন করেছিলেন। যদিও নিজের মন্দির হবে বলে নয়, জনশ্রুতি অনুযায়ী রাবণ ওই স্থানে শিবের উপাসনার জন্য মন্দির গড়তে চেয়েছিলেন। মনে করা হয় রাবণ এখানেই জন্মেছিলেন। এখানকার দাভে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় নিজেদেরকে রাবণের বংশধর বলে দাবি করেন। তাদের কথানুযায়ী, রাবণ হচ্ছেন ত্রিলোকেশ্বর এবং একজন মহান ব্যক্তি। 
 
 
Ravana2
 
 
হিমাচলপ্রদেশের বাইজনাথে রাবণকে শিবের উপাসক হিসেবে পুজো করা হয়। রাজধানী দিল্লিতেও রয়েছেন রাবণের মন্দির। মন্দাসৌর হল লঙ্কানরেশ রাবণের মন্দির, মধ্যপ্রদেশের মালওয়া অঞ্চলের মন্দসৌড় শহরে রাবণের নামে এই মন্দিরটি অবস্থিত। স্থানীয়দের মতে, আজ যেখানে এই মন্দিরটিতে রয়েছে, সেখানেই রাবণ এবং মন্দোদরী দেবীর বিয়ে হয়েছিল। রাবণের বিয়ের কথাকে স্মরণে রেখেই এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল।
 
রাবণের পাশাপাশি মন্দিরের মধ্যে আরও বেশ কয়েকটি দেবদেবতা রয়েছে, তাঁরাও পূজিত হন। রাভঙ্গরাম মন্দির, এই মন্দিরেও রাবণ পুজো পান। মধ্যপ্রদেশের বিদিশা জেলায় অবস্থিত, রাবণগ্রাম ভারতের অন্যতম বিখ্যাত রাবণ মন্দির। রাবণের নামেই এই গ্রামের নাম হয়েছে রাবণগ্রাম। বিদিশার বাসিন্দারা তাঁদের সমস্ত শুভ অনুষ্ঠানের আগে রাবণের মন্দিরে ঘুরতে যান, প্রদক্ষিন করেন। তাঁরা মনে করেন, এই মন্দির তাঁদের জন্য শুভ ও মঙ্গলজনক। তাই বিয়ে থেকে শুরু করে যেকোন শুভ কাজের আগেই তাঁরা এই মন্দিরে যান।
 
 
Ravana3
 
 
প্রচলিত বিশ্বাসে মনে করা হয় যে, রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী বিদিশার বাসিন্দা।মধ্যপ্রদেশের এই অঞ্চলে রাবণের স্ত্রী মন্দোদরীর জন্মস্থান বলেও পরিচিত। রাবণের নামেই নামাঙ্কিত এই এলাকায়, দশ মাথা বিশিষ্ট রাবণ জামাই হিসেবেই পূজিত হন। কারণ এই স্থানেই নাকি রাবণ মন্দোদরীকে বিবাহ করেছিলেন বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। 
 
আবার অন্য একটি মতে, মন্দোদরী দেবী নাকি রাবণকে বিবাহ করার আগে মধ্যপ্রদেশের বিদিশার অন্তর্গত এই গ্রামে কিছুদিন ছিলেন। সেই কারণে এই অঞ্চলে মন্দোদরী কন্যা রূপে পুজো পেয়ে আসছেন। তাঁর সঙ্গে পূজিত হন রাবণও।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...