অভিনয় জীবনের শুরু হয়েছিল থিয়েটার দিয়েই। টেলিভিশনে তাকে প্রথম দেখা গিয়েছিল 'দেবী' ধারাবাহিকে। তারপর 'রাখি বন্ধন', 'কৃষ্ণকলি', 'অন্দরমহল'-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে দেখা গিয়েছে। যদিও তিনি টেলিভিশনের পাশাপাশি যাত্রার দুনিয়ার জনপ্রিয় নাম অভিনেত্রী পিয়ালী বসু। কিন্তু শুরুতে অভিনয় জগতে আসার জন্য ঘর ও বাইরের নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। টলি কথার আড্ডায় সেই কাহিনী শেয়ার করলেন অভিনেত্রী।
প্র: তোমার অভিনয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল 'দেবী' দিয়ে
পিয়ালী বসু: হ্যাঁ, 'দেবী' প্রথম টেলিকাস্ট হয়েছিল। কিন্তু রেশমি মিত্রের 'শ্রীচৈতন্য' বলে একটি সিরিয়াল হত সেটার শ্যুটিং আমি প্রথমে করেছিলাম। কিন্তু টেলিকাস্ট পরে হয়েছিল।
প্র: তুমি শুরু থেকেই অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলে?
পিয়ালী বসু: আমি প্রথম অভিনয় করেছিলাম আমাদের পাড়ার একটা নাটকে। সেখান থেকেই আমার অভিনয় শুরু। তারপর যখন আমি কলকাতা ছেড়ে উত্তরপাড়ায় চলে এসেছিলাম সেখানেও কোনও না কোনও নাটকের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য আমাকে ডাকা হত। কিন্তু আমার বাবার এই নিয়ে ছিল ঘোর আপত্তি। যখন তিনি জানতে পারলেন মেয়ে যত বড় হচ্ছে অভিনয় নিয়ে তার ন্যাক বেড়ে যাচ্ছে, তখন তিনি এটা অপোজ করেছিলেন। এমনও হয়েছে যে আমি বাড়িতে না বলে নাটকের রিহার্সাল করতে গিয়েছি। তবে আমার অভিনয় দেখে যখন প্রশংসা করা হয়েছে তখন কিন্তু বাবা খুশিও হয়েছেন। কিন্তু অভিনয় জগতে আসার সময় আমাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন আমার ছোট মামা আর মা। অন্যদিকে অভিনয় করা নিয়ে সমস্যা থাকলেও গান শেখা নিয়ে কখনও সমস্যায় পড়তে হয়নি আমাকে। অনেক ছোটবেলা থেকেই গান শিখেছি আমি। কিন্তু অভিনয় জীবনের শুরুটা হয়েছিল দেবাংশু সেনগুপ্ত। তিনিই প্রথম টেলিভিশনে অভিনয় করার সুযোগ দিয়েছিলেন আমাকে।
প্র: তুমি নাকি খুব রাগী এটা কী সত্যি?
পিয়ালী বসু: এই কথাটা কে বলেছে! আমি ঠিক রাগি না। তবে আমি বোধহয় একটু ইন্ট্রোভার্ট। যেহেতু আমি একটু কনজারভেটিভ ফ্যামেলিতে বড় হয়েছি। আর আমার মাও আমার সঙ্গে কোনও অডিশনে যেতে পারতেন না। কারণ আমার ভাই মেন্টাল হ্যান্ডিক্যাপ। তাই তাকে রেখে মা আমার সঙ্গে আসতে পারতেন না। এছাড়াও আমার কিছু পার্সোনাল রিলেশনশিপ প্রবলেমের জন্য আমি অনেক সময় সঙ্গে রুড বিহেভ করেছি। কিন্তু এখন আমি একেবারেই অন্যরকম মানুষ। আমার প্রত্যেকটা ভুল আমাকে শিখিয়েছে। তবে যাত্রায় যেহেতু আমি ডিরেকশন দিই, তাই আমাকে একটা সময়ের মধ্যে প্রোডিউসারকে কাজটা নামিয়ে দিতে হয়। তাই জন্য আমাকে একটু রিজার্ভ বা কনজারভেটিভ হতে হয়।
প্র: তুমি থিয়েটার, টেলিভিশন ও যাত্রা তিন জায়গাতেই কাজ করেছ। এই তিনটের মধ্যে ডিফারেন্স কী রয়েছে?
পিয়ালী বসু: আমার অভিনয় জীবন শুরু হয়েছে থিয়েটার দিয়ে। তারপর টেলিভিশনের পর্দায় আসা তারপর আমি যাত্রা করা শুরু করি। তিনটেই অভিনয় মাধ্যম। কিন্তু আমার মনে হয় সবচেয়ে কঠিন হল যাত্রা। যাত্রা আর থিয়েটারে কোনও অ্যাকশন/কাট নেই। রিটেকের ব্যাপারও নেই। কিন্তু ভুল হলে থিয়েটারের দর্শক মার্জনা করে দিতে পারে। কিন্তু যাত্রার দর্শক মার্জনা করেন না। তাদের যদি খারাপ লাগে তাহলে তোমার মুখের উপর বলে দেবে 'এই লাইয়া চলবে নি'।
প্র: তোমার কখনও কী মনে হয়েছে যে টেলিভিশন তোমাকে আরও কিছু দিতে পারত?
পিয়ালী বসু: হ্যাঁ, আমি অনেক কিছু ডিজার্ভ করতাম কিন্তু তার জন্য আমি টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিকে দোষ দেব না। হয়তো আমি অনেক কিছু অ্যাকসেপ্ট করতে পারিনি বা আমার তরফ থেকে অনেক কিছু ল্যাক করেছে। এছাড়াও যে সময়টা আমার কেরিয়ার নিয়ে ভাবার কথা ছিল, সেই সময় হয়তো আমি ডি ফোকাসড ছিলাম। তাই আমার মনে হয় এটা আমার নিজের দোষ। কিন্তু এখন আমি অনেক বেশি ফোকাসড।
প্র: সামনে কী কী কাজ আসতে চলেছে তোমার?
পিয়ালী বসু: সামনে একটা যাত্রা আসছে আমার। নাম 'ইতি তোমার নিয়তি'। যাত্রা একটু অন্যরকম গল্পের। এছাড়াও একটা চ্যানেলের সঙ্গে একটা প্রোজেক্ট নিয়ে কথা হয়েছে। জানুয়ারি থেকে সেটার শ্যুটিং শুরু হবে। আর একটা শর্ট ফিল্ম কাজ করার এর কথা চলছে সেটার শ্যুটিং হবে ডিসেম্বরে। আমি 'শৈলুষিক' থিয়েটার গ্ৰুপে অভিনয় করি। সেখানে একটা নাটকের প্রোডাকশনের কাজ শুরু হবে।