রাজ্য সরকার কলকাতায় আবার সাইকেল ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ) সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই উদ্দেশ্যে শহরের রাস্তায় আলাদাভাবে একটি সাইকেল জোন তথা সাইকেল চালানোর জন্য পথ তৈরী করা হবে। এই কাজ করার জন্য একটি কনসালটেন্সি ফার্ম-কে নিযুক্ত করা হবে, যারা এ ব্যাপারে উপযুক্ত পরিকল্পনা করে কাজ সম্পন্ন করবেন।
ডিটেইল্ড প্রজেক্ট রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরী করে ওই কনসাল্টিং এজেন্সি পাবলিক বাইসাইকেল স্কিমের একটি পাইলট প্রজেক্ট তৈরী করবে। পাইলট প্রজেক্টে বেশ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কয়েকটি সাইকেল স্টেশন গড়ে তোলার সেট আপ রাখতে হবে, পাশাপাশি শহরের বাইরেও কিছু এইরকম স্টেশন গড়ে তোলা হবে এবং শহরের ভেতরের ও বাইরের স্টেশনগুলি যাতে যুক্ত থাকে তার নকশাও রাখতে হবে। টেন্ডার ডকুমেন্টে বলা থাকবে, তিনমাসের মধ্যে যাতে উক্ত বৃহৎ প্রকল্পটির পাইলট প্রজেক্ট জমা দিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রকল্পটিতে বলা থাকবে, শহরের কোন কোন জায়গায় বাইসাইকেল জোন বা ট্র্যাক তৈরী হবে, শহরের কোন কোন জায়গায় বাইসাইকেল পার্কিং ফেসিলিটি গঠন করা হবে, কোন কোন রাস্তা শহরে সাইকেল চালানোর জন্য উপযুক্ত, গোটা পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে কিভাবে সাইকেল যুক্ত করা যাবে এবং সাইকেল বান্ধব পরিবেশ কিভাবে গড়ে তোলা হবে।
নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, সরকার গ্রীন মোড ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম হিসেবে অর্থাৎ দূষণমুক্ত যানবাহন হিসেবে সাইকেল আনতে চাইছে। নিউ টাউনে ইতিমধ্যেই হিডকোর তত্ত্বাবধানে সাইক্লিং স্কিমের সূচনা করা হয়েছিল। যদিও এই মুহূর্তে সেটি স্কিমটি বন্ধ রয়েছে, তবে স্থায়ী পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তুলে আবার সাইকেল চালানোর ব্যবস্থা করবে হিডকো খুব শীঘ্রই বলে জানা গেছে সংস্থার তরফে। কিছুদিন আগে রাজ্য সরকারের তরফে বাস ৱ্যাপিড ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম-এর পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যেখানে ইএম বাইপাস থেকে গড়িয়া অব্দি একটি সাইকেল ট্র্যাক রাখার কথা হয়েছিল। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এই গ্রিন সিটি-র মিশন কার্যকরী হলে যে সাইকেল ট্র্যাকের ভাবনা বাস্তবায়িত হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমস্টার্ডামে মোট ৮৮,০০০ জন মানুষের বাইসাইকেল রয়েছে। শহরের মোট যানবাহনের ৬৮% সাইকেল রাস্তায় চলাচল করে। কোপেনহেগেনে ৫,৬০,০০০ বাইসাইকেল ব্যবহৃত হয়। শহরে মোট ৪৮,০০০ বাইসাইকেল স্ট্যান্ড রয়েছে। বার্সেলোনায় ৬,০০০ মেকানিক্যাল এবং ৩০০ ইলেকট্রিক বাইক চলে সাধারণ পরিবহন হিসেবে। মন্ট্রিলে ৬,২০০ জন বাইসাইকেল আরোহী রাস্তায় নিজেদের সাইকেল চালান এবং শহরে ৫৪০টি সাইকেল স্টেশন রয়েছে। বিশ্বের উন্নয়নে তথা পরিবেশ রক্ষার্থে সাইকেল যানবাহন হিসেবে ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা। কলকাতাতেও যদি সাইকেল চালু হয়ে যায়, তা যে পরিবেশের জন্য যথেষ্ট সহায়ক হবে বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদ তথা বিশিষ্টমহল।