মনের অদম্য ইচ্ছের কাছে সব কিছুই হার মানে। বয়স বাধা হয়ে দাঁড়ায় না কোনো কাজেই। তাই ছোটবেলায় পড়াশোনা না হলে কি হবে, যখন নিজের পেশার কাজে নিজেকে উন্নীত করার প্রয়োজন হয়েছে, তখন নিজেকে সেই মতো তৈরী করে নিয়েছেন সুন্দরবনের সুকুমার। ন্যাজাট বাজারে তাঁর দোকান থেকে প্রতিদিন চীন, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরে কাঁকড়া রপ্তানি হয়। টালি ও টিনের ছাউনি দেওয়া তাঁর দোকানে এখন ১২-১৪ জন কর্মী। সুন্দরবনে প্রচুর মানুষ কাঁকড়া ধরেন। সেই কাঁকড়া সকলেই প্রতিদিন সকালে নৌকায় করে তার দোকানে দিয়ে যায় এবং সেখান থেকেই কাঁকড়া পাড়ি দেয় দেশে ও বিদেশে। প্রথমে সাইজ অনুযায়ী কাঁকড়া বাছাই হয়। বিদেশে ফ্রেশ ও ভালো কাঁকড়া পাঠাতে হয়। যে কাঁকড়ার ঘিলু ও শাঁস থাকেনা, সেগুলো কিছুদিনের জন্য একটি আলাদা পুকুরে ছেড়ে রাখা হয়। দীঘা থেকে বিভিন্ন ছোট মাছ এনে সেই অপরিণত কাঁকড়াগুলিকে খাওয়ানো হয়। এভাবে প্রায় ১৫ দিনেই সেগুলির শাঁস ও ঘিলু হয়ে যায়।
সুকুমারের কাছ থেকে জানা গেল, ১০০ গ্রাম থেকে ১ কিলো গ্রাম অব্দি কাঁকড়া রপ্তানি হয়। বড় কাঁকড়ারই চাহিদা বেশি। ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কিলো ওজনের কাঁকড়াকে 'ডাবল এক্সএল' বলা হয়। ৪০০-৪৯৮ গ্রাম ওজনের কাঁকড়ার নাম 'এক্সএল', ৩০০-৩৯৮ গ্রামের ওজনের কাঁকড়াকে বলা হয় 'এল', ২০০-২৯৮ গ্রামের ওজনের কাঁকড়াকে 'এম', ১৫০-২০০ গ্রামের কাঁকড়াকে বলা হয় 'এসএম', এবং ১০০-১৫০ গ্রাম ওজনের কাঁকড়াকে বলা 'এসএসএম'। বাছাইপর্ব শেষ হলে তা কলকাতায় পাঠানো হয় দুপুর নাগাদ। সেখান থেকে রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের হাত ধরে তা সন্ধ্যের বিমানে বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি হয়। চীন সহ বিদেশে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ কেজি কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়। গড়ে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক টাকার কেনা বেচা হয়। প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা জানা এবং বংশের প্রথম প্রজন্ম হিসেবে স্কুলের পথ নেওয়া সুকুমার এখন বাংলা ও ইংরিজিতে একেবারে সড়গড়। প্রতিদিনকার ডলারের হিসেবে করেন ক্যালকুলেটর ছাড়াই। তবে একজন খাঁটি মানুষের মতো এই উত্থানের জন্য তার কোনো অহংকার নেই। মাটির মানুষ মাটির সঙ্গেই মিশে এগিয়ে যেতে চান উন্নতির শিখরে।