বাংলা-হিন্দির পর অস্ট্রেলিয়ান ওয়েব সিরিজে রণজয়

পরিচালক রবিন নাম্বির ধারাবাহিকে প্রথম মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ে করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তারপর বাংলার পাশাপাশি হিন্দি ধারাবাহিকেও সমানতালে লিড। অভিনেতার নাম রণজয় বিষ্ণু। বাংলাদেশের ছবি 'বিজলি'তে অভিনয়ে করার সুবাদে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ওয়েব সিরিজে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এখন 'গুড্ডি' ধারাবাহিকে রণজয়ের অভিনীত অনুজ চরিত্রটি দর্শকদের মনের খুব কাছে। জিয়ো বাংলার ‘টলিকথা’ অনুষ্ঠানে আড্ডা দিতে এসে জীবনের অজানা কথা বললেন রণজয়। প্র: ছোটবেলা থেকে কী আপনার ইচ্ছা ছিল অভিনয় করার?
রণজয় বিষ্ণু: ছোটবেলায় আমার কী ইচ্ছা ছিল সেটা জানা বা বোঝার আগেই আমি অনেক বড় হয়ে গিয়েছি। তাই ছোটবেলায় কী ইচ্ছা ছিল সেটা বলা মুশকিল। আমার মাসির একটা ছোট নাটকের দল ছিল। সেখানে আমি মাঝে মাঝে অভিনয় করতাম। যেটা আমার খুব ভাল লাগত।

প্র: অভিনয় জগতে এলেন কীভাবে?
রণজয় বিষ্ণু: অভিনয়ে আসার জার্নিটা অনেক বড় ছিল‌। এটা না বুঝতে পেরেই আসা। আমি তখন আমার মাস্টার্স শেষ করছি। আমার বাড়ি মধ্যমগ্ৰামের কাছে। কাছাকছি 'এইচ এম ভি' স্টুডিয়ো। তখন 'নীড় ভাঙা ঝড়' নামে একটা সিরিয়ালের শুটিং হত ওখানে। সেই সিরিয়ালে অনেক জন জুনিয়ার আর্টিস্টের দরকার ছিল। তাই সেখানে আমাকে ডাকা হয়েছিল। সঙ্গে আমার দুই বন্ধু বিশ্বজিৎ ঘোষ আর জিতু কামালও ছিল। যারা এখন ইন্ডাস্ট্রি কাজও করছে। সেই সিরিয়ালে শুটিং চলাকালীন আমি দেখছিলাম একজন অভিনেতা বার বার 'এন জি শট' দিচ্ছে। আমি সেটা দেখে হাসাহাসি করছিলাম কিন্তু সেই সময় আমাকে সিরিয়ালে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেকটর দেখে ফেলে। আর সে বলে তুমি সংলাপটা বলে দেখাও। আমি বলে ফেলি। তারপর আমাকে বলা হয় আর কোনওদিন এখানে যেন তোমাকে দেখতে না পাই। কিন্তু ওরা আমার একটা ছবি রেখে দিয়েছিল। তাই আবার পাঁচ-ছয় মাস পর আমাকে অডিশানের জন্য ডাকা হয়। ফার্স্ট লিড রোল করেছিলাম রবিন নাম্বির একটা ছবিতে। যদিও প্রথমে আমাকে সেকেন্ড লিডের জন্য নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে পরিচালক আমাকে ফার্স্ট লিডের রোলটা করতে বলেন। আমি কথাটা শুনে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম। আমি প্রথম আমার বোনকে ফোন করে কথাটা জানিয়েছিলাম। কিন্তু সিরিয়ালটা কিছু পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারপর আবার রবি নাম্বিয়া একটি সিরিয়ালে কাজ করার জন্য আমাকে ডাকেন। সেখান থেকেই শুরুটা হয়েছিল আমার।

প্র: প্রথম যখন সবাই আপনাকে চিনতে শুরু করেছে তখন কী কোনও মজাদার ঘটনা ঘটেছে? আমাদের সাথে শেয়ার করুন।
রণজয় বিষ্ণু: আমার প্রথম যে শট ছিল সেটা আমার চিরকাল মনে থাকবে। তখন ক্যামেরার লেন্স, ফ্রেম সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা ছিল না। আমার ফার্স্ট ইন্ট্রোডাকশন শট দেওয়ার সময় আমি ২৫টা 'এন জি' দিয়েছিলাম। একটি চা বাগানে শুটিং চলছিল। সবাই বলছিল যে আমি শট দিতে পারছি না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে স্যারও আমার উপর রেগে গিয়েছিলেন। আমি সেই সময় বাসে করে শুটিং করতে যেতাম। কিন্তু একদিন বুঝলাম বাসে আমাকে প্রায় সকলেই চিনে ফেলে তাই ট্যাক্সি করে যাওয়া আসা শুরু করেছিলাম। তাও যখন মানুষ কথা বলার জন্য এগিয়ে আসতেন তখন সত্যিই খুব ভাল লাগত।

