Type 2 ডায়াবেটিসের উপসর্গ কীভাবে চিনবেন?

Type 2 ডায়াবেটিস আসলে কী? উপসর্গ কীভাবে চিনবেন? এই রোগে কি গর্ভাবস্থায় কোনও সমস্যা হতে পারে? কেমন হয় চেকআপের রুটিন? বিস্তারিত জানালেন ডাঃ অভীক বসু (Dr. Avik Basu, General Practitioner, silver medallist, associate member of royal college of physicians, Edinburgh)

ডাঃ অভীক বসু জানিয়েছেন, ডায়াবেটিস মানে শরীরে ইন্সুলিনের একটা সমস্যা। টাইপ ২ ডায়াবেটিস বলতে শরীরে ইন্সুলিন উৎপাদন কমে গিয়েছে তা নয়, হয়ত মাত্রাতিরিক্ত হচ্ছে, কিংবা যে পরিমান ইন্সুলিন বেরচ্ছে তার কার্যকারিতা কমে গিয়েছে। শরীরের যে যে অঙ্গগুলিতে ইন্সুলিনের কাজ হওয়া উচিত ছিল সেগুলিতে কাজটা হতে পারছে না। এর ফলে মনে হচ্ছে যেন শরীরে ইন্সুলিন নেই তার জন্য যা যা লক্ষণ সামনে আসে সেটাই টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ।

এই সময়ের হিসেবে ধরলে প্রায় প্রতিটি মানুষ মানুষ টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে। আসলে ডায়াবেটিস বলতে এক সময় বলা হত কার্বোহাইড্রেড মেটাবলিজমের সমস্যা থেকে আসে তা শুধুমাত্র নয়, এটা লাইফ স্টাইল ডিসঅর্ডার। কারণ এখনকার দিনে আধুনিক জীবন যাত্রায় পাড়ায় পাড়ায় যত না বেশি ওষুধের তার চেয়ে দু গুণ বেশি ক্যাফে, রেস্তোরাঁ বেশি। রান্না ঘরের বদলে বাইরের খাবার, ফাস্টফুড এই যে লাইফ স্টাইলে বদল আসছে, চটজলদি জিনিস, মুখোরচক খাবার এতে কিন্তু স্বাস্থ্য অবনতি হয়ে অস্বাস্থ্যকর দিকে চলে যাচ্ছে। সুতরাং একটা শিশু যখন জন্মাচ্ছে তখন থেকেই কিন্তু তার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে পরে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার। তবে স্বাস্থ্যকর জীবন যাত্রা মেনে চললে তার ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। টাইপ ২ ডায়াবেটিস বলতে ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস যাদের থাকে মূলত তারা টাইপ ২ ডায়াবেটিক রোগী। কিন্তু এখানেও বুঝতে হবে যে শুধুমাত্র জিনের মধ্যে ডায়াবেটিস থাকলে তার ডায়াবেটিস হবে এমন নয়। নিয়ন্ত্রণ কিন্তু তার হাতে। তার পারিপার্শ্বিক তাকে কতটা প্রভাব ফেলছে তার ওপর নির্ভর করছে। সুতরাং লক্ষণ কিন্তু অনেক সময় বোঝা যায় না। রোগী হয়ত কোনও রুটিন পরীক্ষা করতে গিয়ে তখন গিয়ে তার ধরা পড়ল ডায়াবেটিস। আবার দেখা গেল কোনও ক্ষত হয়েছে, অনেক দিন ধরে সারছে না টেস্ট করতে গিয়ে দেখা গেল ডায়াবেটিস। হাতে পায়ে ঝিঁ ঝিঁ, জ্বালা ভাব কাজের মধ্যে উদ্যোম নেই, ক্লান্তি এইগুলিও ডায়াবেটিসের লক্ষণ।

বেশিরভাগ টাইপ ২ ডায়াবেটিসে complications of diabetes নিয়ে আসে। প্রথম দিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিস তাদেরই ধরা পড়বে যারা স্ক্রিনিং করতে করতে যায়। জীবন যাত্রায় বদল আনলে অনেক সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সঠিক চিকিৎসার অভাব, সঠিক সময়ে নিয়ন্ত্রণ না করা হলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস অন্য রোগের কারণ হয়ে ওঠে। শরীরের এমন কোনও অঙ্গ নেই যা এই ডায়াবেটিস থেকে বিকল হবে না। হার্টের সমস্যা আসতে পারে, চোখ, কিডনি, ব্রেন, ইউনারি ট্র্যাক, পেশি সংক্রান্ত সমস্যা আসতে পারে ডায়াবেটিস থেকে। সেই জন্য ডায়াবেটিসকে সাইলেন্ট কিলার বলা হয়।

কখন কার শরীরে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে কেউ আন্দাজ পায় না। তাই একেবারে শুরু থেকেই এই রোগের যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন। যে সময় চলে যায় তাকে আর ফিরিয়ে আনা যায় না। গর্ভস্থায় শরীরে নানা পরিবর্তন আসে। এই অবস্থায় মায়ের শরীরে যদি আগে থেকেই ডায়াবেটিসের লক্ষণ থেকে থাকে তাহলে আর তা যদি অনিয়ন্ত্রিত থেকে থাকে তাহলে অতি অবশ্যই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু ডায়াবেটিক মায়ের ডায়াবেটিস যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে ভয়ের কিছু নেই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...