শোভাবাজার, শ্যামবাজার, গিরিশপার্ক, হাতিবাগান- এই নিঃশ্বাসে চলে আসে চারটে নাম। খেতে যারা ভালোবাসেন তাঁদের কাছে উত্তর কলকাতা অমরবতী। সারা পৃথিবীর বিশ্বখ্যাত ফুড জাংশনের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে উত্তর কলকাতার এই চার অঞ্চল। চা থেকে চমচম সব বিখ্যাত। আর তার সঙ্গে অবধারিতভাবে চপ, কাটলেট, কবিরাজী, ফিশ ফ্রাই। উত্তরের অলিগলি বিখ্যাত পুরনো কলকাতার টানে, সেই সঙ্গে চপ-কাটলেটের গন্ধেও। বিকেল নামলেই তারা কথা বলে ওঠে স্বাদের গল্পে রঙিন হয়ে।
গিরিশ পার্ক মেট্রোর ঠিক গাঁ ঘেঁষে। স্টেশন থেকে বেরিয়ে রাস্তা পার হতেও হয় না, মেট্রো গেটের দোর ডিঙ্গালেই চিত্তরঞ্জন এভিনিউয়ের ওপর নিরঞ্জন আগার।
সূয্যি পাটে গেলেই এক চিলতে দোকান ঘিরে ভিড় জমায় পেটুক জনতা। সবাই জানে সময়মতো না পৌঁছতে পারলেই সব শেষ!
১০০ বছর ধরে চলছে এই অভ্যাস। কোনও কিছুতেই বদলে নেই। এক চিলতে এক দোকান। কাঠের ‘বেঞ্চি-টেবিল’। মুখ ঘোরালেই দেখতে পাওয়া যায় হেঁশেলখানা।
প্রায়ই আসতেন উত্তমকুমার। সঙ্গী তরুণকুমার। ঘুরে যেতেন উৎপল দত্ত, মান্না দে, বিকাশ রায় আরও অনেক মুখ। এখন মুখ বদলেছে কিন্তু স্বাদ বদল ঘটেনি।
১৯২২ সালে শুরু হয়েছিল নিরঞ্জন আগার। নিরঞ্জন হাজরার কেবিন। আড্ডা জমত ঠিক এভাবেই। আজকের মতোই। ১০০ বছর পার করে ফেললেও বদল আসেনি দোকানের চরিত্র। একখন্ড হারানো কলকাতা যেন থমকে আছে গিরিশ পার্ক মেট্রোর পাশে। আজকের ক্যাফে বা রেস্তঁরা কালচারের সঙ্গে যার কোনও তুলনাই করা চলে না।
সবচেয়ে বিখ্যাত হাঁসের ডিমের ডেভিল। হলুদ রঙের কুসুম থেকে উঁকি দেয় মটন কিমার পুর। মটন চপ, চিকেন ব্রেস্ট কাটলেট, মাটন কাটলেট, মাটন চপ,লিভার কারি আরও অনেক নাম আছে মেনুর লিস্টে। তবে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ডিমের ডেভিল, লিভার কারি।আর চিকেন স্টিউ।
আজকের অনলাইন ফুড সার্ভিসের রমরমা দিনেও এই সুখ্যাদ্যের স্বাদ পেতে চাইলে হাঁটতেই হয় ফুটপাতে। এসির আরাম মেলে না, তবু কাঠের চেয়ার টেবিলে বসে একশো বছরের ইতিহাস ছুঁয়ে রাজকীয় কাটলেটে কামড় বসাতে মন্দ লাগে না আজও বহু বাঙালির। অনলাইনের অভ্যাস, বদলে যাওয়া জীবন ধারা আর সময়ের ধাক্কা যতই লাগুক, তবু বদল নেই এ অভ্যাসেও...