শিক্ষিকা থেকে মিসেস ওয়ার্ল্ড পামেলা

প্র: 'মিসেস ওয়ার্ল্ড ইউনাইটেড নেশনস ২০২২' এই জার্নিটা কেমন ছিল?

পামেলা: এই জার্নিটা আজ থেকে শুরু হয়নি। যেদিন থেকে আমাদের 'মিসেস ইন্ডিয়ার' ক্রাউনিং হয় তারপর থেকেই আমাদের সামনে তিন, চারটে অপশন থাকে। তখন আমি দেখলাম 'মিসেস ওয়ার্ল্ড ইউনাইটেড নেশনস'-এর প্রত্যেকটা প্যাজেন্ট-এ কিছু বিশেষ দৃষ্টি ভঙ্গি থাকে। যার সাথে আমার দৃষ্টি ভঙ্গির মিল পাই। সমাজে কিছু মানুষ রয়েছেন যারা সুযোগ সুবিধা কম পান। আমরা অ্যাজ আ ক্রাউন হোল্ডার তাদের উপর ফোকাস করতে পারি ও বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নিজের দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারি। যেহেতু অ্যাজ আ এডুকেটকর এই কাজগুলো আমি সারা জীবন ধরে করে যেতে চাই, সেই জন্যেই ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম 'মিসেস ওয়ার্ল্ড ইউনাইটেড নেশনস'-এর জন্য। এই কনটেস্টের একটা বড় ধাপ ছিল পোর্টফোলিও তৈরি করা। এটা কিন্তু মডেলিং পোর্টফোলিও নয়। আমরা সারা বছর যেসব সমাজ সেবামূলক কাজ করি, তাতে আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গি কী ফুটে উঠেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করা হয়। আমি সদ্যজাত শিশুদের মায়েদের হাতে উপহার তুলে দিয়েছি। আমরা বিধাননগর শিশু হাসপাতালে যাই। সেখানে যারা আসেন তাদের কাছে প্রপার এডুকেশন নেই যে কীভাবে একটি সদ্যজাত শিশুর পরিচর্যা করা উচিত সেই বিষয় আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিই। এছাড়াও অনেক সময় কন্যা সন্তান জন্ম নিলে পরিবার মেনে নেয় না সেই সময় তাদের পাশে দাঁড়াই আমরা ও তাদের হাতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র তুলে দিই আমরা। বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমের বয়স্ক মানুষদের সাহায্য করেছি। 'মিসেস ওয়ার্ল্ড ইউনাইটেড নেশনস' সবচেয়ে বড় ইউনিকনেস হল আমরা যখন ক্রাউন হোল্ডার হিসেবে দাঁড়াই তখন আমাদের সঙ্গে একজন বাচ্চা থাকে। কখনও কোনও কুইনকে একা দাঁড় করানো হয় না। সব সময় তার সঙ্গে পরবর্তী প্রজন্মের কেউ থাকবেই। এটাই বোধহয় এই জার্নির মেইন ফ্রেম।

প্র: সরকারি স্কুলের শিক্ষক থেকে 'মিসেস ওয়ার্ল্ড ইউনাইটেড নেশনস'। যাত্রার শুরুটা কেমন ছিল?

পামেলা: আমি যখন কলেজে পড়ি তখন সরকারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলাম। শুরুর দিকে যখন আমি স্কুলে জয়েন করেছিলাম তখন আমার যারা ছাত্র ছিলেন তাদের সঙ্গে আমার এজ গ্যাপ বেশি ছিল না। আমি ওদের চেহারাগুলো এখনও মনে করতে পারি। আজ যখন আমি ইউ.এন-এর বেঞ্চে বসি তখন সেখানেও আমার কথা বলতে কোনও অসুবিধা হয় না। তারপর আমি যখন স্কুলের ক্লাস টুয়েলভের ছাত্রদের অ্যাড্রেস করি তখন তাদের কাছে আমি ‘পামেলা ম্যাম’। সেখানে আমার কোনও অসুবিধা হয় না। সরকারি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে আমি সমাজের এলিট ক্লাসের সঙ্গে যুক্ত নই। যারা সমাজের ডেফিনেট একটা ক্লাসকে রিপ্রেজেন্ট করে। এই ছেলেগুলোকে যখন আমি বড় করি, তাদের সঙ্গে স্পোর্টসে যাই, তাদের আমি মিড ডে মিল খাওয়াই। তখন তাদের সঙ্গে আমার একটা মা-ছেলের মতো সম্পর্ক তৈরি হয় যায়। সেটা কোথাও কোথাও আমাকে শক্ত করে দিয়েছে।

প্র: যখন ক্রাউনটা মাথায় উঠেছিল তখন কী অনুভূতি হয়েছিল?

