চূড়ামণ জমিদারবাড়ির পুজোয় ৩০০ বছর ধরে কলা-বৌ থাকে কার্তিকের পাশে

উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের ভোপালপুরের দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল ১৩৩৫ বঙ্গাব্দে। ওই পরিবারের কন্যা দুর্গাময়ী রায়চৌধুরী তৈরী করিয়েছিলেন একটি দুর্গামন্দির। সেখানেই পুজো শুরু হয়েছিল তাঁর উদ্যোগে।

এই জমিদারবাড়ির একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এটি উত্তরদিনাজপুরের রায়গঞ্জ ব্লকের ভোপালপুরে অবস্থিত। তার আগে এই জমিদারবাড়িটি ইটাহার ব্লকের চূড়ামণে অবস্থিত ছিল। সেখানে প্রায় ৩০০ বছর ধরে দুর্গাপুজো হয়ে আসার ইতিহাস রয়েছে। জমিদারি পাওয়ার পর ওই পরিবারের পূর্বপুরুষ জগৎবল্লভ কুন্ডু চূড়ামণ গ্রামে এসেছিলেন। সেখানে বসতি গড়ে তোলেন।  তৈরী করেন চূড়ামণ জমিদারবাড়ি। পরিবারের সকলকে নিয়ে আসেন সেখানে। তাঁদের বসবাসের জন্যে জমি, বাগান দান করেন। 

এই পরিবারের আদি পুরুষ ঘনশ্যাম কুন্ডু মালদা জেলার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর পুত্র জগৎবল্লভ কুন্ডু বাংলার তৎকালীন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। তিনি কর্মদক্ষতায় নবাবের মন জয় করেছিলেন। নবাব তাঁকে খান ও চৌধুরী উপাধি দান করেছিলেন। নবাব তাঁর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে তিনটি পরগণার জমিদারির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। চূড়ামণের জমিদারবাড়িতে তিনি দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। তাঁর বংশধরেরা রায় চৌধুরী উপাধি পেয়েছিলেন।   

পরে বিধ্বংসী বন্যায় চূড়ামণ রাজবাড়ী ভেঙে পড়ে। দুর্গাময়ী রায় চৌধুরী তাঁর নাবালক পুত্র ভোপালচন্দ্র রায় চৌধুরীকে নিয়ে ভোপালপুর এসে একটি জমিদারবাড়ি গড়ে তোলেন। ১৩১০ বঙ্গাব্দে এটির নির্মাণ কাজ শুরু করে সেখানে বসবাস করতে থাকেন তাঁরা। পরে দুর্গামন্দিরটি তৈরী করা হয়। সেখানে শুরু হয় দুর্গাপুজো

ভোপালচন্দ্রের মৃত্যুর পর তাঁর দুই পুত্রের মধ্যে এই জমিদারি ভাগাভাগি হয়ে যায়। পুজো তাই দুই পরিবারের মধ্যে ভাগ করে হয়। মহালয়ার দিন থেকে পুজো শুরু হয়ে যেত আগে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এই পুজোর অন্যরকম মূল্য আছে। এই পুজোয় বিশেষভাবে যাত্রা, থিয়েটারের আসর বসত। এখন তেমনভাবে জৌলুস না থাকলেও যতটা সম্ভব আচার মেনে পুজো করা হয়।

এই জমিদাররাড়ির পুজোয় কলা-বৌ এর স্থান আলাদা। গণেশের পাশে নয়। কার্তিকের পাশে। দুর্গা প্রতিমার থেকে কিছুটা দূরে। নবমীর দিন এখানে রচনা পুজো হয়। লাড্ডু, বাতাসা ভোগ দেওয়া হয়। এই পুজোর ভোগ পিলারের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়। একটি খেলায় জিতে এই ভোগ অর্জন করতে হয়। পুজোয় মেলা বসে।

ঠাকুরের বিসর্জন হয় দশমীর দিন। জমিদারি আমলে পুজোয় বলি প্রথা চালু ছিল। তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বলি প্রথা উঠে গেছে। পুজোয় মিষ্টি ভোগ দেওয়া হয়। এভাবেই পুজো হয়ে আসছে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...