রক্তদান করার আগে ও পরে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন?

রক্তদান করবেন? রক্তদান করার আগে ও পরে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন? ‘বিশ্ব রক্তদাতা দিবস’র (World Blood Donor Day) বিশেষ পর্বে বিস্তারিত জানালেন ডাঃ ঋতম চক্রবর্তী, এমডি ট্রান্সফিউশন মেডিসিন (Dr. Ritam Chakrabarty, MD Transfusion Medicine)

ডাঃ ঋতম চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন এখানকার চিকিৎসাক্ষেত্রে নবীন সংযোজন। ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের বেশ কিছু ভাগ আছে। তার মধ্যে অন্যতম ইমিউটোহেমাটোলজি। রক্ত দেওয়ার যে সমস্যা হতে পারে রোগীর মধ্যে সেটা জানতে গেলে বিশেষ কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন। ল্যাবে বসে সেই পরীক্ষা করেন ট্রান্সফিউশন মেডিসিন স্পেশালিস্ট।

বহু রোগী আছে যাদের বারবার রক্ত দিতে হয়, তাদের বিশেষ কিছু পরীক্ষা ও মেথডের মাধ্যমে রক্ত দিতে হয়, সেটা সেখানে হয়।

দ্বিতীয়ত, ট্র্যান্সপ্লান্ট ইমিউনোলজি। হার্ট, বোন ম্যারো, কিডনি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে এইচএল-এর ক্রস ম্যাচ, টাইপিং-এগুলো   ট্র্যান্সপ্লান্ট ইমিউনোলজি ল্যাবে দেখা হয়, যা  ট্রান্সফিউশন মেডিসিনের মধ্যে পড়ে।

তৃতীয়ত, ক্লিনিক্যাল ট্রান্সফিউশন মেডিসিন। কারও রক্তের প্রয়োজন আছে কিনা, কতটা রক্ত দিতে হবে, রক্তের কোন উপাদান দিতে হবে সেটা ট্রান্সফিউশন মেডিসিন স্পেশালিস্ট রোগী দেখে স্থির করেন।

চতুর্থ, রিজেনারিটিভ মেডিসিন। প্লাজমা বা অ্যামানিওটিক মেমব্রন দিয়ে স্কিন থেরাপি, উন্ড থেরাপির মতো অনেক নতুন থেরাপি আসছে। ট্রান্সফিউশন মেডিসিন স্পেশালিস্টরা এসব বিষয়ে গবেষণা করেন।

তবে সবচেয়ে বেশি যা লোকে জানে তা রক্তদান সম্পর্কিত। রক্ত অনেকটা কাঁচামালের মতো। তাঁকে প্রসেস করা হয়। যাকে দেওয়া হচ্ছে তার সঙ্গে কোন ধরনের রক্ত খাপ খাবে সেটা দেখতে হবে। রক্ত দেওয়ার পর তার প্রসেস এবং গুণমান-এই বিষয়গুলি একজন ট্রান্সফিউশন মেডিসিন স্পেশালিস্ট ব্লাড ব্যাঙ্কে করে থাকেন।

দুটি প্রধান কারণে রক্তদান করা উচিত। 

প্রথমত, রক্তদানের কোনও বিকল্প নেই। গবেষণাগার বা ফ্যাক্টরিতে রক্ত উৎপাদন করা যায় না। তাই রক্ত দিতে হলে রক্তদাতাই ভরসা। শরীরে রক্ত একটা নির্দিষ্ট সময় পর নষ্ট হয়ে যায়। আবার নতুন রক্ত তৈরি হয়, এ এক নিরন্তর প্রক্রিয়া। রক্তদান করলে তা অন্যের কাজে লাগে। নিজেও ভাল থাকা যায়।

রক্তদানের ক্ষেত্রে রক্তদাতাকে উৎসাহ দেওয়া হয়। বিশেষ করে প্রথমবার রক্তদানের ক্ষেত্রে। অনেকেরই ধারণা থাকে রক্তদান করলে অসুস্থ বা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু তা একেবারেই ভ্রান্ত ধারণা। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দেখে প্রায় ৪-৫ লিটার রক্ত থাকে। তার ১০ শতাংশ দান করে। তাতে অসুস্থ হয়ে পড়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।  

অনেকের সূচে ভয় থাকে। একে নিডল ফোবিয়া বলে। রক্তদান না করার একটা বড় কারণ নিডল ফোবিয়া। প্রতি ব্লাড ব্যাঙ্কে একজন কাউন্সিলর থাকেন। তিনি কাউন্সিলিং করেন।

অনেকে মনে করেন রক্ত অন্যের শরীরে গেলে তার কোনও ক্ষতি হতে পারে। সেটাও ভুল ধারণা। রক্ত ও তার মান যাচাই করে নেওয়ার পর সেই রক্ত অন্যকে দেওয়া হয়।

২০২০ সালের মার্চে ভারত সরকার রক্তদানের নিয়ম একটি নির্দেশিকা জারি করে। ১০৪ টি নিয়ম ছিল সেখানে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, ১৮-৬০ বয়সী যে কোনও সুস্থ মানুষ রক্তদান করতে পারবে। নিয়মতি রক্তদাতারা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত। কমপক্ষে ৪৫ কেজি ওজন হতে হবে।  রক্তদাতার হিমোগ্লোবিন অন্তত ১২ গ্রাম শতাংশ হতে হবে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরাও বিধি মেনে রক্ত দিতে পারবে। যদি ইনসুলিন না নেয়, সুগারমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, ১ মসের মধ্যে ওষুধের কোনও তারতম্য ও বদল না ঘটে থাকে তবেই। উচ্চরক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম।

অ্যান্টিবায়োটিক খেলে ২ সপ্তাহ রক্ত দেওয়া যায় না। থাইরয়েডের হাইডোজের ওষুধ যারা খান তাদের সাধারণত রক্ত নেওয়া হয় না। ট্যাটু থাকলে ১ বছর অবধি রক্তদান করা যায় না।

ভরা পেটে রক্তদান করা উচিত নয়। ভরা পেটে রক্তদান করলে মাথাঘোরা, বমির সম্ভাবনা থাকে। হালকা খাবার খেয়ে সকাল-সকাল রক্ত দেওয়া উচিত। রক্তদান করলে সেদিন একটু বেশি মাত্রায় জল খেতে হবে।

একবার রক্তদান করার পর পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩ মাস মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪ মাসের ব্যবধানে আবার রক্ত দেওয়া যায়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...