সঠিক বয়সে সঠিক টিকা না নেওয়ার গাফিলতি কোন বিপদে ফেলতে পারে?

প্রাপ্ত বয়স্কদের কোন কোন টিকা অবশ্যই নেওয়া উচিত?  পোলিওর টিকা কি বড় বয়সেও নেওয়া যায়? সঠিক বয়সে সঠিক টিকা না নেওয়ার গাফিলতি কোন বিপদে ফেলতে পারে? প্রাপ্ত বয়স্কদের টিকাকরণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন পিয়ারলেস হসপিটালের ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর ডাঃ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক।

শিশুদের ক্ষেত্রে  রুটিন ভ্যাকসিনেশন চলতেই থাকে, কিন্তু বড়দের ক্ষেত্রে সেটা হয়না সেটার কারণ কী ? ডাঃ শুভ্রজিৎ ভৌমিক জানিয়েছেন, শিশুদের ক্ষেত্রে ভারত সরকার  ন্যাশনাল ইমিউনিজেশন প্রোগ্রাম তৈরী করেছে। অর্থাৎ শিশুর জন্মের পর থেকে যতক্ষণ তাদের ১০ বছর না হচ্ছে তাদের নিয়মিত ইনজেকশন এবং ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। দেখা গেছে ৫ বছরের নিচে শিশুদের এমন ইনফেকশন হয় যাতে প্রচুর শিশুর মৃত্যু হয়। যেমন নিউমোনিয়া,  ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস বি ইনফেকশন। এই ক্ষেত্রে একটা সিস্টেমটি সরকারি ভাবে তৈরী করা আছে যেটা বেসরকারি হাসপাতালেও রয়েছে এবং একটা রেগুলেশনের মধ্যে পড়ে গেছে যে স্কুলে এডমিশন নিতে গেলে দরকার বা বিদেশ যেতে গেলে দরকার। তার জন্যই প্রত্যেকটি শিশুর ভ্যাকসিনেশন করা হয়। কিন্তু বড়োদের জন্য কোনো নিয়মিত ভ্যাকসিনেশনের সরকারি নিয়ম বিধি নেই। খুবই কম ক্ষেত্রে রয়েছে যেমন ডায়াবেটিস। তবে, এটা কোনো বাধ্যতামূলক নয়।

করোনার সময় আমরা ভ্যাকসিন নিয়েছিলাম কারণ সেই ভ্যাকসিনটা নিলে প্রাণহানি হচ্ছে না। এছাড়াও দীর্ঘ দিন ধরে রয়েছে নিমোনিয়া ভ্যাকসিন, যারা খুব বেশি সিগারেট খায় বা যাদের ডায়াবেটিস আছে তাঁদের এতে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। আর এক হচ্ছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন। সর্দি, কাশী, জ্বর, গলা ব্যাথা, এইগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্যই প্রত্যেক বছর নেওয়ার নির্দেশ আছে। এছাড়া ডি টি ভ্যাকসিন রয়েছে, যারা গর্ববতী মা তাঁদের এটা নিলে শিশুরা যখন জন্মায় তারা সুরক্ষিত থাকবে।

বয়স্ক রোগীদের একটা ধারণা থাকে যে ভ্যাকসিন দিলে তাঁদের প্রচুর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে, সেটা একেবারে ভুল। আসলে না দিলে সেটা আরও ক্ষতিকর।

ডাঃ শুভ্রজ্যোতি ভৌমিকের মতে এই ভ্যাকসিনগুলো নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছোটবেলায় অনেকেরই চিকেন পক্স হয়েছে, তারপর সুস্থ হয়ে গেলেও, সেই জীবাণুটা বেরিয়ে যায় না। সেটা শিরদাঁড়ায় লুকিয়ে থাকে। বয়স বাড়লে সেই কোষটা কমতে থাকে। আরও বেশি কমে যাদের ডায়াবেটিস থাকে বা যাদের স্টেরয়েড নিতে হয়। এই ক্ষেত্রে জীবাণু ভয়ানক রোগ করে, সেটা হল জোস্টার। পুরো শরীর জুড়ে স্নায়ুশোগুলিতে লাল হয়ে মর্মান্তিক ব্যাথা হয়। এই রোগটি ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। এই রোগকে প্রতিরোধ করতে জোস্টার ভ্যাকসিন নিতে হবে।

বড়োদের এই ভ্যাকসিন নেওয়ার সচেতনতা কিভাবে দেওয়া যায়? ডাঃ ভৌমিক জানান, প্রথমতো হচ্ছে হেলথ যুক্ত প্রোগ্রামের থেকে জানা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তাহলে এই ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেওয়া যেতে পারে। তৃতীয়ত স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের একটা কাউন্সিলিং করাতে পারে, যাতে তারা এই বিষয়ে সচেতন হতে পারে। সর্বশেষে রইল সরকারের দায়িত্ব রোগীদের সচেতন করা।

বড়োদের কী ধরণের ভ্যাকসিন দরকার? নিমকনকল ভ্যাকসিন আছে, নিমোনিয়ার জন্যে সেটা খুবই প্রয়োজন এবং যারা ৬০-এর উর্ধে রয়েছে, বা যাদের লিভারের সমস্যা, এইচ আই ভি রয়েছে। তাদের এইগুলো অবশ্যই দরকার। আবারও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন খুবই দরকার। মহিলাদের ক্ষেত্রে যারা গর্ভ ধারণ করতে পারেন তারা হিউমান পাপিলমা ভাইরাস ভ্যাকসিনটা নেওয়া অত্যন্ত দরকারি।

এছাড়াও রয়েছে টাইফয়েড ভ্যাকসিন, হেপাটাইটিস এ ভ্যাকসিন, এই ধরণের ভ্যাকসিনগুলি খুবই দরকার।

পোলিও রোগটি ১৫ বছরের নিচে থাকা শিশুদের হয়। তাই জন্মের জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই দিয়ে দেওয়া হয়। তবে, বড়োরাও না নিয়ে থাকলে নিতে পারেন।  অনেক সময় বিদেশযাত্রার সময় দেশে ঢুকতে অনুমতি দেয়না।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...