মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় কী? কোন লক্ষণ দেখে বুঝবেন অবসাদ হচ্ছে? কীভাবে সচেতন হবেন? মানসিক অবসাদের প্রতিকার ও সচেতনতা সম্পর্কে পরামর্শ দিলেন মনোবিদ ডাঃ অরিজিৎ দত্ত চৌধুরী (Dr. Arijit Dutta Chowdhury, Psychiatrist)
মন সুস্থ থাকলে তবেই শরীর সুস্থ থাকবে। কিন্তু মনের সুস্থতার জন্য যথাযথ খেয়াল অনেকসময় থাকে না। ঘরে বাইরে চাপ, কেরিয়ার, নানারকম পরিস্থিতির জটিলতায় মন বিপর্যস্ত হয়। মানসিক অবসাদ আসে। সেইভাবেই 'ডিপ্রেশন' হয়ে উঠেছে চেনা শব্দ। যার শিকার হচ্ছে যে কোনও বয়সের মানুষ।
এই পরিস্থিতি বদলাতে কী প্রয়োজন? মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি মিলবে কীভাবে? সে প্রসঙ্গে ডাঃ জানালেন, ইতিবাচক ভাবনা আনার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটানো কমানো দরকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে অসংখ্য ফেক নিউজ না দেখে যে গুলো আমরা করতে ভালবাসি যেমন গান শোনা, বই পড়া, বাগান করা এসবের মধ্যে থাকলে ভাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কম করাটা খুব জরুরী। বেশি স্ক্রিন ব্যবহার করলে তার অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সেটা আজকের দিনে ডিপ্রেশন বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ।
ডিপ্রেশন একটা অসুখ, শারীরিক অসুখ যেমন চেপে রাখলে বেড়ে যায় মানসিক অসুখও একই রকম। যতই সিভিয়ার ডিপ্রেশন হবে তত আত্মহত্যাপ্রবনতা, নিজেকে ক্ষতি করার প্রবনতা বেড়ে যাবে। তাই যে কোনও মানসিক সমস্যা চেপে রাখা খুব ক্ষতিকর।
তবে আগের থেকে অনেক বদলেছে পরিস্থিতি। এই ধরনের স্টিগমা কমেছে। মানুষ সচেতন হচ্ছে। যদি সত্যি সত্যি মন খারাপ লাগে বা মনে হয় আমি ঠিক নেই ডিপ্রেশনে ভুগছি, কাজে ক্ষতি হচ্ছে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ছোটদের অবসাদ অনেক সময় বাবা মা অভিভাবক বুঝতে পারে না। কিন্তু বড়দের মতোই মানসিক সমস্যার শিকার হতে পারে শিশুরা। প্রাপ্তবয়স্করা নিজেদের সমস্যার কথা বলতে পারে কিন্তু শিশুরা সেভাবে বলতে পারে না।
ছোটদের ডিপ্রেশন হলে তাদের আচরণে পরিবর্তন দেখা যায়। হঠাৎ করে এগ্রেসিভ হয়ে পড়া, কথা না শোনা, স্কুল যেতে না চাওয়া এসবই তার প্রাথমিক উপসর্গ।
ঘুম না হওয়া, খিদে না পাওয়া, মেলামেশা বন্ধ করে দেওয়া এসবও আছে। হঠাৎ তার চেনা রুটিনে বদল এলেই সচেতন হতে হবে। মানুষের শরীর আর মন খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে। দুই সুস্থ রাখতেই সঠিক ডায়েট আর এক্সারসাইজ জরুরি। জাঙ্ক ফুড, ফাস্ট ফুড, নেশা থেকে দূরে থাকতে হবে। অফিসের কাজ বাড়িতে না আনাই ভাল। ওয়ার্কিং আওয়ারস বাদ দিয়ে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় নিজেকে দিতে হবে। বাড়ির লোকজন, পরিবার, বন্ধুদের সময় দিতে হবে। কথা বলতে হবে, বেড়াতে যেতে হবে, প্রকৃতির কাছে আসতে হবে এসবই ভাল থাকার ওষুধ।