আইটি কোম্পানির চাকরি ছেড়ে অভিনয় জগতে পা রেখেছিলেন অভিনেতা রাজদীপ সরকার। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের নেশা। সেই সুবাদেই আইটি সেক্টরে চাকরির চাপ সামলেও ছেদ পড়েনি থিয়েটারে। অভিনয় ছাড়া জীবন তাঁর কাছে অসম্ভব! একটা সময়ের পর শুধুমাত্র অভিনয়কেই নিজের জীবনের ভরকেন্দ্র করে নিতে খুব বেশি ভাবতে হয়নি। নিয়েছিলেন তিনি। জীবনের শুরুতেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার সুযোগ পেয়েছিলেন। হিন্দি ছবি 'বব বিশ্বাস'-এ একটু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। জিয়ো বাংলার টলিকথা অনুষ্ঠানের আড্ডায় জীবনের গল্প বললেন অভিনেতা রাজদীপ সরকার।
প্র: রাজদীপদা, পুজো কেমন কাটল?
রাজদীপ সরকার: পুজো খুব ভালো কেটেছে। পুজো পরিক্রমার জন্য বেশ কয়েকটা ঠাকুরও দেখা হয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল অনেক দিন পর আমরা অনেকগুলো বিধিনিষেধ ছাড়া পুজো কাটালাম।
প্র: অভিনয় জগতে আসার আগে আপনি চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে অভিনয় জগতে পা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কতটা কঠিন ছিল?
রাজদীপ সরকার: আমি আমার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় আমি খুব একটা খারাপ ছিলাম না। তবে অভিনেতা হওয়ার ইচ্ছাও ছিল। এক সময় চাকরি ও থিয়েটার দুটো একসঙ্গেই করতাম। আস্তে আস্তে দুটো কাজ একসঙ্গে করা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছিল। তাই বাধ্য হয়ে আমি চাকরি ছেড়ে অভিনয় নিয়েই এগিয়ে গিয়েছি।
প্র: প্রত্যেক অভিনেতার কাজ পাওয়া নিয়ে একটা ভয় লেগে থাকে। এটা নিয়ে কী আপনার কোনও দিন ভয় করেনি?
রাজদীপ সরকার: সেই ভয়টা প্রতি মুহূর্তেই হয়। আমি যদি বলি ভয় হয় না তাহলে সেটা মিথ্যা বলা হবে।
প্র: আপনার প্রথম ছবি 'অন্তঃসত্ত্বা'। সেই ছবিতে অভিনয় করার সময় কি আপনি চাকরি করতেন?
রাজদীপ সরকার: হ্যাঁ, 'অন্তঃসত্ত্বা' ছবিতে অভিনয় করার সময় আমি অফিসের নাইটশিফট করতাম আর সকালবেলায় ছবির শুটিং করতাম। প্রতি দিনের রুটিন ছিল এটা। সেই সময় সারা সপ্তাহে আমি মাত্র পাঁচ-ছয় ঘন্টা ঘুমতে পেরেছিলাম।
প্র: আপনি বলিউডের 'বব বিশ্বাস'-এর মতো একটা ছবিতে কাজ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলুন?
রাজদীপ সরকার: মুম্বইয়ের একটি কাস্টিং এজেন্সি এখানকার একটি কাস্টিং এজেন্সিকে কাস্টিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছিল। আসলে অডিশান দেওয়াটা অভিনেতার একটা কাজের মধ্যে পড়ে। তাই সেই ভেবেই আমি অডিশান দিয়েছিলাম। আর এমনিতেই ঐ ক্যারেক্টারের জন্য যেরকম শারীরিক গঠন দরকার ছিল তেমন আমার ছিল না। তাই আমি আশা রাখিনি। আমার অডিশানের সময় সুজয়দাও উপস্থিত ছিল।
প্র: আপনার নিজস্ব প্রোডাকশন হাউজ রয়েছে। আর সেই হাউজের আওতায় অলরেডি একটা কাজ হয়ে গিয়েছে। ভবিষ্যতে আর কী কী পরিকল্পনা রয়েছে?
