বলেছিলেন, টম সোয়ের আর হাকেলবেরি ফিন এর রূপকার। মার্ক টোয়েন। তাঁর বাণীর শিরোচ্ছেদন এই লেখার উদ্যেশ্য নয়। ইংরাজী বছরের এমন একটা দিন, যখন এক মুহূর্তের জন্য হলেও বোকা হতে ভালোবাসেন পৃথিবীবাসী। এ এক সার্বজনীন বোকা বানানোর উৎসব। প্রশ্ন ওঠে? একটাদিন। তারপর সেই পরশ ধরেই এগিয়ে চলে স্মৃতির বস্তা বোঝাই গাড়ি।
পয়লা এপ্রিল। বছরের ৯২ তম দিন। পথ চলা তখনও অনেক বাকি। ১৫৬২। পোপ গ্রেগরি খ্রিস্টানদের জন্য আনলেন নতুন ক্যালেন্ডার। এর আগে পর্যন্ত নতুন বছর পালিত হতো এপ্রিল ১ এ। এই পরিবর্তনের খবর গোটা পৃথিবীর জানতে লেগে গিয়েছিল বিস্তর সময়। মানুষ তখনও এপ্রিল ১ কে কেন্দ্র করেই পাঠিয়ে চলেছে শুভেচ্ছা বার্তা। আর সেগুলোই জমা হয়েছে মজার দিনের গল্প হিসাবে।
এই ছিল গল্প এক। গল্প, কারণ ইতিহাস আজও এই ঘটনার কোনও জ্যান্ত দলিল প্রকাশ করে উঠতে পারেনি। এবারে গল্প দুই - রোমান মৃত্যুর দেবতা প্লুটো “স্ত্রী” পারসিফন-কে অপহরণ করে আনলেন। এবারে পারসিফনের মা দেবী সেরিস মেয়েকে অনেক খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাননা। মেয়ের ঠিকানা তখন পাতালপুরী। সেরিস দেবী হলেও পেরে ওঠেননি মেয়েকে খুঁজতে। এক মায়ের বোকামি স্মরণ করে ১ এপ্রিল পালন করা হয় বলে অনেকে মনে করেন।
ব্রিটিশ লোককথা। ব্রিটেনের নটিংহ্যামশায়ারের ‘গথাম’ শহর, বোকাদের শহর। তেরো শতকের দিকে নিয়ম ছিল, ব্রিটেনের রাজা যেখানে যেখানে পা রাখবেন তা রাষ্ট্রের সম্পত্তি। গথামবাসীরা শুনলেন রাজা আসছেন শহরে। ঠিক হলো বন্ধ হবে রাজ যাত্রা। তাঁরা কিছুতেই গথামকে হারাবে না। রাজার কানে খবর গেলো। সৈন্য পাঠালেন।
সৈন্যরা এসে দেখেন প্রবেশদ্বার থেকেই সারা শহরে হুলস্থূল কাণ্ড। সব বাসিন্দা বোকার মতো ন কাজ করে চলেছেন। রাজা বললেন, এমন বোকাদের শাস্তি দেওয়া যায় না। তাই মাফ করে দিলেন। গথাম থেকে গেলো চিরতরে মুক্ত। এই “ট্রিক” স্মরণেই এপ্রিল ফুল। ১৫৩০ সালের ১ এপ্রিল। জার্মানির অগসবারগ শহরে একটা আইনি মিটিং হওয়ার কথা। এই মিটিং নিয়ে তোরজোড় চলছিল জোরকদমে। কিন্তু মিটিং এর দিন তারা জানতে পারলেন খবরটা ভুয়ো।
মিটিং এর ফলাফল নিয়ে সাধারণ মানুষের মাথায় ছিল এক আকাশ চিন্তা। যতই হোক আগামী দিনের আইনি স্বাধীনতা কতটা সাধারণ মানুষের ঝুলিতে, এই নিয়েই ছিল আলোচনা? কিন্তু আমলারা কই? কিছু অত্যন্ত চালাকরা আগে থাকতে এই মিটিং এর ফলাফল জানতে চেয়ে অনেক টাকা এক বাজিকরের কাছে পারিশ্রমিক হিসেবে দিয়ে বসে। পাওয়া গেলো না তাঁকেও। অর্থাৎ টাকা গচ্চা গেলো। এই ঘটনাও হতে পারে এপ্রিল ফুলের উৎস লিখনী।
১৫৭২ সালের ১ এপ্রিল। হল্যান্ডের ডেন ব্রিয়েল শহরটাকে লর্ড আল্ভার স্প্যানিশ শাসন থেকে মুক্ত করে ডাচ বিদ্রোহীরা। এইদিন তারা লর্ড আল্ভাকে পুরো বোকা বানিয়ে ছাড়ে। তাঁকে স্মরণ করেও এপ্রিল ফুল পালিত হতে পারে। মূলত এই ঘটনার পর অনেক জায়গায় বিদ্রোহ সোচ্চার হয় আর স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা আদায় করে হল্যান্ড।
বড়ো বড়ো দেশে এরকম ছোট ছোট ঘটনা ঘটেই থাকে। জানি তো? এরকম ছোট ছোট ঘটনাই আজ একত্র হয়েছে। রিইউনিয়ন। অনেকাংশ সহমত হবেন কি না জানিনা, এরকম বোকা বনে যাওয়ার ঘটনা গুলোই দু কলি হাসিয়ে তোলে কখনও, মনের অজান্তেই।
তবে বর্তমানে এই দিবস পালনের যৌক্তিকতা কি আদৌ আছে? প্রশ্ন যুক্তিবাদীদের। মানুষকে মিথ্যা বলে ঠকানো বা বোকা বানিয়ে মজা পাওয়া মানেই বোকামি। মিথ্যা বলা কোনও সভ্য সমাজ মেনে নেয়না। তাই মিথ্যা বলে মানুষকে বোকা বানানো কোনও উৎসবের নামান্তর হতে পারেনা। পরিশেষে খেয়াল রাখতে হবে এত্ত রোম্যান্টিসিজম অন্য কারও আবেগে আঘাত না করে বসে। যাঁরা অধীর আগ্রহে থাকেন কীভাবে এই দিনে কাছের জনকে বোকা বানাবেন, তাঁদের জন্যে এই শেষটুকু।