শীত গিয়ে সবে হয়েছে বসন্তের আবির্ভাব| সন্ধ্যে নামার মুখে ব্যালকনিতে চায়ের কাপ হাতে বসে রয়েছেন আপনি| আপনাকে ছুঁয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে ঝিরঝিরে দক্ষিনে হাওয়া| হঠাৎ কানে ভেসে এলো ঘুঙুরের শব্দ|
কলকাতার বুকে সন্ধ্যে নামা মানেই প্রতি গলির মুখে, মোড়ের মাথায় খুঁজে পাওয়া যায় নানা খাবারের পসরা| ফুচকা, আলুর চপ তো রয়েছেই| তার সাথে এমন অনেক জিনিসও রয়েছে যা কলকাতা ছাড়া বিশেষ কোথাও পাওয়া যায় না|
কি ভাবছেন? কি বলছি আমি? একবার ঘুঙুরের কথা, একবার খাবারের কথা| আসল কথাটা তাহলে খুলেই বলি| কলকাতার অলিতে-গলিতে সন্ধ্যে নামার সাথে সাথে ঘুঙুরের ছন্দে তাল মিলিয়ে যে ফেরিওয়ালারা হাজির হয় তারা হলো ঘটি গরমওয়ালারা| এই ঘটি গরমের মূল উপকরণ হল, মোটা ঝুরিভাজা ও তার সাথে মেশানো থাকে নানান উপাদান| সেই মিশ্রিত উপাদানগুলির মধ্যে থাকে পেঁয়াজ কুঁচি, আমড়া কুঁচি, চানাচুর, বাদাম প্রভৃতি| এর সাথেই থাকে আম-আদা, যার থেকে দুটি জিনিসের স্বাদ একসাথে পাওয়া যায়| তা হলো যথাক্রমে কাঁচা আম ও আদা| সমস্ত সামগ্রী একত্রিত করে সর্ষের তেল দিয়ে মেখে মশলা ছড়িয়ে দিলেই তৈরী হয়ে যায় এই ঘটি গরম|
এই খাবারটির নাম ঘটি গরম হল কি করে? এটাই ভাবছেন? আগেকার দিনে নানা মুখরোচক খাবার তৈরী করার জন্য নানা উপায় অবলম্বন করা হত| সেরকমই চানাচুর এমনিতে মুখরোচক হলেও সেটিকে আরও মুখরোচক বানানোর জন্য ঘটির মধ্যে কয়লা পুড়িয়ে সেখান দিয়ে আগুন প্রস্তুত করা হত| এবং সেই ঘটির চারপাশে রাখা থাকত চানাচুর| সেই থেকেই এই খাবারটির নাম হয়েছে ঘটি গরম| দিনের পর দিন মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই খাবারটি একসময়ে বন্ধ হয়ে যায়|
পূর্ববর্তী ঘটি গরম শুধু তার নামের মাধ্যমে বেঁচে থাকলেও এখনকার ঘটি গরমের সাথে কোনো মিল নেই আগেকার ঘটি গরমের| তবু আজও সন্ধ্যে হলে বারান্দায় বসা ছোট্ট ছেলেটার কান এই ঘুঙুরের শব্দ শোনার জন্যই মুখিয়ে থাকে| কারণ আজও শহরের অলিতে গলিতে বড্ড জনপ্রিয় এই ঘটি গরম|