দর্শকদের ‘বাঙালি বাবু’ ইন্দ্রনীল

ছোট থেকেই গান বাজনায় খুব উৎসাহ। বেশ সিরিয়াসভাবেই শুরু করেছিলেন গানের চর্চা তারপর পড়াশুনার সূত্রে কলকাতায় চলে‌ আসা।‌ তবে হারিয়ে যায়নি গান। এই শহরে এসেই বাংলা টেলিভিশনের পর্দার জনপ্রিয় সঙ্গীতানুষ্ঠান 'সারেগামাপায়'-এর মঞ্চে গান গেয়েছেন তিনি। আর সেখান থেকেই পরিচিতি লাভ। দর্শক তাঁকে ‘বাঙালি বাবু’ হিসেবেই চেনেন। বাঙালিবাবুর নাম ইন্দ্রনীল দত্ত।‌ সম্প্রতি জিয়ো বাংলার টলিকথা অনুষ্ঠানে আড্ডা দিতে এসে নিজের জার্নির কথা জানালেন গায়ক ইন্দ্রনীল দত্ত।

প্র: ছোটবেলাটা কেমন কেটেছে?

ইন্দ্রনীল: ছোটবেলাটা আমার একদম গ্ৰামে কেটেছে। আমি বীরভূমের ছেলে। বীরভূমের সিউড়ির কাছে ছোট্ট গ্ৰাম। সেখানে আমাদের বিশাল পরিবার। সেখান থেকেই আমার জার্নিটা শুরু। সেখান থেকে আস্তে আস্তে সিউড়িতে আসা। তারপর এইচ.এস-এর পর আমি কলকাতায় চলে এলাম। কলকাতায় আসার পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। আমি লাকি যে আমার ছোটবেলাটা এতো ভালো একটা পরিবেশে কেটেছে।

প্র: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা। তারপর কখন মনে হয়েছিল যে আপনার জীবনের মূলমন্ত্র হল গানবাজনা?

ইন্দ্রনীল: এটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম যখন, সেই সময় আমি ক্লাস এইটে পড়ি। তখন থেকে খুব বেশি করে গান বাজনায় ইনভলভড হয়ে পড়লাম। গান বাজনা ছাড়া আর কিছু নিয়েই ভাবতাম না আমি। তখন বেশিরভাগ সময় মনে হতো গান শুনি বা দূরদর্শনে যখন বড় বড় শিল্পীদের ইন্টারভিউ দেখাচ্ছে তখন সেই ইন্টারভিউ দেখি। সব মানুষ কিন্তু প্যাশন আর প্রফেশনকে মেলাতে পারে না। আমি খুব ভাগ্যে বিশ্বাসী। যাদের ভাগ্যে থাকে তাঁরাই এটা পারেন।

প্র: আজকাল দিনে ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার চাপ বেড়েছে। যারা খুব ভালো নাচ বা গান করে তাদের পড়াশুনার চাপে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। এটাকে কী আপনি সাপোর্ট করেন?

ইন্দ্রনীল: গান বাজনা, নাচ বা যে কোনও আর্টফর্মের চর্চা কিন্তু এখন বেড়েছে। সেই বিষয়ে গুলো মানুষের সামনে আসছে। যেমন জিয়ো বাংলা একটা এমন প্ল্যাটফর্ম যেখানে নতুনদের কথা বা নেপথ্যে থেকে যারা কাজ করছে তাদের কথা সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। এরকমই আরও কত জায়গা রয়েছে যেখানে নতুনদেরকে তুলে আনছে। তবে ইলেভেন টুয়েলভের পরীক্ষা দেওয়ার আগে অনেকেই গান ছেড়ে দিয়েছে। এই ধরনের ঘটনা দেখা যায়। আমার মনে আছে, যখন আমি ক্লাস টেনে পড়ি তখন একজন অঙ্কের শিক্ষক পড়াতে আসতেন। তিনি বাড়িতে তানপুরাটা দেখে বলেছিলেন, "এটা যতক্ষণ তোমার বাড়িতে আছে ততদিন তুমি পাশ করতে পারবে না।" তখন আমি খুব আপসেট হয়েছিলাম। তাই তানপুরাটা আমার কাকুর বাড়িতে রেখে এসেছিলাম। দুপুরবেলা রেওয়াজ করতে যেতাম কাকুর বাড়িতে। আসলে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে এটা না ছাড়লে আমি মাধ্যমিক পাশ করতে পারব না। কিন্তু একবার ছেড়ে দিলে সেটাকে আবার রি-ক্যাচ করা খুব মুশকিলের কাজ।

