কলাপাতা কি শুধু পাতুড়িতেই লাগে? না....আজ এমন এক মিষ্টির কথা বলব যার সাথে কলাপাতার সখ্যতা অনেকদিনের। বাংলাদেশের এই মিষ্টি দু’শো বছর ধরে তার ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। আপাতদৃষ্টিতে ওপার বাংলার মিষ্টি পরিবারের ইনি প্রবীণ সদস্য। বলছি মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীরের কথা। যা অনবদ্য স্বাদের গুনে আজও জনপ্রিয়। কিন্তু এর পিছনেও আছে এক ইতিহাস।
আদি বিক্রমপুর অর্থাৎ বর্তমান মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের সন্তোষপাড়া গ্রামের সাতটি পরিবার এখনও পাতক্ষীর তৈরির কাজে জড়িত। তবে এর সূচনা হয়েছিল পুলিন বিহারী দেবের হাত ধরে। তিনি সর্বপ্রথম বাড়িতে পাতক্ষীর তৈরি শুরু করে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করতে থাকেন। তার দেখাদেখি ওই একই সময় ইন্দ্রমোহন ঘোষ এবং লক্ষ্মীরানী ঘোষও তৈরি করতে শুরু করেন পাতক্ষীর। এখন তাদের বংশধররাই বানাচ্ছেন এই ক্ষীর। তাদের উত্তরসূরি কার্তিক চন্দ্র ঘোষ, ভারতী ঘোষ, সুনীলচন্দ্র ঘোষ, রমেশ ঘোষ, বিনয়ঘোষ, মধুসূদন ঘোষ, সমীর ঘোষ ও ধনা ঘোষ এই পেশায় রয়েছেন।
এই মিষ্টি বানানোর এক বিশেষ পদ্ধতি আছে। একটি পাতক্ষীর বানাতে প্রায় তিন লিটার দুধের প্রয়োজন হয়। কড়াইয়ে দুধ ঢেলে গনগনে আঁচে বিশেষ কাঠের লাঠি দিয়ে জ্বাল দিয়ে দুধ ঘন হয়ে এলে সামান্য পরিমাণে হলুদ ও চিনি মিশিয়ে নামানো হয়। নামানোর পর মাটির পাত্রে রেখে ঠাণ্ডা করা হয়। ঘণ্টাখানেক পর ঠাণ্ডা হলে তা কলাপাতায় জড়িয়ে বানানো হয় পাতক্ষীর। বানানোর পরে ক্ষীর কলাপাতায় জড়িয়ে থাকে বলেই এটির নামকরণ করা হয়েছে "পাতক্ষীর"।
প্রতিটি পাতক্ষীরের ওজন প্রায় আধা কেজি। দাম ২৫০ টাকা। দুধের দাম বেড়ে গেলে বেড়ে যায় পাতক্ষীরের দামও। দুটো মিলে হয় এক কেজি। তবে এক কেজি আবার ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদে দুধের দাম বৃদ্ধি ও চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রি হয় ৫০০ টাকা কেজি দরে। বিশেষ উৎসব ছাড়া সারা বছর এর চাহিদা থাকে।
কিন্তু এই পাতক্ষীর পারিবারিক ঐতিহ্য ও ব্যবসা হলেও মজার ঘটনা হল, এই পরিবারের মেয়েদের এই মিষ্টি বানানোর রীতি শেখানো হয় না। এই পদ্ধতি রপ্ত করে তাদের পরিবারের পুত্রবধূরা। কারণ হিসেবে বলা যায় মেয়েরা বিয়ের পর অন্যত্র চলে যায়, যাতে তাদের এই মিষ্টির পদ্ধতি বিয়ের পর হস্তান্তর না হয় তাই এই ব্যবস্থা।
যাইহোক, এর স্বাদ পেতে গেলে হয় ঢুঁ মারতে হবে সিরাজদিখান বাজারের রাজলক্ষ্মী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে বা এই ঘোষ পরিবারের ভাঁড়ারে না হলে ভরসা অনলাইন। তবে শীত এসেছে এই সময় ডায়েট ভুলে নতুনত্বের স্বাদ নিতে চলতেই পারে পাতক্ষীর আস্বাদন।