অটিজম কী? অটিজম কেন হয়? এই সমস্যা কি বংশগত? অটিজমের লক্ষণ কী? কোন বয়সে শিশুর কোন আচরণ দেখলে সতর্ক হবেন? বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের বিশেষ পর্বে বিস্তারিত জানালেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সেক্সোলজিস্ট ডাঃ কৃশানু চক্রবর্তী (Dr. Krishanu Chakrabarty, Consultant Psychiatrist, sexologist)
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর সিদ্ধান্ত নেয়, প্রত্যেক বছর ২ এপ্রিল 'বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস' হিসেবে পালিত হবে। অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার' বা ASD এমন এক ধরনের জটিল অবস্থা যাতে আক্রান্তের সামাজিক মেলামেশার ক্ষমতা, ভাবের আদানপ্রদানে নানা ধরনের খামতি বা দুর্বলতা দেখা যায়। সঙ্গে কোনও একই ধরনের আচরণ বার বার করে যাওয়ার প্রবণতাও থাকতে পারে। সাধারণভাবে, বহু ক্ষেত্রে ১ বছর বয়সের মধ্যেই এর লক্ষণ দেখা যায়। তবে ২-৩ বছর বয়সের মধ্যে লক্ষণগুলি স্পষ্টতর হয়ে ওঠে, মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ডাঃ কৃশানু চক্রবর্তী জানিয়েছেন, অটিজম সেই অর্থে রোগ নয়। ডায়াবেটিস একটা রোগ, আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা কমে যায়, বা যে ইনসুলিন তৈরি হচ্ছে সেটাও যদি ঠিক করে কাজ না করে তাহলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। সেই জন্যই ডায়াবেটিস হয়। কিন্তু অটিজমের সেই অর্থে কোনও নির্দিষ্ট কারণ আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
যদি কোনও অটিজম আক্রান্তের রক্ত পরীক্ষা করা হয় তাহলে তার রক্তে কোনও হরমোন মাত্রা বেশি বা কম পাওয়া যাবে না। সিটিস্ক্যান বা এমআরআই করলেও ব্রেনের কোনও নির্দিষ্ট সমস্যা খুঁজে পাওয়া যাবে না। সেই কারণেই অটিজমকে ডিজিজ বলা ঠিক নয়। এটা একটা নিউরো ডেভলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার। মানে শিশু মাতৃগর্ভে থাকাকালীন মস্তিষ্কের বিকাশ যেভাবে হওয়া উচিত সেভাবে না হয়ে একটু অন্যভাবে হয়। সেটাই অটিজমের কারণ।
থেরাপির মাধ্যমে অটিজমের চিকিৎসা হয়। অটিজম আক্রান্তের গুনাগুন যাতে প্রকাশিত হয় তার জন্য তাদের সাহায্য করেন থেরাপিস্ট ও চিকিৎসকরা। এই সমস্যার জন্য মা বাবা দায়ী নয়।
সামাজিক মেলামেশায় অনীহা এই রোগের লক্ষণ। আক্রান্তরা একা থাকতে পছন্দ করে। মৌখিক যোগাযোগে সমস্যা হয়। অভিব্যক্তি বুঝতে পারেনা অটিস্টিক শিশু। একই কথা বারবার বলা, একই কাজ বারবার করা, কোনও আলো, আওয়াজ, স্পর্শ, গন্ধের প্রতি তাদের আকর্ষণ হয় খুব বেশি হয় নয় কম। জেদের সঙ্গে সঙ্গে এই উপসর্গগুলিও অটিজমের অন্যতম লক্ষণ। অটিজম জনিত কারণে জেদ, হিংস্রতার দু'রকম চিকিৎসা হয়। একটা পার্মানেন্ট ট্রিটমেন্ট, এই ট্রিটমেন্ট হওয়ার পর জেদ স্থায়ীভাবে কমবে। এটাই থেরাপি। একে বলা হয় বিহেবৱ্যাল ইন্টারভেনশন। স্পেশাল এডুকেটররা এই থেরাপি দেন। থেরাপির জন্য উপযুক্ত করে তুলতে বাচ্চাদের কিছুদিনের জন্য লো ডোজের মেডিসিন দেওয়া হয়। সেই ওষুধে তাদের কিছুদিনের জন্য শান্ত রাখা হয় যাতে থেরাপিটা সে শেষ করতে পারে। এভাবেই রাগের ট্রিটমেন্ট করা হয়।
অটিজমের সহায়তা শুধু ক্লিনিক্যাল নয় বাড়িতে অভিভাবক এবং স্কুলে টিচারদেরও একটা ভূমিকা আছে। প্রথমেই তাদের অটিজমের ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে। বাবা মাদের ট্রেনিং দিতে হবে যাতে তাঁরা কো থেরাপিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারে। শিশুদের সময় দিতে হবে।