ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়লে দেহে কী কী সমস্যা হয়?

রেড মিট খাওয়া বারণ। ডাল খাওয়া বারণ। কারুর আবার বিনস, বাদাম কিংবা সি-ফুডেও ‘না’। কারণ জিজ্ঞাসা করলে উত্তর আসে, ‘ইউরিক অ্যাসিড’। এখন যেন ‘কমন প্রবলেম’ হয়ে গিয়েছে এই শব্দ। কোনও বিশেষ বয়স নয়, প্রায় সব বয়সীদের মধ্যেই দেখা দিচ্ছে এই সমস্যা।

কী এই ইউরিক অ্যাসিড?

মানুষের রক্তের অনেক ধরনের যৌগ থাকে যার মধ্যে অন্যতম হল ইউরিক অ্যাসিড। ডি.এন.এ ও আর.এন.এ-এর থেকে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। অনেক সময় প্রোটিন জাতীয় খাবার  বেশি খাওয়ার ফলে শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়াও অনেক কারণে দেহে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে পারে।

শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়লে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। কীভাবে বুঝবেন ইউরিক অ্যাসিড বেড়েছে?  ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে কী করা উচিত?

এই সকল প্রশ্নের উত্তর দেবেন বিশিষ্ট রিউমাটোলজিস্ট ডাঃ তনয় বসু

 

Dr-Tanoy-Bose1

রিউমাটোলজিস্ট তনয় বসুর মতে, মানব দেহে মেটাবোলিজমের ফলে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। ডি.এন.এ ও আর.এন.এ থেকে ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। দেহে ইউরি অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলেই বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। দেহে ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা ৬ মিলি গ্ৰাম হওয়া উচিত। বেশি পরিমাণে রেড মিট বা অন্যান্য মাংস খাওয়ার পর ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়। তাই পরিমাণ অনুযায়ী এই সব খাবার খেতে হবে। এছাড়াও শরীরের বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড যখন শরীর থেকে বেরতে পারে না। তখন বেড়ে যেতে পারে ইউরিক অ্যাসিড। অনেক সময় শরীর স্বাভাবিক পরিমাণে চেয়ে বেশি ইউরিক অ্যাসিড তৈরি করে। মানে, শরীরে যদি টিউমার থাকে তখন অ্যান্টি ক্যান্সার ড্রাগ ব্যবহার করলে ঐ টিউমার গলতে শুরু করবে। যার ফলে শরীরে প্রচুর পরিমাণে ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হবে।

ইউরিক অ্যাসিড যদি নিজের স্বাভাবিক মাত্রা চেয়ে বেড়ে যায় তখন বাতের ব্যথা হয়। এছাড়াও হার্টের সমস্যা, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে কোনও ইঙ্গিত দেয় না। তাই জন্যে যাদের ডায়াবেটিস, হাইব্লাড প্রেসার আছে ও প্রেসারের ওষুধ ব্যবহার করেন তাদের অবশ্যই একবার ইউরিক অ্যাসিড পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত।

ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে আমাদের ডায়েট মেনে চলতে হবে। এছাড়াও ক্যান্সার কেমোথেরাপি, প্রেসারের ওষুধ ও সোয়াসিসের ট্রিটমেন্ট করতে যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তার থেকেও ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে। তাই এই সব রোগের চিকিৎসা চলাকালীন অবশ্যই ইউরিক অ্যাসিড কমানোর ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। সামুদ্রিক খাবার থেকেও বাড়তে পারে ইউরিক অ্যাসিড। তবে নিরামিষ খাবার খেলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে না। তাই সব ধরনের শাক-সবজি, ফল খাওয়া যেতে পারে।

অন্যদিকে মহিলাদের মধ্যে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়ার কোনও সম্ভবনা থাকে না। কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে মাঝ বয়সেও ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় একিউট গাউটিআথ্রাইটিস হলে পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের গোড়া লাল হয় ফুলে যায়। এই সমস্যা ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও হতে পারে। তাই একবার পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। শরীরে ইউরিক স্বাভাবিক মাত্রায় না থাকলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা রয়েছে। সুতরাং স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...