ছোটবেলায় পাড়ায় নাটকে অভিনয় করতে গিয়েই প্রথম অভিনয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হয়েছিল অভিনেতা মৈনাক বন্দোপাধ্যায়ের। সেই মতোই কলেজ শেষ করে নাটকের দলে যোগ দিয়েছিল। তারপর ২০০৯ সালে 'অমরসঙ্গী' ছবিতে অভিনয় দিয়েই চলচ্চিত্র জগতে পা রেখেছিলেন তিনি। চলতি বছরেই মুক্তি পেয়েছিল তার অভিনীত 'বাবা বেবিও' ছবিটি। যেখানে নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের নজর কেড়েছিলেন তিনি। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি রক ক্লাইমিংয়ের শখ রয়েছে তারা। জিয়ো বাংলার টলিকথা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিজের জীবনের এমনি কিছু অজানা কথা জানালেন অভিনেতা মৈনাক বন্দোপাধ্যায়।
প্র: অভিনেতা না হলে পাহাড়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক গড়ে উঠত। এই পাহাড়ের সঙ্গে সম্পর্কটা কখন তৈরি হয়েছিল?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: পাহাড়ের সঙ্গে সম্পর্কটা তৈরি হয়েছে আমার বাবার জন্য। কারণ বাবা ফাউন্ডার মেম্বার ছিল দিগন্ত কলকাতা বলে একটা ক্লাবের। সেখান থেকেই প্রতি বছর রক ক্লাইমিংয়ের একটা কোর্স করানো হয় প্রতি বছর। আমি ছোটবেলা থেকেই দেখেছি ক্লাবের বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়েছে আমাদের বাড়িতে। এই সব কিছু দেখেই রক ক্লাইমিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। তারপর নিজেও রক ক্লাইমিং করেছি।
প্র: এছাড়াও আপনি যে নতুন একটা সম্পর্কে জড়িয়েছেন সেটা আপনার জীবনে কতটা পরিবর্তন এনেছে?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: এমনি কোনও পরিবর্তন আনেনি। কিন্তু একটা দায়িত্ব আমার কাঁধে চেপেছে।
প্র: অভিনয় করার ইচ্ছা কি ছোটবেলা থেকেই ছিল?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগত কিন্তু কখনও ভাবিনি যে বড় হয়ে অভিনেতা হব। সেই সময় পাড়ায় পাড়ায় নাটক হত আমি একবার এমন একটা নাটকে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেখান থেকে অভিনয় করবার ইচ্ছা জন্মেছিল। তারপরে কলেজের লাস্ট ইয়ার চলাকালীন অভিনয় শেখার জন্য আমি একটা থিয়েটারের দলে জয়েন করেছিলাম।
প্র: সেই ২০০৯-এর 'অমরসঙ্গী' থেকে এবছরের 'সীমান্ত' ছবি। এই জার্নিটা কেমন ছিল?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: ২০০৯-এর আগে থেকেই জার্নিটা শুরু হয়েছিল। আর সেই কারণেই হয়তো ২০০৯ সালটা এসেছিল। তবে আমি যখন 'অমরসঙ্গী'তে অভিনয় করেছিলাম তখন আমার ফিল্ম ক্যামেরায় শুট করা হত। যার ফলে একটা শট এনজি হলে অনেক টাকা খরচ হয়ে যেত। কিন্তু এখন সেটা হয় না। তাই এই জার্নিটা আমাকে অনেকটাই অভিজ্ঞ করেছে।
প্র: আপনার কি মনে হয় ওটিটির জনপ্রিয়তা ফিল্মকে ছাপিয়ে যাচ্ছে ?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: না সেটা কখনোই হচ্ছে না। যদি সেটা হতো তাহলে 'আর আর আর', 'কে জি এফ'-এর মতো ছবি হিট হত না। সিনেমাকে কেউ কোনদিন পিছনে ফেলতে পারবে না।
প্র: লক ডাউনের সময় প্রত্যেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর জীবনেই কিছু না কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল? সেই সময় আপনি কীভাবে নিজেকে রিভাইব করেছিলে?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: কিছু কিছু মানুষকে আর্থিক দিক থেকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। সেই কারণেই তাদের চিন্তা বেড়ে গিয়েছিল। আমি সব সময় একটা কথা বিশ্বাস করতাম যে এই সময়টা শেষ হবে। তারপর আবার নতুন আলোটা আমরা দেখতে পাবো। সেটাই এখন হয়েছে।
প্র: আপনার লাদাখ যাওয়ার প্ল্যান কী সফল হয়েছে?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: হ্যাঁ, কিন্তু এখনও লাদাখের অনেক কিছু দেখা বাকি রয়েছে।
প্র: 'কার্টুন'-এ আপনাকে একটা অন্য রকমের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে। এই কাজ নিয়ে কোনও স্মৃতি থাকলে সেটা শেয়ার করো।
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: আমাকে সিরিজের পরিচালক সৌরভ চক্রবর্তী বলেছিল 'কার্টুন'-এ আমার কাজ করা কথা ছিল না। কারণ তার আগে আমি 'বরবাদ' করেছিলাম যেখানে আমাকে সম্পূর্ণ অন্য একটি চরিত্রে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তাও যে সৌরভ আমাকে 'কার্টুন'-এ কাজ করার সুযোগ দিয়েছিল। সেই জন্য ওকে কৃতজ্ঞতা জানাই।
