খেলোয়াড় হোক বা পথচলতি খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ, এখনকার দিনে পেশী বা হাড়ে চোট প্রায় প্রত্যেকে কোনও কোনও ভাবে পাবেই। আর সেই চোট যদি হয় হাড় ভেঙে যাওয়ার মতন এক যন্ত্রণাদায়ক বিষয়, তাহলে ভুক্তভোগীর জীবন যে কী দুর্বিসহ অবস্থায় পড়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। হাড় ভাঙলে অথবা পেশিতে চোট পেলে কী নিয়ম মেনে চললে নিজেকে আগের মতন সুস্থ করে তুলতে পারবেন, এই নিয়ে মূল্যবান পরামর্শ দিলেন অর্থোপেডিক সার্জেন ড. সুমন্ত পাঁজা।
অনেকসময় খেলোয়াড়রা খেলার সময় পেশিতে চোট পান, সেইসময় অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে বরফের সেঁক দেওয়া দরকার। ব্যথা পাওয়ার সাথে সাথে বরফ শরীরের চোট পাওয়া অংশে দিলে আরাম পাওয়া যায় এবং যন্ত্রনার ছড়িয়ে পড়ার হার কমে আসে। ড. সুমন্ত জানিয়েছেন, খেলতে নামার আগে স্পোর্টসম্যানদের অবশ্যই ওয়ার্মআপ করা দরকার। খেলার আগে শরীর এক্সারসাইজের মাধ্যমে গরম রাখলে আঘাত বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। খেলতে গেয়ে বড়সড় আঘাত পেলে বেশকিছুদিনের জন্য বিশ্রামের দরকার। সঠিক রেস্ট যেমন আঘাতপ্রাপ্ত বডিপার্ট ধীরে ধীরে সারিয়ে তোলে, তেমনই হাড় বা পেশী ড্যামেজ হলে তার সঠিক চিকিৎসাও করে নেওয়ার সময় পাওয়া যায়। গরম সেঁক না ঠান্ডা সেঁক কোনটা বেশি ভাল এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ড. সুমন্ত জানান, হঠাৎ আঘাত পেলে বরফের সেঁক দেওয়া যেতেই পারে, কিন্তু ক্রনিক ব্যথা অর্থাৎ দীর্ঘদিনের ব্যথা মাথাচাড়া দিলে গরম সেঁকের প্রয়োজন আছে।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রবীণ মানুষদের হাড় এবং পেশীর জোর কমে যায়। এর থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই বয়স্কদের এক্সারসাইজ এবং প্রাত্যহিক যোগব্যায়ামে মন দেওয়া দরকার বলে মনে করেন ড. সুমন্ত। হঠাৎ আঘাত পেলে ব্যথার ওষুধ খাওয়া কি উচিত? এই নিয়ে ড. পাঁজা জানান, আঘাত পাওয়ার পর ব্যথা স্বাভাবিকভাবে দু'-এক দিনে না কমলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে পেইনকিলার খাওয়া যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরাও বরাবর বলে আসছেন, চোট পেলে ডাক্তারের কাছে যান। নিজে ওষুধের দোকানে গিয়ে পেইনকিলার কিনে খাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
হাড় ভাল রাখার জন্য সঠিক খাওয়াদাওয়ার উপরেও জোর দিয়েছেন ডাক্তার সুমন্ত পাঁজা। দুধ এবং ছোট মাছ হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী বলে তিনি জানান। এছাড়াও শাকপাতা, সবজি নিয়ম করে খাওয়ার তিনি পরামর্শ দেন।
হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে গেলে আমাদের নিজেদেরকেও সজাগ থাকতে হবে। প্রত্যেকদিন ব্যায়াম এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ হাড় ও পেশীকে অনেকাংশে মজবুত করে তোলে। ব্যথা নিরাময় এবং তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ সঠিক ভাবে মেনে চলা দরকার। চোট পেলে ব্যথা অনুভূত হবে, এ' ভীষণ স্বাভাবিক। কিন্তু খেলাধূলা করার সময় বা পথে চলতে গিয়ে, হাতে-পায়ে আঘাত লাগলেই হাড় ভাঙার যে দুশ্চিন্তা শুরু হয়, এর থেকে বেরিয়ে আসা ভীষণভাবে দরকার।