পামেলা: আমাদের মেইন ক্রাউনিং হয় ফাইভ অ্যাম্বাসাডার্স ক্রাউনিং হয়। তারপর টপ থ্রি ক্রাউনিং হয়। প্রথম থেকেই আমি জানতাম আমি টপ ফাইভে থাকব। টপ থ্রির জন্য তখন প্রথমেই মিস ইউএসএ ডাকা হয়েছিল। তারপর যখন আমার নাম আসছে তখন আমার খুব টেনশন হচ্ছিল। এক মুহুর্তে জন্যে মনে হয়েছি আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাব। কারণ আমি অনেক এফোর্ট দিয়েছিলাম। কারণ কোভিডের জন্য প্রায় দু-বার এই শো-টা পোস্টপোন্ড হয়েছিল। তারপর এই বার আমার মেয়ের বোর্ড এগজ্যাম ছিল। তাই ওকে এবার বাড়িতে ছেড়ে গিয়েছিলাম। এটা আমি কখনও করিনি। তাই ভাবছিলাম আমার নাম ডাকল না কেন? কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই আমার নাম ডাকা হয়। আমি সেকেন্ড প্লেস পেয়েছিলাম। আমি আমার মেয়েকে ফোন করে কেঁদে ফেলেছিলাম। নিজের শহরের মেকআপ আর্টিস্ট ও ডিজাইনাররা আমার পাশে ছিলেন। ওখানে যারা এসেছিলেন তারা সকলেই ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহার করতেন। কিন্তু সব সময় দেশের ডিজাইনার ও মেকআপ আর্টিস্টদের নিয়েই কাজ করতে চেয়েছি।

প্র: এই প্রতিযোগিতায় কতগুলো রাউন্ড থাকে। সে সম্পর্কে আপনি জানান?

পামেলা: যখন এদের প্যাজেন্টটা অ্যানাউন্স হয়ে যায় আর উইনার হিসেবে আমাদের নাম ঘোষণা করা হয়। তখন আমাদের একটা ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। তারপর আমাদের ন্যাশনাল টাইটেল দেওয়া হয়। তারপর আমাদের ন্যাশনাল টাইটেল অনুযায়ী একটা ট্যাগ দেওয়া হয়। সেই ট্যাগ নিয়ে আমাদের ফিনালেতে পাঠানো হয়। আমরা কীভাবে কথা বলছি, যে হোটেলে ছিলাম সেখানে কার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করছি, এই সব কিছুই দেখা হয়। কারণ কেউ চান না একজন কুইন অ্যারোগেন্ট হোক। এই সব পয়েন্টগুলো অ্যাড হয়।

প্র: ইন্টারন্যাশনাল ক্রাউন হোল্ডারের পাশাপাশি আপনি দুই কন্যা সন্তানের মা। কীভাবে একসাথে সামলান এতো কিছু?

পামেলা: আমার দুই মেয়ে আমার বন্ধুর মতো। বিশেষ করে বড় মেয়ে আমাকে অনেক বিষয় নিয়ে গাইড করে। তাছাড়াও মেয়েরা বোধহয় একটু বেশি ম্যাচিয়োর হয়। আমার স্বামী একজন মার্চেন্ট নেভি। বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি বাইরে থাকেন। তাই জন্য আমরা ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোজারে অভ্যস্ত। আমার মা ও স্বামী আমাকে সাপোর্ট করেছে না হলে এতো দূর হয়তো আসতে পারতাম না।

প্র: আমাদের বাঙালি সমাজে সংসার সামলেও যে সব কিছু করা যায় এটা অনেকে ভাবতে পারেন না। তাদের কী সাজেশন দেবেন আপনি?

পামেলা: স্বপ্নটাকে না দেখতে জানতে হবে। স্বপ্নটাকে ‘স্বপ্ন’ ভেবে ভুলে গেলে চলবে না। তাহলে স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে যাবে। কখনও বাস্তব হবে না।

প্র: বালিগঞ্জ সাইন্স কলেজ ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির মেইন ক্যাম্পাসে এনভায়রনমেন্টাল জিওগ্ৰাফি নিয়ে পড়াশোনা। তখন ভেবে ছিলেন এই দিন আসবে একদিন?

পামেলা: হ্যাঁ, একদমই ভাবিনি। তখন প্র্যাকটিকালী কিছু ভাবার সময় ছিল না। সেই সময় বন্ধুদের যে গ্ৰুপ ছিল তারা সবার আমাকে এই জার্নির শুরু থেকেই পাশে ছিল।

 

প্র: 'মিসেস ওয়ার্ল্ড ইউনাইটেড নেশনস' হওয়ার পর একবছর পর কী করেছেন?

পামেলা: এরপর আমাদের অনেকগুলো প্রোগ্রাম দেওয়া হয়। ক্যালচারাল অ্যাম্বাসাডার হিসেবে আমাকে বিভিন্ন দেশকে পাঠানো হবে।

এবার র‌্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে পামেলা পাল দাস।

প্র: এক কাপ চায়ে কাকে চাই?

পামেলা: আমার বড় মেয়েকে চাই।

প্র: ব্ল্যাক বোর্ড, চক নাকি লাইট অ্যান্ড স্টেজ?

পামেলা: বোথ।

প্র: সেলিব্রেটি ক্রাশ?

পামেলা: নেই। আমার স্বামীই আমার প্রথম ক্রাশ।

প্র: তোমার সঙ্গে ডেটে যেতে কী কী পয়েন্ট মাথায় রাখতে হবে?

পামেলা: ভালো কথা বলতে হবে। একটু হিউমারাস হতে হবে।

প্র: মিসেস ওয়ার্ল্ড ইউনাইটেড নেশনস নাকি প্রাউড মম নাকি কেয়ারিং ওয়াইফ?

পামেলা: তিনটেই আমি বাদ দিতে পারবো না।

প্র: তোমার সারা দিনের রুটিন?

পামেলা: আমার আলাদা কিছু না। সকালে উঠে যোগা করি তারপর খাওয়া দাওয়া স্নান সেরে কাজে বেরিয়ে যাই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...