ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলি কী কী?

ক্যান্সার আজও মানুষের কাছে ‘মারাত্মক এক রোগ’। ভয় আরও বেড়ে যায় যদি রোগটি যদি হয় ‘ব্লাড ক্যান্সার’। তবে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, ‘ভয় নেই’। আছে মুক্তির পথ। ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসায় সেরে যায় এই রোগ।

সাধারণত ব্লাড ক্যান্সার দু ধরনের হয়। প্রথমটি হল, অ্যাকিউট লিউকেমিয়া ও দ্বিতীয়, ক্রনিক লিউকেমিয়া। এই দু’ধরনের ব্লাড ক্যান্সারের মধ্যে অ্যাকিউট লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হলেই ঝুঁকি বেশি। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রে এই দু’ধরনের ব্লাড ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় রয়েছে। সুতরাং ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা কীভাবে করা হয়? ব্লাড ক্যান্সারের লক্ষণগুলি কী কী?

এই সকল প্রশ্নের উত্তর দেবেন চিকিৎসক ডাঃ প্রান্তর চক্রবর্তী

ডাঃ প্রান্তর চক্রবর্তী বলেছেন, আমাদের যখন ব্লাড ক্যান্সার সম্পর্কে সেভাবে কোনও ধারণা ছিল না, তখনও আমরা জানতাম কিছু ধরনের ব্লাড ক্যান্সার আছে যেটি মানুষের শরীরে দেখা দিলে চিকিৎসা না করলে প্রাণ হারানোর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই ধরনের ব্লাড ক্যান্সারকে অ্যাকিউট লিউকেমিয়া বলা যেতে পারে। এছাড়াও রয়েছে ক্রনিক লিউকেমিয়া যা বয়স্কদের বেশি দেখা যায়। তবে অ্যাকিউট লিউকেমিয়া ও ক্রনিক লিউকেমিয়ার দুটি করে ভাগ রয়েছে। অ্যাকিউট লিউকেমিয়ার দুটি ভাগ হল এ.এল.এল ও এ.এম.এল। আর ক্রনিক লিউকেমিয়ার দুটি ভাগ হল সি.এল.এল ও সি.এম.এল।

ক্রনিক লিউকেমিয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ওষুধ ব্যবহার করেই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে সি.এল.এল অনেক সময় কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে অ্যাকিউট লিউকেমিয়ার এ.এল.এল সবচেয়ে বেশি দেখা যায় শিশুদের মধ্যে। কিন্তু বয়স কম হওয়ায় প্রাপ্ত বয়স্কদের চেয়ে তাদের সেড়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি। ব্লাড ক্যান্সার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় ও দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার কারণে দেহে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন দেখা দেয়। এছাড়াও রক্তক্ষরণ বেড়ে যায়। তাই রোগীর বাড়ির লোকেদের আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। নজর রাখতে হবে যে তাদের এই সমস্যাগুলি কত দিন স্থায়ী হচ্ছে। এছাড়াও একটা কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট ও পেরিফেরাল ব্লাড স্মেয়ার করাতে হবে। এই দুটি পরীক্ষা করালে ব্লাড ক্যান্সার আছে কি না তা জানা সম্ভব।

ব্লাড ক্যান্সার দেখা দিলে প্রাপ্ত বয়স্কদের মতো শিশুদের মধ্যেও একই লক্ষণ দেখা যায়। তাই মাকে সচেতন থাকতে হবে এই লক্ষণগুলি দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ব্লাড ক্যান্সারের সব কারণ না জানা থাকলেও কিছু চিকিৎসকের ধারণা হাই রেডিয়েশান ও বিভিন্ন কেমিক্যালের সংস্পর্শে আসলে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জিনগত কারণে এই রোগ দেখা নাও দিতে পারে।

অ্যাকিউট লিউকেমিয়া দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া উচিত। সাধারণত কেমোথেরাপির মাধ্যমে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু যেহেতু কেমোথেরাপির ফলে মানব দেহে অন্যান্য আরও সমস্যা দেখা দেয়। তাই কিছু টার্গেটেড মনিকিউল এসেছে যার মাধ্যমে শুধু মাত্র ক্যান্সারের কোষগুলোকেই টার্গেট করা হয়। যেমন- শিশুদের ফিলাডেলফিয়া পজেটিভ এ.এল দেখা দেয়। বর্তমানে এই রোগের চিকিৎসার জন্য টাইরসেন কাইনি জিনিপিটার নামক ওষুধ এসেছে। যার মাধ্যমে খুব সহজেই এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। শিশুদের মধ্যে এ.এল.এল দেখা দিলে প্রথম ছয় মাসের মধ্যেই চেষ্টা করা হয় ক্যান্সার সেল কমিয়ে দেওয়ার। এবার পরীক্ষা করে দেখা হয় ক্যান্সার কতটা কমেছে। তারপর আবার ক্যান্সার সেল কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের থেরাপি করা হয়। শেষে মেইনটেনেন্স থেরাপি চলে দু বছর ধরে। কিন্তু অনেক সময় এ.এম.এল-এর ক্ষেত্রে চিকিৎসা চলাকালীন আবার রোগ ফিরে আসে। তখন বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয়। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এ.এম.এল জন্যে টার্গেটেড থেরাপি এসেছে। এছাড়াও শিশুদের জন্য কাট্টি থেরাপি ব্যবস্থা রয়েছে যার মধ্যে ক্যান্সার সেলগুলিকে চিনিয়ে দেওয়া হয় যাতে শুধু মাত্র ক্যান্সার সেলগুলিকে ধ্বংস করে। তবে এই সব থেরাপিগুলি ওষুধ কাজ না করলেই দেওয়া হয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...