প্র: অনেকেই জানেন না রণজয়দা অষ্ট্রেলিয়ান সিরিজে কাজ করেছেন। এই বিষয়ে কী বলবেন আপনি?
রণজয় বিষ্ণু: আমি বাংলাদেশের একটা 'সুপারহিরো' ছবি করেছিলাম। যার নাম ছিল 'বিজলী'। সেই ছবিটা করার সময় আমি আইসল্যান্ডেও ঘোরার সুযোগ পেয়েছিলাম। বাংলাদেশে ঐ ছবিটা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। ছবিটা পাঁচটা দেশে মুক্তি পেয়েছিল যার মধ্যে নাম রয়েছে অস্ট্রেলিয়ারও। সেখানে অস্ট্রেলিয়ান এক পরিচালক আমাকে নিয়ে একটা সিরিজ শুট করতে চান। নাম 'আঘাত: কল অফ জিহাদ'। আমি ও দুজন বাংলাদেশি অভিনেতা ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ান বহু অভিনেতা ছিলেন ঐ সিরিজে।

প্র: এই সিরিজে কাজ করার পরেই কী আপনি খুব বেছে কাজ করা শুরু করলেন?
রণজয় বিষ্ণু: না, আমি প্রথম থেকেই খুব বেছে বেছে কাজ করেছি। ভুল করেছি একদম যে ভুল করিনি তা নয়। পয়সার দরকার সবারই হয়। বিশেষ করে যখন তোমার উপর দায়িত্ব থাকে একটা পরিবারের। কিন্তু একটা কথা বলতে চাই যে, আমার ভুলের সংখ্যা অনেকটা কম।

প্র: বহু নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়ের ধারণা অভিনয় জগতে আসার জন্যে একজন গড ফাদারের প্রয়োজন। এই নিয়ে কী বলবেন আপনি?
রণজয় বিষ্ণু: পুরো ভুল ধারণা আমি বম্বে গিয়ে বুঝেছি। সবাই ওখানে কাজ জানা মানুষ জনকে খোঁজে। কলকাতাতেও একই অবস্থা। কাজ জানা থাকলে তোমাকে কাজে নেবেই।

প্র: স্টার বা সেলিব্রেটিদের সঙ্গে গসিপ শব্দটা জড়িয়ে থাকে। আপনাকেও গসিপের মুখোমুখি হতে হয়েছে? কী বলবেন এই নিয়ে?
রণজয় বিষ্ণু: গসিপ কিন্তু মিডিয়াই তৈরি করে। তোমরাই তৈরি করো। আমার এটা নিয়ে কোন আফসোস নেই। কারণ তোমার যখন ভালো কাজটা সবার সামনে তুলে ধরো, ঠিক তেমনিই আমি খারাপ কাজ করলে খারাপ কথা বলবে। কিন্তু আমি কিছু না করলেও যখন বলবে তখন সেটা হবে মিডিয়ার খারাপ দিক। সেটাকেও আমাকে মেনে নিতে হবে।

প্র: বাংলা সাহিত্যের আপনার স্বপ্নের চরিত্র কী?
রণজয় বিষ্ণু: আমার প্রচুর প্রিয় চরিত্র রয়েছে। তবে তিনটে চরিত্র আমার খুব কাছের। একটা হল হুমায়ূন আহমেদের হিমু, প্রচেত গুপ্তের একটি উপন্যাসের চরিত্র আর মতি নন্দীর শিবা।

এবার র‌্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে কোয়েশ্চেনে অভিনেতা রণজয় বিষ্ণু।

প্র: এক কাপ চায়ে কাকে চান?
রণজয় বিষ্ণু: স্নিগ্ধ বাতাস, সামনে পাহাড়, খোলা বারান্দা।

প্র: বাংলা ইন্ডাস্ট্রির প্রিয় পরিচালক কে?
রণজয় বিষ্ণু: কবিদা, রাজ চক্রবর্তী, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিতদা, চন্দ্রাশিস।

প্র: প্ল্যানচেট করলে কাকে করবেন? আর কী বলবেন?
রণজয় বিষ্ণু: আমি আমার মাকে ডাকব। আমার দিদাকেই আমি মা বলি। তাই মায়ের মুখটা দেখতে খুব ইচ্ছে হয়।

প্র: নিজেকে এক কথায় কীভাবে ডেসক্রাইব করবেন?
রণজয় বিষ্ণু: আমি স্টার নই একজন সাধারণ মানুষ। 

প্র: মুর্খ বন্ধু না শিক্ষিত শত্রু?
রণজয় বিষ্ণু: দুটোই ইমর্পটেন্ট।

প্র: আপনার সঙ্গে ডেটে যেতে হলে কী মাথায় রাখতে হবে?
রণজয় বিষ্ণু: কোন রকম শো অফ আমি চাই না। তুমি যা সেভাবেই থাকো। হতেই পারে সে ফাইভ পাস, হতেই পারে সে 'এমবিএ' করেছে। কিন্তু ডিগ্ৰি নয়, তার জীবন বোধটা ম্যাটার করছে।

প্র: আজ ঘুম থেকে উঠে প্রথম কোন কাজটা করেছ?
রণজয় বিষ্ণু: রোজ যা করি তাই করেছি।

প্র: উইর্ডেস্ট ফুড কম্বো?
রণজয় বিষ্ণু: এখন দেখছি চকলেট মোমো তৈরি হয়। কিন্তু মোমোতে কীভাবে চকলেট মেশানো হয় আমি বুঝি না। আমার নরম্যাল খাবার খেতেই ভালো লাগে। এসব এক্সপেরিমেন্টাল ডিশ পছন্দ নয়।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...