বাবা শ্যামল মিত্র চাননি ছেলে সঙ্গীত দুনিয়ায় পা রাখুক। কিন্তু ভাগ্যে থাকলে সেটা হবে। এমনটাই হয়েছিল গায়ক সৈকত মিত্রের সঙ্গে। বাবার সঙ্গে গলা মিলিয়ে প্রথমবার মঞ্চে গান গেয়েছিলেন তিনি। 'সুজন সখী'র মতো হিট বাংলা ছবিতে গান গেয়েছেন তিনি। আজও তাঁর গলায় শ্যামল মিত্রের গান শুনলে মুগ্ধ হয়ে যাবেন বহু শ্রোতা। আর এই গান ও জীবনের বিভিন্ন গল্প নিয়েই আড্ডা দিতে জিয়ো বাংলার টলিকথা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিল তিনি।
প্র: আপনি ছোটবেলায় খুব ভালো ক্রিকেট খেলতেন। সেই বিষয়ে নিয়ে কী বলবেন?
সৈকত মিত্র: না খুব ভালো খেলতাম না। আসলে আমাদের যেখানে পুরনো পাড়া ছিল সেখানে গোপল বসু, রাজু মুখোপাধ্যায়, সুব্রত গুহ, দেবু মিত্রের মতো বহু নামকরা ক্রিকেটাররা আড্ডা মারতেন। তাদের দেখে ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা হয়েছিল। কিন্তু আমার চেয়ে দাদা খুব ক্রিকেট খেলতেন। দীর্ঘ দিন ধরে ফার্স্ট ডিভিশন ক্রিকেট খেলেছে দাদা। আমি একবছরই খেলেছিলাম একটি ক্লাবের হয়ে। তারপর ব্যক্তিগত কারণে আমি খেলা ছেড়ে দিয়েছিলাম। তবে তারপরেও মাঝে মাঝে গৌতম ভট্টাচার্য, সম্বরণদা'রা যখন কোথাও ক্রিকেট খেলার আয়োজন করতেন তখন খেলতাম।
প্র: বাবার অনুপ্রেরণাতেই কী গানের সাগরে পাড়ি দিয়েছিলেন?
সৈকত মিত্র: না বাবা একদমই চাইতেন না যে আমি গান করি। তার জীবনটা এমনই চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যে পড়েছিল যে তিনি কখনও চাইতেন না যে আমি গান করি। কিন্তু যেটা ভাগ্যে ছিল সেটাই হয়েছে। কিন্তু আমি বাবার সঙ্গে রেকর্ডিংয়ে যেতাম। আমি প্রথম বাবার সঙ্গে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সেই সময়ের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীরা। আমি প্রথমে মঞ্চে গান গেয়েছিলাম সেই দিন। কিন্তু বাবার কাছে কখনও গান শিখিনি আমি।
প্র: শুনেছি উত্তম কুমারকে নিয়ে আপনার বাবা একটি সিনেমা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উত্তম কুমারের জীবনাবসান ঘটায় সেই স্বপ্নটা আর পূরণ হয়েনি তার। সেই ছবি তৈরির গল্পটা একটু বলুন।
সৈকত মিত্র: উনি উত্তম কুমারকে নিয়ে অনেক ছবি করেছেন। 'বিবর' ব্যান হয়ে যাওয়ায় সেটা আর করা হয়েনি। কিন্তু ব্যানটা তুলে নেওয়ার পর আমি বলেছিলাম ছবিটা বানানোর কথা। কিন্তু বাবা বলেছিলেন উত্তম ছাড়া এই চরিত্রটি কাউকে মানাবে না।
প্র: আমরা একটা ঘটনা শুনেছিলাম যে সলিল চৌধুরী একটি গান লিখেছিলেন যেটা আপনার বাবাকে শুনিয়েছিলেন। এই ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলুন।
সৈকত মিত্র: এই ঘটনাটা ১৯৪৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঘটেছিল। সেই সময় ভারতীয় গণনাট্য সংঘের মূল কেন্দ্রটি ছিল উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচরাপাড়ায়। সেখানে তাঁরা রাস্তায় রাস্তায় গান করেছেন। কিন্তু যেহেতু যানবাহনের তেমন কোনও ব্যবস্থা ছিল না তাই আমাদের নৈহাটির বাড়িতে থাকতেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সলিল চৌধুরী। একদিন আমার বাবাকে সেই গান শুনিয়েছিলেন তিনি। সলিল জ্যেঠু একটা গান গাওয়াতে চেয়েছিলেন আমার পিসিকে দিয়ে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে বাবাকে দিয়ে অনেক গান গাইয়েছেন।
প্র: আপনি বাংলা গানের কোন সময়টাকে পছন্দ করেন?
সৈকত মিত্র: যে কোনও সুরেলা গানই আমার পছন্দের। আর পঞ্চাশের দশক থেকে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে পর্যন্ত ছিল বাংলা গানের সেরা সময়। তবে শুধু বাংলা গানের সেরা সময় নয় পৃথিবীর সব ভাষার গানের সেরা সময় ছিল তখন।
প্র: আপনি অনেক পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন। এক সময়ের হিট ছবি 'সুজন সখী'তে প্লেব্যাক করেছিলেন আপনি। সেই গান নিয়ে কী বলবেন?
সৈকত মিত্র: 'সুজন সখী' ছবিতে আমি একটাই গান গেয়েছিলাম। আমি আর শ্রীরাধা ডুয়েট গেয়েছিলাম। সেই সময় একটা গান তৈরির পিছনে অনেক জনের আউটপুট থাকত। তখন ছবির গল্প ও সিচ্যুয়েশন বুঝে গান লেখা হত। যে গান গাইবে তাকেও তার রেঞ্জ অনুযায়ী গান গাইতে দেওয়া হত। কিন্তু এখন এই বিষয়টা নিয়ে অবহেলা করা হয়।
এবার র্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে কোয়েশ্চেনে গায়ক সৈকত মিত্র।
প্র: এক কাপ চায়ে কোন গান গাইবেন?
সৈকত মিত্র: 'তোমাকে চাই'।
প্র: পাহাড় না জঙ্গল?
সৈকত মিত্র: পাহাড়।
প্র: জীবন খাতার প্রতিটা পাতায় কী লিখতে চাইবেন?
সৈকত মিত্র: যাই লেখা হোক হিট লেখা যায় না।
প্র: এই সময়ের প্রিয় গায়ক-গায়িকা?
সৈকত মিত্র: অরিজিৎ সিং ও শ্রেয়া ঘোষাল।
প্র: টাইম মেশিন পেলে জীবনের কোন সময় ফিরে যেতে চাইবেন?
সৈকত মিত্র: সেই সময় যেতে চাইব যখন বাঙালি হিসেবে গর্ব করার সময় ছিল।
প্র: এই সময় কোন গানটা আপনার প্রিয় ও কোন গাইতে বেশি পছন্দ করবেন?
সৈকত মিত্র: 'যদি কিছু আমারে শুধাও'।