হাজার বছর আগে রোমেও ছিল ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ

আজকাল বাড়িতে রান্না না হলে আছে হাজার এক রেস্তোরাঁ আর হোটেল। রাস্তায় বেরলেই মোড়ে মোড়ে ফাস্টফুড কর্নার। উপচে পড়া ভিড়। আছে অ্যাপ-ফুড অপশন।

আজ থেকে দু’হাজার বছর আগেও ছিল এমন ব্যবস্থা। প্রাচীন রোমে খোঁজ পাওয়া গিয়েছে এমন রেস্তোরাঁর।

 রোমের নেপলস এর কাছে পম্পেই জনপদ। ৭৯ খ্রিষ্টাব্দে  ভিসুভিয়াসের দুটি আগ্নেয় গিরি থেকে ভয়াবহ অগ্নুৎপাতের কারণে পম্পেই ধ্বংস হয়ে যায়। ৬০ ফুট উঁচু ছাই আর পাথরের নিচে চাপা পড়ে যায় সমৃদ্ধশালী এই শহর।

১৭৪৮ সালে একদল অভিযাত্রী পম্পেই শহরের ধংসাবশেষ খুঁজে পান। তার পর পম্পেই নতুন করে খোঁজ শুরু হয়।

পম্পেই শহরের মানুষ বাড়িতে রান্নার পরিবর্তে দোকান বা রেস্তোরাঁর খাবার বেশি পছন্দ করত। এই ধরনের রেস্তোরাঁগুলিকে বলা হত ‘থার্মোপোলিয়াম’।  ‘থার্মোপোলিয়াম’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ ‘ এমন এক জায়গা যেখানে গরম পানীয় বিক্রি করা হয়’। থার্মোপোলিয়ামকে ফাস্টফুড কর্নার বললেও ভুল হয় না।

rome-2

প্রত্যেক বাড়িতে আলাদা করে নিজস্ব রান্নার ব্যবস্থা বা রান্নাঘর রাখার মতো আর্থিক ক্ষমতা অনেকেরই ছিল না। তারা এইসব থার্মোপলিয়া থেকে খাবার সংগ্রহ করত। কেউ কেউ আবার রান্নার উপকরণ দিয়ে আসত থার্মোপলিয়ার ‘বেকার’দের কাছে।

 ‘থার্মোপলিয়াম’-এর  আকার, আয়তন ছিল এখনকার  রেস্তোরাঁর মতোই।  ভিতরে রান্নার জন্য আলাদা ঘর। সেখান থেকে রান্না রা খাবার বাইরের টেবিলে পৌঁছে দেওয়া হত। ‘থাকত টেকওয়ে- কাউন্টার’, সেখান থেকে ক্রেতারা খাবার সংগ্রহ করতে পারব।

থার্মোপেলিয়াতেই ‘কাউন্টারটপ’গুলোর আয়তন বেশ বড় হতো।

কাউন্টারটপে পাত্র থাকত। সেগুলিকে বলা হত ‘ডলিয়া’। শুকনো এবং ঠাণ্ডা খাবার রাখা হত তাতে। ক্রেতারা সেখান থেকে পছন্দ করার পর ভিতরে পাঠান হত গরম করে আনার জন্য।

rome-1

ঐতিহাসিকরা জানিয়েছেন, থার্মোপেলিয়াতে খুব কম সংখ্যক ক্রেতা বসে আহার করত। বেশির ভাগই ‘কাউন্টার’ থেকে কিনত।

রোমের সমাজে পরিবার গুরুত্ব পেত।  পরিবারের সব সদস্য বাড়িতেই মিলিত ভাবে আহার সম্পন্ন করত। এটাই ছিল প্রচলিত প্রথা। অন্যথা হলেই সেই পরিবারের ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন উঠত সমাজে।

খাবারের তালিকায় থাকত ডাল, মাংস এবং বিভিন্ন ধরনের চিজ।‘গারুম’ নামে এক ধরনের ফিস সসও পাওয়া যেত সে সময়। মধুর বহুল ব্যবহার প্রচলিত ছিল।

পম্পাই শহরে প্রায় ১৫০ টির মতো থার্মোপোলিয়াম ছিল। যা বুঝিয়ে দেয় রোমে কতটা জনপ্রিয় ছিল এই ফাস্ট ফুড কর্নার ছিল।

rome 3

চটজলদি গরম খাবারের জন্য শহুরে রোমানরা থার্মোপোলিয়ামের ওপরই নির্ভর করত। মধ্য ও নিম্নবিত্তরা তো বটেই, এমন কি যে সব ধনী রোমান নাগরিকদের বাড়িতে নিজস্ব রান্নার বন্দোবস্ত থাকত, তারাও আসত এখানে।

এক সময় অপরাধীরা অপরাধ ঘটিয়ে এইসব থার্মোপেলিয়াতে লুকিয়ে থাকত। যার কারণে প্রশাসনের নজর থাকত থার্মোপেলিয়াগুলির ওপর। শোনা যায় সম্রাট ক্যালিগুলা গরম জল বিক্রির অপরাধে এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন।

 

 

 

 

  

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...