ভারতে প্রথম রেলপথ স্থাপন হয় মহারাষ্ট্রের বোরি বন্দর থেকে থানে। ১৮৫৩-র ১৬ এপ্রিল। ইংরেজদের তৈরি গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেলওয়ে কোম্পানি।
হাওড়া স্টেশন থেকে বাংলায় প্রথম যাত্রীবাহী রেল গাড়িটি চালায় ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি। ১৮৫৪ সালের ২৮ জুন। তবে তা ছিল পরীক্ষামূলক। ওই বছরেই ১৫ আগস্ট প্রথম যাত্রীবাহী রেল চালু হয়। গন্তব্য হুগলী।
কামরায় কয়েকশো লোকের সিট। তবে যাত্রী হিসেবে টিকিটের জন্য আবেদন পড়েছিল তিনহাজার। ভাড়া প্রথম শ্রেণির তিন টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণির ১ টাকা এবং তৃতীয় শ্রেণির ৭ আনা।
এই যাত্রা দিয়েই ভারতীয় যান চলাচল ক্ষেত্রে বিপ্লব এল।
কীভাবে চলে রেলগাড়ি দেখার জন্য রেললাইনের দুই ধারে জমা হয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। দেখার উদ্দীপনাও যাত্রীদের থেকে কিছু কম ছিল না।
ভারতে যানবাহনের ইতিহাস এভাবে বদলে দেওয়ার জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয় ইংরেজ রাজ শাসনকে।
কিন্তু এই ইতিহাস অন্যরকম হতেও পারত। ভারতে রেলপথের সূচনা হতে পারত এক বাঙালির হাত ধরে।
সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও তাঁকে হার মানতে হয় ইংরেজদের পক্ষপাতের কাছে।
তিনি আধুনিক যুগের প্রথম বাঙালি শিল্পোদ্যগী প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর।
১৮৪২ সালে ইংল্যান্ডে থাকাকালীন এই অভিনব যানটিতে পরিবহন করার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। সেই সময়ে এদেশে কৃষি পণ্য ও খনিজ পরিবহনের জন্য রেলের ভাবনা তাঁর মাথায় আসে।
কলকাতায় ফিরে রেল কোম্পানী শুরু করেন। হাওড়া থেকে রেলগাড়ি চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। নাম দিলেন গ্রেট ওয়েস্টার্ন বেঙ্গল রেল কোম্পানী। কোম্পানীর ঠিকানা লন্ডন। কলকাতা ইংল্যান্ডবাসী ধনী ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয় পরিচালক মণ্ডলী। রামরতন রায়, নরসিংহচন্দ্র রায়, ব্রিজনাথ ধর এবং ভারতীয় পার্সি ব্যবসায়ী রুস্তমজি কাওয়াসজি।
প্রথমে বর্ধমান থেকে তারপ্র রানীগঞ্জ ও রাজমহলের কয়লাখনি এলাকা অবদি নিয়ে যেতে বেশি বেশি আগ্রহী ছিলেন। এই নির্মাণের জন্য তিনি মোট খরচের এক তৃতীয়াংশ ব্যয় করতেও রাজী ছিলেন।
১৮৪৫ সালে দ্বারকানাথ দ্বিতীয়বার ইংল্যান্ড যান ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে রেলপথ স্থাপনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে। কিন্তু এই প্রস্তাবের বিরোধীতা করা হয় তীব্রভাবে।
বিরোধীতা এসেছিল রবার্ট স্টিফেনসনের কাছ থেকে। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এই মানুষটি ইংল্যন্ডে বিখ্যাত ছিলেন সেতু নির্মাতা হিসেবে। যাঁর অন্য পরিচয় স্টিম ইঞ্জিন এর আবিষ্কারক জর্জ স্টিফেনসনের পুত্র।
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তাদের ওপর তাঁর প্রভাবে কারণে নাকচ হয়ে যায় দ্বারকানাথের প্রস্তাব।
ওই বছরেই ১ আগস্ট মৃত্যু হয় দ্বারকানাথের।
দ্বারকানাথের মৃত্যুর পর তাঁর গ্রেট ওয়েস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানী মিশে যায় স্টিফেনশনের কোম্পানির সঙ্গে।
তথ্যসূত্রঃ ( বিজনেস লাইন, সাবেক কলকাতার ইতিকথাঃ জলধর মল্লিক)