প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারিং তারপর জার্নালিজম নিয়ে পড়াশোনা করার পর সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবিতে অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন। তারপর টেলিভিশন দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল রাহুল দেব বসুর। পরে 'আয় খুকু আয়', 'কুলের আচার'-এর মতো ছবিতে দুর্দান্ত অভিনয় করে দর্শকদের অবাক করেছেন। সব সময় দর্শকদের সামনে নিজেকে নতুন ভাবে তুলে ধরতে ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছা তার। তাই 'আয় খুকু আয়' ছবিতে এক প্রেমিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবার অন্যদিকে 'কুলের আচার' ছবিতে একটি কমিক চরিত্রে দেখা গিয়েছে তাকে। জিয়ো বাংলার টলিকথা অনুষ্ঠানে আড্ডা দিতে এসে নিজের জীবনের এই অজানা দিকগুলো শেয়ার করলেন অভিনেতা রাহুল দেব বসু।
প্র: রাহুল দেব বসু এই নাম সঙ্গে আপনার বাবার নামও জড়িয়ে রয়েছে। এই নামের রহস্য কী?
রাহুল: এই নামের রহস্য আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেছে। সবাই ভেবেছিল আমি দেবদা'র ফ্যান তাই নামটা পরিবর্তন করিয়েছিলাম। কিন্তু এমনটা নয়। দেব কুমার বসু আমার বাবা। এক সময় তিনি অভিনয় করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু অল্প বয়সেই সংসার সামলানোর দায়িত্ব তার ঘাড়ে এসে পড়েছিল। তাই তিনি কখনও সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। আমি যখন অভিনয় জগতে পা রাখি তখন আমাকে একজন নাম পরিবর্তন কথা বলেন। সেই থেকেই ‘রাহুল দেব’ নামেই আমি পরিচিত। আমার এই জার্নিতে আমি বাবাকে সঙ্গে নিয়েই চলছি।
প্র: প্রথমে আপনি ইলেভেন টুয়েলভে সাইন্স নিয়ে পড়েছেন, তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন। আবার পরে জার্নালিজম নিয়ে পড়েছেন কিন্তু অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার বানিয়েছেন। এই খিচুড়ির সৃষ্টিটা কী শুধুমাত্র অভিনয়ের জন্য?
রাহুল: আমি জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাতেও ভালো র্যাঙ্ক করেছিলাম। কিন্তু কোথাও যেন মনে হচ্ছিল যে ইঞ্জিনিয়ারিংটা আমার জন্য নয়। আমার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিভাবান ছেলে-মেয়েরা আছেন যারা আমার থেকে অনেক বেটার ইঞ্জিনিয়ার হত। তাই আমি ভেবেছিলাম যেটা করবো আমার স্ট্রেন্থ ধরে করবো। তাই জার্নালিজম নিয়ে পড়বার কথা ভেবেছিলাম আমি। পরিবারের সকলেই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল আমার সেই সিদ্ধান্তটা শোনার পর। আমি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে জার্নালিজম গ্ৰ্যাজুয়েশন করেছিলাম। তবে অভিনয় নিয়ে ভাবনা চিন্তার কথা সবার প্রথম বলেছিলেন আমার স্কুলের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ইন্দ্রাশীষ লাহিড়ী। আমার বাবা-মাকেও তিনি বলেছিলেন আমাকে অভিনয় করতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু জার্নালিজম নিয়ে পড়বার সময় অভিনয় নিয়ে কোনও ভাবনা চিন্তা ছিল না। কিন্তু সেন্ট জেভিয়ার্সে যখন ফিল্ম স্টাডি নিয়ে মাস্টার্স করছিলাম তখন আমার দেখা হয় প্রফেসর গোপাল মল্লিকের সঙ্গে। তিনিও আমাকে বলেছিলেন যে আমি ফিল্ম নিয়ে কাজ করতে পারি। আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ফিল্ম স্টাডিজ ও জার্নালিজমে মাস্টার্স করেছিলাম।
প্র: এখনকার প্রজন্মের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা অভিনয় জগতে আসতে চায়। কিন্তু বাবা-মাকে ম্যানেজ করবে কীভাবে এই প্রশ্নটা সকলেই করবে। তোমার কী মনে হয়?
রাহুল: এটা খুবই কঠিন একটা বিষয় কারণ আমি যখন কলেজে পড়তাম তখন বাবা-মাকে লুকিয়ে থিয়েটার করতাম। প্রথমে আমি এক লাইনের রোল দিয়ে শুরু করেছিলাম। সেবার মা কিছু বলেনি কিন্তু বাবা খুব রেগে গিয়েছিলেন। কিন্তু একবার বাবা আমার শো দেখতে গিয়েছিলেন। নাটকটা সকলের খুব ভাল লেগেছিল। তাই বাবা আমাকে বলেছিলেন অভিনয় করতে। কিন্তু তারা পাশাপাশি মাস্টার্স কমপ্লিট করতে।
প্র: আপনি একবার একটা অডিশন গিয়েছিলেন যেখানে আপনি একবারে বদলে দু’বার অডিশন দিয়েছিলেন?
