হোমটাউন হাওড়া। জীবনের প্রথম অভিনয় স্কুলের স্টেজে। ক্লাস রুম আর স্কুল কম্পাউন্ডের জনপ্রিয়তা কীভাবে যেন জীবনের গন্তব্য হয়ে উঠেছিল তাঁর। লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে আজ পৌঁছে গিয়েছেন মুম্বইয়ের মায়ানগরীতেই। তবু ক্যালেন্ডারের পাতায় ৯ জুন তারিখটা অভিনেতা কাইস কলিমের জীবনে কেন এত স্পেশ্যাল? টলিকথার আড্ডায় ফাঁস হল সেই রহস্য।
প্রঃ তোমায় ছোটপর্দা, বড়পর্দা, ওটিটি সব জায়গাতে দেখা যায়। অভিনয়ের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
কাইস কলিমঃ শুরুটা যদি বলি আমি বলব ক্লাস সেভেনে প্রথম স্টার্ট করেছিলাম। আমি খুব ভাল ক্রিকেট খেলতাম, কিন্তু আমি খুব ভাল মিমিক্রিও করতাম। ক্লাস সেভেনে যখন পড়ি তখন একটা নাটক হয়েছিল স্কুলে। স্টেজে আমার কাজ ছিল রাজার পাশে হাতে পাখা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। আমি প্রচন্ড রোগা ছিলাম তখন। আমায় একটা ঢিলা পাজামা দেওয়া হয়েছিলাম। স্টেজে যখন পাখা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি তখন হঠাৎ পাজামাটা আলগা হয়ে যায় আর ওটাকে টানতে গিয়ে একটা ক্মিক পাঞ্চ আসে। আমি স্কুলে রাতারাতি পপুলার হয়ে যাই। আর পপুলারিটি কার না ভাল লাগে। নেগেটিভ হোক বা পজেটিভ আমায় স্কুলে সবাই চিনে যায়। ওখানে অন্য স্কুলও এসেছিল তারাও আমায় চিনে যায়। তারপর ভিতর থেকে এসে গিয়েছে ‘পপুলারিটি’, অভিনয় করব। তারপর অভিনয় দুনিয়ায় আসার চেষ্টা। হাওড়া থেকে জার্নি। খবরের কাগজ দেখা। একটা একটা স্টেপ। তার মধ্যে কখনও ঠকেছি, চেষ্টা করেছি আবার উঠে দাঁড়িয়েছি- এভাবেই আস্তে আস্তে হয়ে গেল একদিন।
প্রঃ তোমায় আমরা দেখেছি ফিটনেস ফ্রিক, এটা কি সবসময়?
কাইস কলিমঃ এটার একটা কার
ণ আছে। আমি ছোটবেলায় প্রচন্ড রোগা ছিলাম। কোথাও যখন যেতাম লোকজন ইগনোর করত। যেন হ্যাঙ্গারে জামা ঝুলছে-এরকম একটা ব্যাপার। কলেজে যখন পড়ি তখন এক বন্ধু জিমে যাওয়ার সাজেশন দেয়। জিম জয়েনের পর যখন ডেভলপমেন্ট হচ্ছে তখন দেখলাম আমার বেশ ভাল লাগছে। অভিনয়, মডেলিং-াসার অনেকটা আগের ব্যাপার। তখনও ভাল ফোন আসেনি। মোবাইলের হেজি ক্যামেরাতেই ছবি তুলতাম। তার একটা ছবি আমি গ্রাসিম ইন্ডিয়া কনটেস্টে মেল করি। প্রথম কল াসে। ওটা থেকেই আমার জার্নি শুরু হয়।
প্রঃ এই গরমে ফিট থাকার জন্য দর্শকদের কী টিপস দেবে?
কাইস কলিমঃ প্রথমেই যেটা বলব, বেশি করে জল মাস্ট! জলের বোতল ক্যারি করা উচিত। তেল মশলাদার খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভাল। আর দিনে অন্তত ৩০ মিনিট নিজেকে সময় দেওয়া দরকার। সেটা যোগা হোক বা এক্সারসাইজ, হাঁটা যা কিছু হতে পারে। দরকার নিজেকে ভালবাসা আর সময় দেওয়া।
প্রঃ ছোট থেলে জনপ্রিয়তা টেনেছিল। ২০১৩-তে বিগবস তোমাকে মাস পপুলারিটি দেয়। এই ব্যাপারটাকে কীভাবে দ্যাখো?
কাইস কলিমঃ ১০০ শতাংশ ঠিক। আমি সবসময় বলি আমায় কালার্স বিগবস বানিয়েছে। বিগ বসে যাওয়াটা আমার স্বপ্ন ছিল। ‘বিগ বস চাইছে’- আজও কানের মধ্যে বাজে। আমি সব সময় চেয়েছি ভাল অভিনেতা হব। ভাবিনি যে আমি অন্যদের থেকে আলাদা। আমি শুধু চেয়েছি নিজের কাজটা করতে। আমি ব্লেসড, সেই দিনটাতে। ৯ জুন রাই সেনগুপ্তদি আমায় ফোন করে বলে যে নেক্সট ৩ মাস কী করছি? আমি উত্তর দিয়েছিলাম কোনও কাজ নেই। মজা করে বলি যে ‘দিদি তুমি কি আমায় বিগ বসের জন্য বলছ’? রাইদি বলে ‘হ্যাঁ’। ১০ মিনিটের মধ্যে আমায় চ্যানেলের অফিসে আসতে বলে। আমি বলি যে আমি যেখানে আছি সেখান থেকে ৪০ মিনিট লাগবে। আমায় ১টার সময় আসতে বলা। আমি খুব পাঙ্কচ্যুয়াল, ১টায় পৌঁছে যাই। প্রায় ২-আড়াই ঘন্টা বসে থাকি। মাথার ওপর ক্যামেরা। আড়াই ঘ্নট পর রাইদি আসে, সঙ্গে ডিরেক্টর। তারপর আলোচনা। তারপর ‘বিগবস’র জন্য সাইন করায়। সেই প্রথমবার বুঝতে পারলাম এটাই আসল লাইফ। এটাই তো স্বপ্ন ছিল। তারপর ব্যাস জার্নি স্টার্ট!
প্রঃ কিছুদিন আগেই ‘লস্ট’ রিলিজ করল। অভিজ্ঞতা কেমন?
কাইস কলিমঃ অভিজ্ঞতা খুব ভাল। পবুঝতে পারলাম কলকাতা আর মুম্বইয়ের কাজ করার ধারা একদম আলাদা। ‘লস্ট’ ছবির জন্য দেড় বছর আগে অডিশন দিয়েছিলাম। যোগি আদিত্যজী আমার অডিশন নেয়। তারপর কল আসে সিলেকশনের জন্য। সব কিছু নিয়ে কথা হয়ে যায়। ওখানে ফ্লোরে ঢুকছি। দেখলাম ওয়াকিটকিতে কথা চলছে আমার পুরো ডিটেলস আছে সবার কাছে। স্টেপ বাই স্টেপ এমনভাবে হল যে যখন ফ্লোরে পৌঁছলাম মনেই হয়ন ইযে অভিনয় করছি।
প্রঃ তোমার আপকামিং আর কী কী প্রোজেক্ট আসছে?
কাইস কলিমঃ বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ‘হিয়ার মাঝে’ আর সৌমাই বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ধর্ম অধর্ম’। এখনও শ্যুট কিছু বাকি।