উন্মেষ নিজের পেজের নাম কেন দিয়েছিলেন ‘বাঁকুড়া মিমস’ ?

জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' শোয়ে আজ অতিথি ‘দ্য ফেমাস ঘোতন’ ওরফে উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায় (Unmesh Ganguly) । সোশ্যাল মিডিয়ার জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার‌ তিনি, অভিনেতা, পরিচালক হিসেবেও জমিয়ে ব্যাট করছেন। নিজের পেজের নাম কেন দিয়েছিলেন ‘বাঁকুড়া মিমস’ (BMS)?  কীভাবে সামলান ‘টুকাই’ আর ‘যদুবাবু’কে? মিমের গুগলির ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ সামলান কীভাবে? খোলামেলা আড্ডায় জানালেন নিজের সফর আর স্বপ্নের কথা।

প্রঃ মানুষ অন্য রকম প্রফেশনের কথা ভাবে। তোমার এই ভাবনাটা এল কীভাবে?

উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়ঃ আমি এটা ভেবেছিলাম ২০১৮ সালের একদম শেষে। চ্যানেলটা শুরু করেছিলাম ২০১৮-র শেষে এবং ২০১৯-এ প্রপারলি কাজ করা শুরু করেছি। (BMS) ‘বাঁকুড়া মিমস শর্টস’ চ্যানেলটা খুলেছি। এছাড়া আমি বাংলায় দেখেছি বাংলায় যারা আগে শুরু করেছে যেমন ‘বং গাই’, ‘ওয়ান্ডার মুন্না’, ‘ডি যে বাপন’, এরা যখন কনটেন্ট বানানো শুরু করেছিল সেটা আমায় অনেকটা

ইন্সপায়ার করেছিল কারণ আমি আগে মুম্বইতে থাকতাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর-এর কাজ করতাম। আমার চিরকালই ডিরেক্টর হওয়ার একটা ইচ্ছে ছিল। তাই কাজ শেখার জন্যে মুম্বইতে দু’বছর প্রায় ছিলাম। এরপর কোন একটা কারণে বাড়ি চলে আসতে হয়েছিল। এখানে আসার পর এটাই ভাবনা ছিল যে নিজের থেকে কিছু একটা করব। আমার এই ‘বাঁকুড়া মিমিস’ ফেসবুক পেজটার একটা নামডাক তখন ছিল। সেটা ইউটিউবে ইউজ করা যেতে পারে আর নিজের লেখাটা ইম্প্রুভ করার জন্যে যেটা এখনও আমি চেষ্টা করছি করার। আর আমি নিজে যেটা বানাবো সেটা যেন মন থেকে করতে পারি। সেখানে অডিয়েন্স জাজ হবে। এটা ভেবেই শুরু করেছিলাম আমি।

প্রঃ এমন কোনও ঘটনা আছে যে কোনও কনটেন্ট পোস্ট করেছ তারপর কোথাও থেকে ‘থ্রেট কল’ এসেছে?

উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়ঃ আগে তো প্রচুর মিমস বানাতাম, তো মিমসের ক্ষেত্রে প্রচুর হয়েছে। আমরা যখন মিমস বানিয়েছি তখন কোনও ‘পলিটিকাল পার্টি’-কেই ছাড়িনি। মোটামুটি সব পলিটিকাল পার্টির বিরুদ্ধেই করেছি। মজার ছলে। থ্রেট কল আসেনি এখনও অব্দি ‘লাকিলি’। কিন্তু প্রচুর রিপর্ট এসেছে, ইনবক্সে প্রচুর মেসেজ এসেছে পোস্ট ডিলিট করা নিয়ে। এখন আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি এত গালিগালাজ খেয়ে, শোয়ে গেছে।

প্রঃ উন্মেষ, দেখ আমরা আগে ভাবতেই পারিনা যে ইউটিউবের থ্রু দিয়ে ইনকাম করা যায়। এটা এখন অনেকের কাছে একটা পেশা। যেহেতু এটা ‘ভিউয়ার্স ওরিয়েন্টেড’ একটা রিস্ক থেকেই যায়। সেই জায়গায় দাড়িয়ে এটকা কি একটা বুদ্ধিমানের কাজ নাকি এটাকে সখের জায়গায় রাখা উচিত?

উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়ঃ না, এটাকে আমি শখের জায়গায় রাখিনি। সেটা আমি ভাবতেও পারব না। আমি ভেবছি এটা চলতেই থাকবে, আর করতেই হবে। একটা রিস্ক ফ্যাক্টর থেকেই যায়, আর ‘ভিউয়ার্স’ তো চেঞ্জ হচ্ছে। নিজের ভিডিয়োতে অরিজিনালিটি থাকতেই হবে।

প্রঃ কোনও একটা কনটেন্ট বানিয়ে সেটা দর্শকের কাছে দেওয়া খুব চ্যালেঞ্জিং। এই জায়গা থেকে তুমি নিজেকে কিভাবে মোটিভেট করো?

উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়ঃ আমার মনে যারা এখন অডিয়েন্স আছে তারাই আমাকে মটিভেট করে। এখন আমি ভাল ফিল করি যে মানুষ আছে যারা কনটেন্ট দ্যাখে। আমি কখনই মনে করি না যে আমি ডিপ্রেসড হয়ে যাব। অডিয়েন্সের সঙ্গে কানেকশনটা খুব জরুরি। নিজেকে স্টার ভাবলে হবে না। আমি একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর, আমার একটা অডিয়েন্স আছে। ‘ইটস লাইক মাই স্মল বিজনেস’। এখানে অডিয়েন্স আমার ‘স্টেক হোল্ডার’। নিজেকে বুঝতে হবে অডিয়েন্স কী চাইছে।

প্রঃ তোমার প্রচুর কমেন্টস আসে, সেখান থেকে খুব ভালো এবং খুব খারাপ কমেন্টস কীরকম পেয়েছ, এই দুটো যদি একটু শেয়ার করো?

উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়ঃ সব থেকে খারাপ লাগে যখন কেউ বলে ভিডিয়োটা দেখে আমার হাসি পেল না। সেটা অডিয়েন্স বলেও আর ভাল তো লাগেই যখন ভাল কমেন্টস করলে। লকডাউনের সময় অনেক ভাল কমেন্টস পেয়েছিলাম।

প্রঃ এই ‘বাঁকুড়া মিমিস’, এই নামটা তোমরা হঠাৎ করেই এসেছিল?

উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়ঃ কলকাতা বললে খুব বং-টা এসে যাচ্ছিল। কিরণের থেকে ইন্সপায়ার হয়ে অনেকেই করে। আমি যখন ফেসবুকে ‘বাঁকুড়া মিমিস’ পেজটা ক্রিয়েট করেছিলাম, তখন শুধু বাঁকুড়ার সেই এসেন্সটা, ওখানকার ব্যাপ্রে আমি মিমিস বানাতাম। তারপর পপুলারিটি পেতে ঠিক করলাম ছোট ছোট ভিডিও শর্টসের মতো বানাবো, সেখান থেকেই ‘BMS’ কথাটা আসে।

প্রঃ বড় বড় চ্যানেলগুলোয় তাঁদের নিজেস্ব প্রোগ্রামগুলোয় এখন তোমায় ডাকা হচ্ছে। এই যে সফলতাটা আসবে বা এসেছে সেটা তোমার কাছে কতটা পাওয়া মন হয়?

উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়ঃ আমার কাছে অবশ্যই এটা একটা বড় পাওয়া কিন্তু সত্যি কথা বলতে আমার ইচ্ছে আছে ব্যাপারটাকে আমি যতটা লিমিটে যেতে পারি সেরকম। এখন টুকটাক অভিনয় করছি এবং আমি সিনেমাও বানাতে চাই। সেই স্বপ্নগুলো এখনও পূর্ণ হয়নি। আমি খুব খুশি যে আমাই অডিয়েন্স দেখে কিন্তু আমি এখনও ‘স্যাটিস্ফায়েড’ নই।

প্রঃ এখন রিলসের নামে কনটেন্টের নামে অনেক পোস্ট আসে যেগুলো ফ্যামিলি কারুর সামনে বসে দেখতে পারা যায়না, তোমাদের কনটেন্টের থেকে সেগুলোর ভিউ আরও বেশি হয়। সেই জায়গা থেকে তুমি কী বলবে?

উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়ঃ আমার মনে হয় ওরাও হয়তো একটু অন্যরকম ভাবে খাটে। তাই অন্য রকম একটু কনটেন্ট বানায়। সত্যি তাদেরকে আলাদা করে কিছু বলার নেই। আমি দেখি না। কিছু কিছু কনটেন্ট আমার ভালো না লাগ্লএ আমি দেখিনা। ভাল না লাগলে সেটাকে ইগনোর করে দিতে হবে।

প্রঃ যারা এই ইনফ্লুয়েন্সার বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে নিজের প্রফেশনটাকে ভাবছে, তাদের কোনও টিপস বা কিছু বলার আছে?

উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়ঃ আমার মনে হয়, নিজে কী বলতে চাও সেটা আগে বোঝো। কোনটার ব্যাপারে ভালো কনটেন্ট বানাতে পারবে সেটা দেখ। আমার মনে হয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদেরও ‘অনেস্ট’ হওয়া উচিৎ।

প্রঃ এই যে রিলসের ফলোয়ার দেখে কাস্টিং করা হয়, সেটা নিয়ে কী বলবে তুমি?

উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়ঃ  সেটা হচ্ছে কমপ্লিটলি প্রোডিউসর কল। তারা দেখছে যে আমি এখান থেকে একটা পাবলিসিটি পেয়ে যাব যখন সিরিয়াল বা সিনেমাটা বেরবে। সেক্ষেত্রে আমরা ইউটিউব থেকে বা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে একটা হিউজ অডিয়েন্সকে আমরা টিভিতে টানতে পারব বা হলে টানতে পারব। এটাই প্রোডিউসরের প্ল্যান। সেটা আল্টিমেটলি হতেও পারে আবার নাও হতে পারে কারন অডিয়েন্সকে ১০ মিনিটের একটা ভিডিয়োতে বসিয়ে রাখা যেতে পারে কিন্তু অনেক বড় কিছুতে বসিয়ে একমাত্র সিনেমার অয়াক্টরাই পারে। কারন তারা সেটা শিখে এসেছে তাদের সেই দক্ষতাটা আছে। দুটো জিনিস সম্পূর্ণ আলাদা।

প্রঃ পুজোর প্ল্যান কী? এবারে নতুন কি পাচ্ছি তোমার কাছ থেকে?

উন্মেষ গঙ্গোপাধ্যায়ঃ পুজোর সময় অবশ্যই কনটেন্ট তো বানাবোই আমি। পুজোর সময় বাঁকুড়াতেই থাকি আমি। সেখানেই থাকতে ভাল লাগে। বাঁকুড়ার পুজোই ভালো লাগে। পরিবারের সঙ্গে থাকতে ভাল লাগে। ওটাই প্ল্যান আর কিছু না।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...