প্র: 'মহাপীঠ তারাপীঠ' খুব জনপ্রিয় একটা সিরিয়াল। সেখানে 'বামাক্ষ্যাপা'র কন্ঠে সবাই আপনার গাওয়া গানগুলো শুনেছে। সেই অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?

ইন্দ্রনীল: এখনও পর্যন্ত যতগুলো কাজ করেছি তার মধ্যে 'মহাপীঠ তারাপীঠ'-এর কাজটা আমার মনের খুব একটা সফট কর্নার। একটা শো করে আমি ফিরছিলাম, যখন তারাপীঠ রোড ক্রশ করছি ঠিক তখন আমার কাছে দেবজিৎদার ফোন আসে। তিনি বললেন যে আমাকে বামাক্ষ্যাপার চরিত্রের গানগুলোই গাইতে হবে। কিন্তু সেই সময় তারাপীঠ রোড ক্রশ করার ব্যাপারটা সত্যিই খুব কাকতালীয় ছিল। আমি চেয়ে ছিলাম গানগুলো যেন সবাই এক সঙ্গে শুনতে পারে। তাই জুক বক্স আকারে আমার গানগুলোকে রিলিজ করেছিলাম। 'মহাপীঠ তারাপীঠ' এমনিতেই একটা পপুলার মেগা ছিল। 'মহাপীঠ তারাপীঠ' কিন্তু বহুদিন থেকে যাবে মানুষের মনে।

প্র: 'রানী রাসমণি' ধারাবাহিকেও আপনাকে দেখা গিয়েছিল। আপনার গান শোনা গিয়েছিল। সেটা নিয়ে কী বলবেন?

ইন্দ্রনীল: আমি প্রথম অভিনয় করেছিলাম কিন্তু 'রানী রাসমণি'তে।

প্র: এই অভিনয়ের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?

ইন্দ্রনীল: একদিন সকালবেলায় উপালিদি'র স্টুডিয়োতে গিয়েছিলাম গান রেকর্ড করতে। নিধুবাবুর এক শিষ্যের চরিত্রের জন্য সেই গান রেকর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু রেকর্ড করার সময় উপালিদি বললেন তোর মতোই এই চরিত্রটা। গানটার রেকর্ডিং-এর পর দিদি বললেন, ‘তোর একটা ছবি তুলে পাঠিয়েছি ওদেরকে। ওরা বলছে তোকে অভিনয় করতে’। গান বাজনা না জানা থাকলে গানটাতে লিপ দেওয়াটা খুবই কঠিন হতো। তবে সেই কাজের সুবাদেই প্রথম ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োতে গিয়েছিলাম আমি। তারপর অনেক বার গিয়েছে।

প্র: এরপর আপনার অভিনয় আমরা কোথায় কোথায় দেখতে পাব?

ইন্দ্রনীল: ২৩ জুন আমার নতুন একটা ছবি আসছে। যার নাম 'অচেনা উত্তম'। সেই ছবির একটা ছোট্ট অংশে আমি অভিনয় করেছি। সেখানেই আপনারা সকলে আমাকে দেখতে পাবেন।

প্র: আপনার গান শুনে কতজন ক্রাশ খেয়েছে?

