'ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা'- দেশাত্মবোধক এই গানটিই যথেষ্ট আমাদের বসুন্ধরার শোভার কথা বোঝানোর জন্য। আর সেই শোভা আরও মনোরম করে মাঝে মাঝে আকাশের বুক চিরে উড়ে বেড়ায় নানা প্রকারের পাখি। সাথে রয়েছে নানান প্রজাতির পশুও। এই সব মিলিয়েই পরিপূর্ণ আমাদের ধরা। কিন্তু কালের অমোঘ নিয়মে এক এক সময়ে এই ধরাধামের বুক থেকে হারিয়ে যায় এক এক প্রজাতির প্রাণী। যেমন, কোনো এক সময়ে পৃথিবী কাঁপানো ডাইনোসর, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে রূপকথা মনে হয়। সেরকমই ভারত মহাসাগরের বুকে অধিষ্ঠান করত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাল দ্বীপ, আলডাবরা। আর এই দ্বীপেই বসবাস ছিল এক ভিন্ন প্রজাতির পাখির। নাম ছিল তার 'হোয়াইট থ্রোটেড রেল'। প্রায় এক লক্ষ ৩৬ হাজার বছর আগে তা অবলুপ্ত হয়ে গেছিলো পৃথিবীর বুক থেকে।
কিভাবে অবলুপ্ত হয়েছিল এই পাখি? এই পাখির অবলুপ্ত হওয়ার পিছনে যে কারণ ছিল তা হলো আজ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৩৬ হাজার বছর আগে সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে গিয়েছিল স্বপ্নের দ্বীপ আলডাবরা। বাসস্থান খুইয়ে তারাও হারিয়ে গেছিলো পৃথিবীর বুক থেকে। কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দাবি জানিয়েছেন, আবারও খোঁজ মিলেছে লক্ষ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সেই পাখির। তবে এটাই এই প্রজাতির প্রথম ফিরে আসা নয়। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কয়েক হাজার বছর পরেও তারা একবার ফিরে এসেছিলো। কিভাবে? সেই সময় সমুদ্রের জলতল হঠাৎ কমে যাওয়ায় এই প্রজাতির পাখির বাসস্থান এই দ্বীপ আবারও জলের তলা থেকে জেগে ওঠে। বাসস্থান ফিরে পেয়ে এই পাখি সেখানেই আবার তাদের সংসার পাতা শুরু করে। এই ঘটনার আগের ও পরের জীবাশ্ম থেকে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে বিলুপ্তির পরেও ফিরে এসেছিলো এই পক্ষীকুল।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই ঘটনাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'ইটেরেটিভ ইভোলিউশন' অর্থাৎ কোনো প্রাণীর উত্তরসূরির হাত ধরে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরেও আবার ফিরে আসে কোনো কোনো প্রজাতি। তবে বিজ্ঞানীদের দাবি, 'রেল' বা মাটির কাছাকাছি বসবাসকারী পাখিদের মধ্যে এই ঘটনাটি প্রথমবারের জন্য ঘটেছে। বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকা 'লিনিয়ান সোসাইটি'তে এই ঘটনাটি প্রকাশিত হওয়ার পরেই চাঞ্চল্য ছড়ায় পক্ষীপ্রেমীদের মধ্যে। সম্প্রতি বিজ্ঞানমহলে সাড়া ফেলেছে এক বিশেষ পাখি। আকার আয়তনে যাকে দেখতে সম্পূর্ণ হোয়াইট থ্রোটেড রেলের মতোই। তাই দ্বিতীয় বার ফিরে এলো কি সেই হারিয়ে যাওয়া পাখি? আশায় বুক বাঁধছেন পক্ষী বিশেষজ্ঞরা।