কীভাবে জয় করবেন কর্কটব্যাধির ভয়? ক্যানসার রোগীদের মানসিক জোর কীভাবে বাড়ানো যায়? শরীরে কোন লক্ষণ দেখা দিলেই সতর্ক হবেন? ক্যানসার ঠেকাতে প্রতিদিনের কোন কোন অভ্যাসে বদল আনা জরুরি, পরামর্শ দিলেন রেডিয়েশন অঙ্কোলজিস্ট ডাঃ স্বর্ণেন্দু বিশ্বাস (Dr. Swarnendu Biswas MD ,Radiation oncologist)
ক্যানসার হল কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। ক্যানসারের কোষ এক অবস্থায় থাকে না। তা অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করে। যাতে আক্রান্ত অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই যত দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু সম্ভব হবে তত দ্রুত ক্যানসারের ছড়িয়ে পড়া আটকানো যাবে।
টিউমার ও ক্যানসার সম্পর্কযুক্ত। টিউমার দু' ধরনের হয়। বেনাইন টিউমার ও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ক্যানসার। বেনাইন টিউমার আকারে বৃদ্ধি পেলেও ছড়িয়ে যায় না। অন্য অঙ্গে প্রভাব ফেলে না। ক্যানসারের টিউমার অন্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে ও শরীরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ব্যাহত করে।
নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে ক্যানসার জিন সূত্রে হয়। বংশগতি অন্যতম কারণ। সেক্ষেত্রে ক্যানসার আগাম প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তবে জীবনযাত্রায় কিছু কিছু পরিবর্তন আনলে যাতে ক্যানসার সম্ভাবনা একটু হলেও কম হয়ে যায়। যেমন ধূমপান, এলকোহল এড়িয়ে চলা, ফ্যাটি ফুড থেকে দূরে থাকা। হাইজিন মেনে চলা, নিয়মিত শরীর চর্চা, ব্যায়াম এই গুলোই প্রাথমিক নিয়ম।
ক্যানসার আক্রান্তদের কিছু বিশেষ মনের অবস্থা হয়। প্রথম যখন রোগী জানতে পারে ক্যানসার হয়েছে তখন তার প্রথম প্রতিক্রিয়া হয় বিস্ময় এবং অবিশ্বাস। রোগী ভাবতেই পারে না যে সে ক্যানসার আক্রান্ত। তারপর আসে ভয়। ভয় থেকেই শুরু হয় নানারকম খোঁজ। এসব করতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে দেরী হয়ে যায় চিকিৎসা শুরুতে। এই ব্যাপারগুলোকে এড়িয়ে চলতে হবে। অন্য অসুখের মতো নয় এই অসুখ।
যে তার ওষুধ খুব সহজে সুলভে পাওয়া যায়। কিন্তু যদি ঠিক চিকিৎসা করা হয় তা সারার যোগ্য যতক্ষণ না তা স্টেজ ফোরে যাচ্ছে। তারপর কেমোথেরাপি বা অন্য যা যা চিকিৎসাপদ্ধতি আছে তার মধ্যে দিয়ে গেলে সুস্থ হয়ে ওঠা যায়। আমাদের দেশে ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে 'Availability' আর 'Access' দুটি গুরুত্বপূর্ণ কথা। রোগী আদৌ চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে কি না। কারণ বিকল্প ওষুধের ক্ষেত্রে তাদের বেশি ভরসা। এমন ব্যাপার অন্য দেশে নেই। ইউরোপ আমেরিকায় দেখা গিয়েছে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত চিকিৎসার আওতায় আসে রোগী এবং সুস্থ হয়। এদেশে সেই সংখ্যা ২২-৩০ শতাংশ। একটা বড় অংশের রোগী মূল ধারার চিকিৎসার বাইরে থেকে যাচ্ছে। যারা আসছে তাদের মনে জোর দিতে হবে অসুখ কঠিন হলেও তা সুস্থতার যোগ্য।
যে সময়টা তারা চিকিৎসার মধ্যে থাকছে সেই সময়টা বাড়ির লোককে প্রচন্ড সচেতন থাকতে হবে। পাশে দাঁড়াতে হবে রোগীর। যাতে তারা কোনও অসুবিধায় না পড়ে। পরিজনদের কর্তব্য রোগীকে এটা না বুঝতে দেওয়া তার একটা বড় অসুখ হয়েছে এবং মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে।
অস্বাভাবিক ওজন কমে যাওয়া, কোনও অঙ্গ থেকে আচমকা রক্তপাত, হামেশাই জ্বর, শরীরের কোনও অংশে মাংসপিন্ড, ক্ষতস্থান দীর্ঘ দিন না সারা বা নতুন করে ক্ষত তৈরি হওয়া-এরকম লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে।