কানে কম শোনার (Hearing Loss) সমস্যায় কী করবেন? শ্রবণশক্তির সমস্যার (Ear Disorders) সূত্রপাত কীভাবে হয়? জন্ম থেকে বধির (Deafness) ব্যক্তির কি চিকিৎসায় স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতা ফিরে আসা সম্ভব? জিনের সূত্রেও কি বধিরতা(Genetic Hearing Loss) আসে? বধিরতার সমস্যা ও তার আধুনিকতম চিকিৎসা (Hearing Loss Treatment) নিয়ে বিস্তারিত জানালেন ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাঃ বৈশাখী বকত (Dr. Baisakhi Bakat, ENT Specialist)
বৈশাখী বকত জানিয়েছেন, শিশু এবং পূর্ণ বয়স্কদের ভিত্তিতে কানে কম শোনার সমস্যাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শুরুতে বোঝা যায় না এই সমস্যা। পড়াশোনায় অমনোযোগ, অন্যমনস্কতা, জোরে টিভি বা সাউন্ড সিস্টেম শোনার প্রবণতা থাকলে পরীক্ষায় দেখা যায় শিশুর শ্রবণ সমস্যা আছে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে রোগী নিজেই বুঝতে পারে কম শুনছে আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখে যায় কে কী বলল বুঝতে পারে না।
এই সমস্যা জিনগতও হয়। শিশুর জন্মের সময় বা গর্ভাবস্থায় যদি মায়ের কোনও রোগ সংক্রমণ ঘটে, শিশুর ওজন কম থাকে, জন্ডিস, হাইকপোসিয়ার কারণেও কানে শোনার সমস্যা হয়। এই সমস্যা চেনার উপায়ও আছে। তার আলাদা আলাদা চিকিৎসা পদ্ধতিও আছে। এসব ক্ষেত্রে ৬ মাস বয়সেও হিয়ারিং এড দেওয়া হয়। নাহলে শিশুর কথা বলাতেও সমস্যা হয়। শিশুর সমস্যা চিহ্নিত হওয়ার পর তার বিভিন্ন থেরাপি কোন ক্লাস চলে। তার মধ্যে বিহেভেরিয়াল থেরাপি, স্পিচ থেরাপি করা হয় সঙ্গে হিয়ারিং এড। তিন-চার মাসের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সার্জারির মাধ্যমে ককলারি ইমপ্ল্যান্টেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কানের মধ্যে হাইপাওয়ার হিয়ারিং এড লাগিয়ে দেওয়া হয়। তারপর আবার চলে থেরাপি। এভাবেই সমস্যা সেরে যায়। স্বাভাবিক জীবনে ফেরে রোগী।
শুধু বয়স্ক না হঠাৎ করেও শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়ে যেতে পারে। ট্রমা, দুর্ঘটনায় ককলারি আক্রান্ত, শব্দ দূষণ, কানের পাশে জোরে শব্দ, টিউমার, কানে স্ট্রোক, ভাইরাল ইনফেকশন কারণের আচমকা কান শব্দ গ্রহণের ক্ষমতা হারায়। কানে স্ট্রোক, ভাইরাল ইনফেকশন কারণে শোনার সমস্যা হলে ৭২ ঘন্টার মধ্যে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করলে সেরে যায়।
মধ্যবয়সীদের ক্ষেত্রে সার্জারি নির্ভর করে সমস্যার ওপর। কানের পর্দা, হাড় আর স্নায়ু এই তিন জায়গায় মূলত সমস্যা দেখা যায়। হাড়ের সমস্যা হলে তা বদলে দেওয়ার সুযোগ আছে। স্নায়ুর সমস্যা হলে প্রথমে মেশিনই দেওয়া হয়। নাহলে উপায় ককলারি ইমপ্ল্যান্টেশন।
অনেক সময় এক কানে শোনা যায় আর কানে শোনা যায়। শব্দ প্রথমে কানের পর্দায় যায় তারপর হাড় হয়ে ককলিয়া দিয়ে মস্তিষ্কে যায়। মস্তিষ্ক যেহেতু একটি কানের মাধ্যমে আসা ধবনিতে তার প্রয়োজনীয় সংকেত পেয়ে যাচ্ছে তাই আর এক কান কমজোরী হলেও সে বুঝতে পারে না।