বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ অবলম্বনে ‘১৭৭০’ রামকমল মুখোপাধ্যায়ের স্বপ্নের কাজ

বরাবরই তিনি চেয়েছেন যে বাংলা সাহিত্যকে নিজের ছবির মাধ্যমে জাতীয় স্তরে তুলে ধরতে। খুব তাড়াতাড়ি তাঁর সেই স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'আনন্দমঠ' উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হতে চলেছে '১৭৭০' ছবিটি। যাঁর ভাবনা থেকে এই ছবি তৈরির হচ্ছে তিনি হলেন রামকমল মুখোপাধ্যায়। সেই ছবি ও তার অন্যান্য প্রজেক্ট নিয়ে জিয়ো বাংলার টলিকথা অনুষ্ঠানে জানালেন রামকমল মুখোপাধ্যায়।

প্র: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'আনন্দমঠ' উপন্যাসকে কেন্দ্র করে নির্মিত হতে চলেছে আপনার নতুন ছবি। তাও বাংলা নয় এটি একটি দক্ষিণী ছবি। এই বিষয়টা নিয়ে আপনি কী বলবেন?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: আমি বলবো না যে 'আনন্দমঠ' নিয়ে আগে সিনেমা হয়নি। 'আনন্দমঠ' নিয়ে আগে হিন্দি সিনেমা হয়েছে বহু বছর আগে। কিন্তু 'আনন্দমঠ' বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এমন‌ একটা সাবজেক্ট এবং এত সুন্দর লেখা সেটা আজকের দিনে দাড়িয়ে নতুন ভাবে সেটাকে তুলে ধরতে পারি তাহলে সেটা অনেকটা বেশি এন্টারটেইনিং হতে পারে। তাই এসব ভেবেই আমি বরাবরই চেয়েছিলাম যে বাংলার সাহিত্য বা সাহিত্যিকের কাজ যদি জাতীয় স্তরে আমার কাজের মাধ্যমে তুলে আনতে পারি তাহলে বাঙালি হিসেবে খুব গর্বের ব্যাপার হবে। কিন্তু এটা দক্ষিণী ছবি নয়, আমি সব সময় বলি এটা ভারতীয় ছবি। আমরা ভারতবাসী এখনও অন্য রাজ্যে যেতে আমাদের ভিসা লাগে না। আজকের আমাদের দর্শকরা প্যান ইন্ডিয়া অডিয়েন্স হয়ে গিয়েছে। লক ডাউনের পর থেকে আমারা নানা ভাষার ছবি দেখা শুরু করে দিয়েছি। আমার মনে হয় '১৭৭০' একটা এমন ছবি হবে যেটা দেখে সকলে এনজয় করতে পারবে।

প্র: এই ছবিটা আপনার ড্রিম প্রজেক্ট। তাই ছবি নিয়ে কী পরিকল্পনা রয়েছে আপনার?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: ড্রিম প্রজেক্ট ডেফিনেটলি কারণ এটার মাউন্টিংটা বিশাল। অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে যে কেন আমি বাংলায় 'আনন্দমঠ' করছি না? কিন্তু বাংলা ভাষায় না করার মূল কারণ হল বাজেট। ছবির গল্পটা লিখেছেন বিজেন্দ্র প্রসাদ যিনি এস এস রাজামৌলী‌ স্যারের বাবা। 'বাহুবলী', 'বাহুবলী-২', 'বজরঙ্গী ভাইজান'-এর মতো ছবির স্ক্রিপ্ট লিখেছেন তিনি। তাই প্রথমে যখন আমি তাঁকে এই ছবির স্ক্রিপ্ট লিখতে বলেছিলাম তখন তিনি জানতে চেয়েছিলেন কেন আমি 'আনন্দমঠ' নিয়ে ছবি তৈরি করতে চাইছি। আজকের সময় দাঁড়িয়ে আমি কীভাবে দেখছি সেটাই দেখাতে চাইছি এই ছবিতে। পুরোপুরি উপন্যাসের গল্পটা তুলে ধরা হবে না।

প্র: ছবির কাস্টে আমরা কাদের কাদের দেখতে পাবো?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: যতক্ষণ না চিত্রনাট্য লেখা হচ্ছে ততক্ষণ কাস্ট ঠিক করা যাবে না। তবে অবশ্যই আমরা শুধুমাত্র দক্ষিণী কাস্ট নেওয়ার কথা ভাবছি না। বাংলা ও  বলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও থাকবে।

প্র: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা তারপর বম্বে পাড়ি দিয়েছিলেন। সেই সফরটা কেমন ছিল?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: প্রায় ২২ বছর ধরে আমি বম্বে ছিলাম। এক সময় অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছিল। এক সময় লেখা, ফিল্ম ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেছি।