ইন্দ্রনীল: ক্রাশ খেয়ে আমাকে এসে বলেছে এমন সাহস খুব কম মানুষের হয়। হ্যাঁ, চোখ দেখে হয়তো বোঝা যায়। তবে টেক্সট মেসেজে অনেকে বলেছে।

প্র: আপনি প্রথম ক্রাশ কবে খেয়েছিলেন?

ইন্দ্রনীল: ক্লাস সেভেন, এইটে যখন পড়ি তখন খেয়েছিলাম। মিঠু মুখোপাধ্যায়কে দেখে ক্রাশ খেয়ে ছিলাম।

প্র: 'সারেগামাপা' যেটা থেকে আমারা আপনাকে চিনি। সেখানে তোমার ফানি মোমেন্ট কী ছিল?

ইন্দ্রনীল: 'সারেগামাপা'র জার্নিটা খুবই একটা গোল্ডেন মেমোরি। আমরা প্রায় সাত মাস ফ্যামেলির মতোই ছিলাম। একবার সুদয়দাকে ভয় দেখানোর প্ল্যান করেছিলাম আমরা। ওঁর ঘরে সবাই পেত্নি সেজে লুকিয়ে ছিল। ওঁকে ভয় দেখানোর পর সবাই ‘হ্যাপি বার্থডে’ বলেছিল। এরকমই ছোট ছোট অনেক ঘটনা ঘটেছে। একবার যিশুদা আমাকে প্রশ্ন করেছিল ‘ওঁর শাশুড়ির নাম কী?’। আমি বলতে পারিনি বলে পুরো ফ্লোরে আমার ধুতি ধরে ঘুরিয়েছিল।

প্র: যখন 'সারেগামাপা'-এর সিজন শেষ হল। সবাই বাড়ি ফিরে এল। তখন কেমন লাগছিল?

ইন্দ্রনীল: খুব প্যাথেটিক একটা সময়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিযোগঈ এলেমিনেট হয়েছে। কিন্তু আমরা তো শেষ পর্যন্ত ছিলাম। আমাদের স্কুলে ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় যেমন হয়। ঠিক তেমনি হয়েছিল। খুব আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিলাম।

প্র: সেটে শানুদা কী নামে ডাকতেন আপনাকে?

ইন্দ্রনীল: শুধু শানুদা না সবাই শুটিং ফ্লোরে আমার নাম দিয়েছিল ‘বাঙালি বাবু’। কারণ গান গাওয়ার সময় আমার লুকটা ছিল ধুতি পাঞ্জাবি পরা। আর সেটার জন্য আমাকে মধুশ্রীদি, পালকজী সকলেই বাঙালি বাবু বলে ডাকতেন। এখনও আমাকে এই নামে ডাকা হয়। এটা একটা ট্যাগ লাইন হয়ে গিয়েছিল আমার নামের সঙ্গে।

এবার তাড়াতাড়ি কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আপনাকে।

প্র: পাহাড় না সমুদ্র?

ইন্দ্রনীল: পাহাড়।

প্র: গান না অভিনয়?

ইন্দ্রনীল: গান।

প্র: ইন্দ্রনীল না রনি?

ইন্দ্রনীল: ইন্দ্রনীল।

প্র: উইয়ার্ডেস্ট ফুড কম্বো?

ইন্দ্রনীল: ডিমের ঝোল দিয়ে মুড়ি।

প্র: ড্রিম গার্ল?

ইন্দ্রনীল: সুচিত্রা সেন।

প্র: সেলিব্রেটি ক্রাশ?

ইন্দ্রনীল: আলিয়া ভট্ট।

প্র:  আলিয়াকে সামনে পেলে কী গান ডেডিকেট করবেন?

ইন্দ্রনীল: সামনে পেলে ‘রিমঝিম গিরে শাওন’ ডেডিকেট করব

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...