প্র: আপনার অভিনীত প্রতিটা চরিত্রর একটার সঙ্গে অন্যটার মিল নেই। প্রত্যেকটা চরিত্রের জন্য নিজেকে গ্ৰুম করেন কীভাবে?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: এই কাজে থিয়েটারে যা শিখেছিলাম তা আমাকে অনেকটা সাহায্য করে। থিয়েটারে আমাদের শেখানো হয়েছিল কোনও চরিত্রে অভিনয় করতে হলে আগে সেই চরিত্রটির সম্পর্কে জানতে হবে। 'বাবা বেবিও' ছবিতে আমি এমনি একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। যেটা একটু আলাদা অন্য চরিত্রগুলোর থেকে। ছবিতে আমার চরিত্রটি যে একটি গে ছিল সেটা প্রথমে কেউ ধরতেই পারেনি। একদম শেষে সবাই সেটা জানতে পেরেছে।
প্র: মার্শল আর্টের প্র্যাকটিস কি এখনও করছেন?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: না, অনেক দিন বন্ধ আছে। আবার শুরু করার ইচ্ছা রয়েছে।
প্র: মেগা সিরিয়াল না সিনেমা কোনটা বেশি এনজয় করেন?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: দুটোই এনজয় করি। মেগা সিরিয়ালের একটা অদ্ভুত রিচ আছে। আমি মেগা সিরিয়াল না করলে সেটা বলতে পারতাম না। আর অন্যদিকে সিনেমার একটা আলাদা ব্যাপ্তি রয়েছে।
প্র: 'ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি'তে আপনার চরিত্রটা ছাড়া অন্য কোন চরিত্রে অভিনয় করার ইচ্ছা ছিল?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: ফেলুদা।
প্র: সব অভিনেতার একটা ড্রিম ক্যারেক্টার থাকে। আপনার ড্রিম ক্যারেক্টার কী?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: 'অভিযান' ছবির চরিত্রটি। আর 'ঝিন্দের বন্দী' ছবির সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিনীত চরিত্রটি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করার স্বপ্ন আমার বরাবরই ছিল কিন্তু আমার সেই স্বপ্ন তো পূরণ হল না।
প্র: এই মুহূর্তে কোন কোন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: আমি সৃজিতদা'র সঙ্গে, অনীকদা'র সঙ্গে, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করতে চাই। এছাড়াও অন্যদের সঙ্গেও কাজ করতে চাই।
প্র: এই সময়ের আপনার প্রিয় পরিচালক কে?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: ডেফিনেটলি সৌরভ চক্রবর্তী।
প্র: এখনও পর্যন্ত আপনার অভিনীত সবচেয়ে পছন্দের তিনটি চরিত্র কী কী?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: 'কার্টুন', 'বাবা বেবিও' ও 'বরবাদ' ছবির চরিত্রটা।
প্র: এখন যারা অভিনয়টাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাইছে তাদের কীভাবে এগিয়ে চলার পরামর্শ দেবেন?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: শট টার্ম কিছু হয় না। নিজের কাজটাকে নিয়ে বাঁচতে হবে, কাজটাকে ভালোবাসতে হবে। আর অবশ্যই থিয়েটার করতে হবে।
এবার র্যাপিড ফায়ার রাউন্ডে অভিনেতা মৈনাক বন্দোপাধ্যায়।
প্র: উত্তম কুমার না সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: দুজনেই।
প্র: উৎপল দত্ত না তুলসী চক্রবর্তী?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: আমি আবার বলব দুজনেই। এটা নিয়ে তুলনা হয় না।
প্র: সৃজিত মুখোপাধ্যায় না কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: দুজনেই।
প্র: অটোগ্ৰাফ না সেলফি কোনটা বেশি পছন্দ?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: অটোগ্ৰাফ।
প্র: প্ল্যানচেট করলে কাকে ডাকবে?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: কাউকেই না।
প্র: বাংলার প্রিয় নায়িকা?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: সুচিত্রা সেন।
প্র: সহধর্মিণীর সঙ্গে লং ড্রাইভ যাওয়ার সময়ে প্লে লিস্টে কী কী গান রাখতে চাও?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: আর ডি বর্মন, কিশোর কুমারের কিছু গান আর ইংলিশ কিছু রেট্রো থাকবে।
প্র: আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে কী প্রশ্ন করবেন?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: নিজের পিআর কীভাবে বাড়ানো যায় সেটা জিজ্ঞাসা করব।
প্র: নিজের লাভ স্টোরিকে যদি কোনও নাম দিতে বলা হয় তাহলে কী দেবেন?
মৈনাক বন্দোপাধ্যায়: সফর।