প্র: হেমা মালীনির বায়োগ্ৰাফী লিখেছেন আপনি। সেই অভিজ্ঞতা কেমন?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: আমি যখন বইটা লেখা শুরু করেছিলাম তখন হেমাজী ভোটে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার পাশাপাশি ডান্স শো করছেন, সিনেমা করছেন। ওঁর এই ব্যস্ততার মধ্যে সময় বের করে ওঁর জীবনের গল্প ওঁর থেকে শুনে সেটাকে লেখা ও তারপর সেই লেখার অ্যাপ্রুভাল নেওয়া একটু টাইম কনজিউমিং কাজ হয়। অনেকে ভাববেন কাজটা খুব সহজ, কিন্তু এমনটা নয়।

প্র: মিঠুন চক্রবর্তীর বায়োগ্ৰাফি আপনিই লিখেছেন। বই পড়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: সবার আগে বইয়ের কভার দেখেই খুব খুশি হয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে একটা পোস্টও করেছিলেন। তবে আমার ভাল লেগেছিল যে গল্পটাকে যেমন তিনি চেয়েছিলেন সেভাবেই আমি বলতে পেরেছি। এটা একটা দায়িত্ব, আমি রিয়েলাইজ করলাম বইটা লেখার পর।

প্র: আমরা জানি আপনার ফার্স্ট লাভ সিনেমা। আপনার 'কেক ওয়ার্ক' ছবিটি অনেক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। ছবির শুটিংয়ের এক্সপিরিয়েন্স কেমন ছিল?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: আসলে কোনও কিছুই সহজ নয়। যখন প্রথমে শর্ট ফিল্ম বানানোর কথা ভেবেছিলাম তখন সবাই বলেছিল "এত টাকা খরচ করে কেন শর্ট বানাচ্ছি,  টাকা উঠবে না।" এই ধরনের কথা শুনে আমি ভেবেছিলাম আমি শর্ট ফিল্মটা বানাবো।

প্র: 'রিকশাওয়ালা', 'ব্রোকেন ফ্রেম', 'ইক দুয়া' এই তিনটের মধ্যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় ছবি কোনটি?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: 'রিকশাওয়ালা' আমার প্রথম বাংলা ছবি। তাই সেটা আমার কাছে একটু স্পেশ্যাল। কিন্তু 'রিকশাওয়ালা'  বম্বেতে যে স্বীকৃতি পেয়েছে, মেলবোর্নে যে স্বীকৃতি পেয়েছে, কলকাতায় তা পায়নি।

প্র: সিনেমার পর আপনার সেকেন্ড লাভ হল বিরিয়ানি। কী বলবেন সেই নিয়ে?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: এখন তো কেউ বলে আর্সেলান ভালো, কেউ বলে দাদা বৌদি'র বিরিয়ানি ভালো। আর তাছাড়াও আমি বম্বেতে কলকাতার বিরিয়ানিকে খুব মিস করি তাই নিজেই বিরিয়ানি বানানো শিখেছি। নিজেই বানিয়ে খাই।

প্র: আপনার ফেভারিট ফিকশন্যাল ক্যারেক্টার 'শার্লক হোমস্'। 'শার্লক হোমস্'-এর কোন গল্পটা আপনার সবচেয়ে প্রিয়?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: এখন 'শার্লক হোমস্' আর আমার প্রিয় নয়। এখন এত ব্যোমকেশ দেখছি যে কান মাথা সব জায়গায় থেকেই ব্যোমকেশ বেরোচ্ছে।

প্র: আপনার ফেভারিট ফিকশন্যাল ভিলেন্ হল রাবণ কেন?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: রাবণ ছাড়া রামায়ণ হবে না। রাবণ ছিলেন শিবের পূজারী ও মহাজ্ঞানী।

প্র: যদি মহাভারত নিয়ে সিনেমা হয়। তাহলে কাকে কোন চরিত্র দেবেন?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: আমি যদি মহাভারত পৌরাণিক কাহিনী হিসেবে তৈরি করি তাহলে দ্রৌপদীর চরিত্রে আমি দীপিকা পাড়ুকোনকে দেখতে চাই, রণবীর সিং দুর্যোধনের চরিত্র করবে, শাহরুখ খানকে কৃষ্ণের চরিত্র করবে, ভীষ্মের চরিত্রে অমিতাভ বচ্চন, মোহন লাল বা কমল হাসানকে ভাবা যেতে পারে, অর্জুনের চরিত্রে রামচরণ তেজাকে ভালো মানাবে, অবশ্য কৃষ্ণের চরিত্রে সুরিয়াকেও ভালো লাগবে। কিন্তু এই ছবিটা তৈরি করতে ১০০০ কোটি টাকা লাগবে। সেটা কোথা থেকে পাবো‌।

প্র: যদি আপনাকে কোনও সুপার পাওয়ার দেওয়া হয়‌। তাহলে কী সুপার পাওয়ার চাইবেন?

রামকমল মুখোপাধ্যায়: আমাকে যদি সুপার পাওয়ার দেওয়া হয়, তাহলে চেষ্টা করবো পৃথিবীর সব মানুষ যাতে সুখী থাকে‌।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...