রাহুল: হ্যাঁ, 'আয় খুকু আয়'-এর অডিশন দিতে গিয়েই এই ঘটনাটা ঘটেছিল। আসলে প্রথমবার যে অডিশনটা দিয়েছিলাম। সেই জন্যে আমি পরিচালকের কাছে অনুরোধ করেছিলাম আবার অডিশন দেওয়ার। হয়তো সেই কারণেই আমাকে সিলেক্ট করেছিলেন পরিচালক।
প্র: 'আয় খুকু আয়'-ছবিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
রাহুল: ছোটবেলা থেকে আমি তার ছবি দেখে বড় হয়েছি। আমার ড্রিম ছিল তাঁর সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার। খুব সাপোর্টিভ। দিতিপ্রিয়ার সঙ্গে আমার লুক টেস্টের সময় দেখা হয়েছিল। আমি ওকে দেখে কিছুটা অবাকও হয়েছিলাম, কারণ 'রাজকাহিনী'র শুটিংয়ের সময় ওকে আমি দেখেছিলাম। আমাদের বন্ডিংটা খুব ভাল ছিল। কিন্তু আর দু’জন প্রতিভাবান অভিনেতার সঙ্গে কাজ করেছি আমি। একজন হলেন শঙ্কর দেব নাথ আর অন্য জন হলেন সোহিনী সেনগুপ্ত। আমার সৌভাগ্য যে এত ব্রিলিয়ান্ট অ্যাক্টরদের সঙ্গে কাজ করবার সুযোগ পেয়েছি।
প্র: আপনার প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই অভিজ্ঞতাটা আমার সঙ্গে শেয়ার করো?
রাহুল: ২০১৬ সালে ডিসেম্বর মাসে আমার প্রথম টেলিভিশন ধারাবাহিকের শুটিং হচ্ছিল। আমার সঙ্গে ডেবিউ করেছিল নেহা অমনদীপ সোনকর। সিনটা ছিল নেহাকে আমার গালে চড় মারতে হবে। অনেকবার চেষ্টা করেছিল নেহা। কিন্তু ও মারতে পারছিল না বলে আমি ওকে বলেছিলাম তুই টেনশন করিস না। যদি লেগে যায় তাহলে চিন্তার কিছু নেই। তারপর খুব জোরে একটা চড় মেরেছিল আমাকে। আজও যখন ওর সঙ্গে দেখা হয়, তখন ঐ ঘটনাটা নিয়ে কথা হয়। কিন্তু ওখানে থেকেই আমার শুরু হয়েছিল।
প্র: পর পর ভিন্ন চরিত্রে দেখা গিয়েছে তোমাকে। একটার সঙ্গে অন্যটার মিল নেই। সেটা কীভাবে ম্যানেজ করতে?
রাহুল: আমি ব্যাক টু ব্যাক টেলিভিশনে কাজ করেছি। কিন্তু সব সময় ইচ্ছা ছিল নতুন কিছু করবার। সেই জন্যেই মাঝখানে আমি একটা জি বাংলার অরিজিনালস-এ কাজ করেছিলাম। 'কুলের আচার'ছবিতেও আমি একটা কমিক চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। আমাকে যারা 'আয় খুকু আয়' ছবিতে দেখেছে তারা 'শহরের উষ্ণতম দিন' দেখবে তখন আমাকে সম্পূর্ণ অন্য রূপে খুঁজে পাবে।
প্র: আপনার স্বপ্নের চরিত্র কী?
রাহুল: 'ফেলুদা'। আমাকে একবার সৃজিতদা বলেছিল তোকে না ফেলুদা'র চরিত্রে ভাল মানাবে। আমি বলেছিলাম কাস্ট করে দাও।
এবার র্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে কোয়েশ্চেনে রাহুল দেব বসু।
প্র: পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার আগে কোন চারটে কাজ করতে চান?
রাহুল: পুরো পৃথিবী ঘুরতে চাইব। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের সব ছবি দেখতে চাইব। পৃথিবীর সবচেয়ে ইনফর্মেটিভ বইগুলো পড়তে চাইব।
প্র: অদৃশ্য হওয়ার শক্তি থাকলে কী করবেন?
রাহুল: কাউকে না জানিয়ে সারা পৃথিবী ঘুরে আসব। আর ঘুমবো।
প্র: এক কাপ চায়ে কাকে চান?
রাহুল: কিয়ারা আডবানি।
প্র: পাহাড় না সমুদ্র?
রাহুল: পাহাড়।
প্র: কোয়ালিটি না কোয়ানটিটি?
রাহুল: কোয়ালিটি।