পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ছবি ‘কাবেরী অন্তর্ধান’ উঠে এসেছে সত্তরের দশকে বাংলার উত্তাল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। সেই সময় বহু মানুষ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যেই একজন কাবেরী ভট্টাচার্য। কলকাতায় যে নিখোঁজ কাবেরীর পোস্টার দেখা গিয়েছিল সেই হলেন 'কাবেরী অন্তর্ধান' ছবির কাবেরী ভট্টাচার্য। জিয়ো বাংলার ‘টলিকথা’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় ছবির জার্নির গল্প শেয়ার করলেন
প্র: 'কাবেরী অন্তর্ধান' নিয়ে কথা হচ্ছে যখন তখন ছবির প্রচারের কথাও উঠবেই। এক সময় গোটা শহরে কাবেরী ভট্টাচার্যের নিখোঁজ হওয়ার পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছিল। এরকম প্রচার আমরা অন্য কোনও ছবির জন্য দেখিনি। এই নিয়ে কী বলবেন আপনারা?
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়: আসলে আগে 'কাবেরী অন্তর্ধান' তৈরিও হয়নি। খুব ছোট সাইজের করে একটা পোস্টার হয়েছিল যেখানে লেখা ছিল, ১৯৭৫ সালে কাবেরী ভট্টাচার্য নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন কেউ খোঁজ পেলে জানাবেন। এই বিষয়ে যা কৌতুহল রয়েছে তা জানতে ২০ শে জানুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে যেতে হবে।
প্র: এটা সুরিন্দর ফিল্মস আর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের হ্যাট্রিক ছবি। এর আগে সুরিন্দর ফিল্মসের দুটি ছবিতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। কী বলবেন এই বিষয়ে নিয়ে?
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়: এটা আমাদের তিন নম্বর ছবি। 'দৃষ্টিকোণ' বিরাট সাফল্য পায়। তারপর 'জেষ্ঠপুত্র' আপনারা জানেন কত সফল ছবি। আমার ধারণা এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমার হাতে গোনা কয়েকটা থ্রিলার ছবি রয়েছে। তার মধ্যে এটা অন্যতম। কিন্তু যেহেতু এটা পরে বানিয়েছি তাই আমার মনে হয় আমি পরিচালক হিসেবে এই ছবি জন্য অনেক বেশি পরিণত।
প্র: প্রত্যেকটা চরিত্র আমরা ট্রেলারে দেখেছি। তাই চূর্ণীদি আপনার চরিত্রটা নিয়ে একটু বলুন।
চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়: খুব রহস্যময়ী। তাই প্রত্যেক চরিত্রের উপর এই রহস্যটাকে ধরে রাখার দায়িত্ব রয়েছে। আমার চরিত্রটা একটা সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন মহিলার। যাকে কাবেরী নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ নানা রকম প্রশ্ন করেন। কিন্তু তিনি কেন প্রশ্নের উত্তর দিতে চাইছেন না সেটা ছবি দেখলে দর্শক বুঝতে পারবে।
প্র: এখানে বুম্বাদাকে সম্পূর্ণ একটি ভিন্ন চরিত্রে দেখা যাচ্ছে। তিনি এই চরিত্রের জন্য নিজেকে তৈরি করতে বেশ কিছু মাস সময় নিয়েছেন। দর্শকদের কী বলবেন এই নিয়ে?
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়: সব চরিত্রের ক্ষেত্রেই তৈরি হতে সময় লাগে। আর যেহেতু এই চরিত্রের জন্য চুল-দাড়ি বড় করেছেন তিনি। তাই একটু অন্যরকমের লাগছে। এই কারণে বহুদিন কোনও ছবিতে কাজ করেননি তিনি। এটাই ওঁর বৈশিষ্ট্য। যার জন্য এখনও তিনি নিজের জায়গা অটুট রাখতে পেরেছেন। প্রায় ৩৫০-৪০০ ছবিতে অভিনয় করার পরে আজও তিনি খুব বাধ্য। এটাই তাঁর নিষ্ঠা। অত্যন্ত বাধ্য ছাত্রের মতো তিনি পরিচালকের কথা শুনে অভিনয় করে গিয়েছেন।
প্র: সত্তর দশকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক প্রেমের গল্প। এটা পুরোটাই উত্তর বঙ্গে শ্যুটিং হয়েছে। অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়: সাংঘাতিক একটা নস্টালজিক অভিজ্ঞতা। দুটো কারণ। যেহেতু উত্তরবঙ্গে আমি বড় হয়েছি। আর কৌশিক নিজেও পাহাড় খুব ভালো বাসে। তাই শ্যুটিং থেকে ফিরে আসার পর খুব মনে পড়েছে শ্যুটিং সময়কার ঘটনাগুলো।
প্র: এখানে কাবেরী অর্থাৎ শ্রাবন্তী চরিত্রটাকে ঘিরেই রহস্য তৈরি হয়। কিন্তু আপনার চরিত্রটা কেমন? অভিনয় আর পরিচালনা এক সঙ্গে করার অভিজ্ঞতা কেমন?
কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়: আমার খুব ভাল লাগে। আমি নিজের ছবিতে অভিনয় করি মানে এমনটা নয় যে পারিশ্রমিক নিই। দর্শকরা হয়তো জানেন না আমি এতদিন যা যা ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছি, তার জন্য কোনও পারিশ্রমিক নিই না। এতে প্রযোজকের লাভ হয়েছে। একজন ভাল অভিনেতাকে নিতে হত আমার করা চরিত্রগুলো করার জন্য। কিন্তু আমি করে দিয়েছি বলে তাদের অন্য কাউকে নিতে হয়নি। তার জন্য একটা বিরাট টাকা বেঁচে যায়।
প্র: লকডাউনের পর অনেক কিছু পেরিয়ে এই ছবি মুক্তি পাচ্ছে। কী বলবেন দর্শকদের?
চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়: আমাদের ছবির শ্যুটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এমন তিনজন এখন আর নেই। তাদের তিনজনকেই কোভিডের কারণে আমরা হারিয়েছি। কাবেরী অন্তর্ধান বললেই আমার তাদের কথা মনে পড়ে।