রাজদীপ সরকার: আমাদের প্রোডাকশন থেকে আরও অনেকগুলো প্রোজেক্টের জন্য কাজ শুরু করেছি। এছাড়াও আমরা প্রতিভাবান থিয়েটার অভিনেতাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
প্র: হাওড়ার শিবপুরের ছেলে হয়ে 'শিবপুর' ছবিতে আপনার ভূমিকা কী? সেটা সম্পর্কে আপনি আমাদের কী বলবেন?
রাজদীপ সরকার: এটার আমার কাছে একটা স্বপ্নের প্রোজেক্ট। আমি প্রায় দশ বছর অপেক্ষা করেছি এই ছবির জন্য। আমি আর আমার টিম অনেক রিসার্চ করেছি এই ছবি নিয়ে।
প্র: 'শিবপুর' কীসের গল্প বলবে?
রাজদীপ সরকার: 'শিবপুর' এক কথায় শিবপুরের গল্প। আর ওখানকার মানুষের গল্প। অনেকেই আমাকে আগে জিজ্ঞাসা করেছেন যে এটা কী সমাজ বিরোধীদের গল্প? আমি বলবো না, এটা সমাজবিরোধী নয় সমাজের গল্প। কেউ প্রথম থেকেই সমাজ বিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকে না। পরিস্থিতি তাকে এই কাজ করতে বাধ্য করে। সেটাই এই ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
প্র: এই ছবির শ্যুটিং এক্সপিরিয়েন্স সম্পর্কে একটু বলুন?
রাজদীপ সরকার: আমাদের ছবির শ্যুটিং হয়েছে হাওড়ার শিবপুরেই। আশির দশক ও নব্বইয়ের দশকের সময় অনুযায়ী এই ছবির চরিত্রগুলোই লেখা হয়েছে। ছবির অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের লুকেও সেই ধারা বজায় থাকবে। এটুকু আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি যে পরমদা ও স্বস্তিকাদিকে কখনও এমন লুকে দেখা যায়নি।
প্র: এবার আপনার চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলুন?
রাজদীপ সরকার: ছবিতে এক যুবকের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যাবে আমাকে। যে চাকরি না পাওয়ায় কুপথে চলে গিয়েছে। খুবই রাফ এবং হিংস্র প্রকৃতির এই চরিত্রটি। আমি মাকেও বলেছিলাম যে এই ছবিটা তুমি দেখালে আমাকে ত্যাজ্য পুত্র করবে।
এবার র্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে অভিনেতা রাজদীপ সরকার।
প্র: আপনার কাছে সাকসেসের মানে কী?
রাজদীপ সরকার: নিজের স্যাটিসফ্যাকশন।
প্র: ছোটবেলায় আপনি কি চুরি করেছিলেন?
রাজদীপ সরকার: খাবারের জিনিস চুরি করে খেয়েছি।
প্র: আপনার রিসেন্ট মিথ্যা কথা কী ছিল?
রাজদীপ সরকার "এই দশ মিনিটে ঢুকছি।" এটা মাঝে মধ্যেই বলে থাকি।
প্র: নিজেকে নতুন করে কী নাম দেবেন?
রাজদীপ সরকার: স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসেন এমন কোনও মানুষের নাম দেওয়া যেতে পারে।
প্র: আনলিমিটেড শপিং করতে দিলে তুমি কী কী কিনবে?
রাজদীপ সরকার: শপিং বলতে আমি ওয়েব সিরিজ দেখতে খুব পছন্দ করি। তাই ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সাবস্ক্রিপশন নিয়ে রাখতে চাই।
প্র: আপনি কী কী চরিত্রে অভিনয় করতে চান?
রাজদীপ সরকার: সব ধরনের চরিত্রেই অভিনয় করতে চাই। তবে এখনও পর্যন্ত মানসিক দিক থেকে অসুস্থ এমন কোনও চরিত্রে আমি অভিনয় করিনি। তাই সেই ধরনের কোনও চরিত্র করতে চাই।
প্র: আপনি কী ধরনের ছবি বানাতে চান?
রাজদীপ সরকার: মানুষের জীবনের গল্পই বলতে চাই। এছাড়াও কিছু রিয়ালিজম নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে।
প্র: এই মুহূর্তে আপনার মাইন্ড রিড করলে কী দেখতে পেতাম?
রাজদীপ সরকার: কিছুক্ষণ পর একটা মিটিং রয়েছে সেটা, আর একটা হল স্টক মার্কেট সাড়ে তিনটে নাগাদ বন্ধ হয়ে যায়।