‘ম্যাকবেথ’ অবলম্বনে আসছে পরিচালক রাজর্ষি দে'র 'মায়া'

উইলিয়াম শেক্সপিয়রের 'ম্যাকবেথ' নিয়ে বিশ্বজুড়ে বহু কাজ হয়েছে। মঞ্চ ও পর্দা দুই মাধ্যমেই। এবার 'ম্যাকবেথ' -এর উপর সিনেমা নির্মাণ করেছেন পরিচালক রাজর্ষি দে। ছবির নাম 'মায়া'। 'আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা'র পর আরও একবার প্রায় ১৯ জন জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে এই ছবি নির্মাণ করছেন তিনি। রশিদ মিথিলা, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, তনুশ্রী চক্রবর্তী মতো পরিচিত মুখ রয়েছে এই ছবিতে। টলি কথার আড্ডায় ‘মায়া’ নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেন ছবির পরিচালক রাজর্ষি দে ও এই ছবির অন্যতম অভিনেত্রী রাতশ্রী দত্ত।

প্র: উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ অবলম্বনে লেখা হয়েছে এই ছবির গল্প। এই ভাবনাটা এলো কীভাবে?

রাজর্ষি দে: আমি ইংলিশ লিটরেচার নিয়ে পড়াশোনা করেছি, তাই আগেই ম্যাকবেথ পড়েছিলাম। এছাড়াও মঞ্চে অনেক বার ম্যাকবেথ দেখেছি। হিন্দিতে বিশাল ভরদ্বাজের ম্যাকবেথ দেখেছি। যার নাম ছিল 'মকবুল'। সাউথ ইন্ডিয়ান একটা ম্যাকবেথ দেখেছিলাম যেখানে কুনাল কাপুর ম্যাকবেথের চরিত্রটা প্লে করেছিলেন। এছাড়াও মালায়লাম ভাষায় একটা ম্যাকবেথ দেখেছিলাম যেটার নাম ছিল 'জোজি'। আমার এই ছবিতেও অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে কাজ করেছি। তবে এখানে ম্যাকবেথ হিরো নয়, লেডি ম্যাকবেথ ও তার অল্টার ইগো গল্পের মূল কেন্দ্রবিন্দু। আমার ছবিতে যারা মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারা প্রত্যেকেই নারী। এই জন্য আমি গর্বিত।

প্র: রাতশ্রীদি এই ছবিতে তোমার চরিত্রের নাম কী?

রাতশ্রী দত্ত: আমার চরিত্রের নাম হল ইয়াসমিন। রাজর্ষিদা প্রথম যখন আমাকে ডাকে এই ছবিতে অভিনয় করার জন্য। তখন আমি জানতে পেরেছিলাম এই ছবিতে কমলেশ্বরদা, মিথিলাদি, তনুশ্রীদি রয়েছেন, যাদের সঙ্গে কাজ করবার ইচ্ছা ছিল আমার বহুদিন ধরেই। তাই কোনও ভাবেই এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি। রাজর্ষিদা'র ছবিতে অনেক চরিত্রে থাকে ঠিকই কিন্তু সেই সকল চরিত্রেরই একটা গুরুত্ব থাকে। এই ছবিতে আমি প্রথমবার কোনও লেসবিয়ান চরিত্রে অভিনয় করলাম আমি। এখানে চরিত্রটি ফুলে মতো কিন্তু ভীষণ রেবেল।

প্র: এই ছবি নাম 'মায়া' কেন রাখা হয়েছে?

রাজর্ষি দে: ছবি নাম প্রথমে 'মায়া' ছিল না। যেহেতু ম্যাকবেথের গল্প অবলম্বনে নির্মিত তাই ছবিতে ম্যাকবেথের যে নাম রাখা হয়েছে মাইকেল, সেটাই ছবির নাম হবে। কিন্তু মাইকেল নামে একটা ছবি কিছুদিন আগেই হয়েছে। তাই অনেকগুলো নাম ভাবার পর 'মায়া' নাম রাখা হয়েছে। এখানে 'মায়া' হল এই ছবিতে যত জন নারীকে দেখা গিয়েছে তাদের অল্টার ইগো।

প্র: তুমি জানালে রাজর্ষি দা'র ছবিতে অভিনয় করা ইচ্ছা তোমার অনেক আগে থেকেই ছিল। তাই যখন কাজ করার সুযোগ পেলে ও জানতে পারলে ১৯জন অভিনেতার সঙ্গে তুমি অভিনয় করবে। তখন তোমার কেমন লেগেছিল?

রাজর্ষি দে: অনেকে হয়তো জানেন না, যে রাতশ্রী একজন অসম্ভব ট্রেইন্ড অভিনেত্রী। কলকাতায় যে অ্যাক্টিং ওয়ার্কশপ হয় তার মধ্যে অন্যতম হল ক্লাস অ্যাক্ট ওয়ার্কশপ। এই ওয়ার্কশপের অনেকগুলো ধাপ আছে সেই সবকটা ধাপ রাতশ্রী ক্রস করে এসেছে। আমি জানিনা ইন্ডাস্ট্রিতে কেন ট্রেইন্ড অ্যাক্টররা কম জায়গা পান। আমি ওর ছবি অনেকদিন আগেই দেখেছি তবে প্রথম ওর কাজ করলাম। বাংলাদেশে রাতশ্রী খুব জনপ্রিয়। ওকে আমি বলেছিলাম টেলিভিশনে কাজ করতে কিন্তু ও সবসময় সিনেমা আর ওয়েব সিরিজেই কাজ করার ইচ্ছা দেখিয়েছে। তাই আমি খুব ব্লেসড যে এমন একজন ট্রেনড অ্যাক্টরের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।

রাতশ্রী দত্ত: আমি প্রথম দিন একটু ভয় পেয়েছিলাম। কারণ যাদের সঙ্গে আমি কাজ করার সুযোগ পেয়েছি তারা সকলেই খুব রিনাউন্ড। কিন্তু যখন লুক সেটে গেলাম তখন থেকেই আমার সব ভয় চলে গেল। তাই এক্সপিরিয়েন্সটা খুব ভালই ছিল আমার।

প্র: ১৯ জন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে কোথায় কোথায় ছবির শুটিং কোথায় কোথায় করা হয়েছিল?

রাজর্ষি দে: 'আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা' ছবির শুটিংয়ের সময় আমরা অনেক মজা করবার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু 'মায়া' যেহেতু একটা থ্রিলারধর্মী ছবি তাই এখানে প্রতিদিন কোনও চ্যালেঞ্জ ফেস করতে হয়েছে অভিনেতাদের। আমরা গঙ্গার ধারে একটা বাড়িতে শ্যুট করেছিলাম, জুট মিলে লেবাররা যেখানে থাকে সেখানে শ্যুট করেছি। এছাড়াও চেতলার কাছে একটা বাড়ি রয়েছে সেখানে শ্যুট করেছি। ইকোপার্ক, নিউটাউনের একটা বিল্ডিংয়ে শ্যুট করেছি। কলকাতার এই সব জায়গাতে শ্যুট করেছি।

প্র: রাতশ্রীদি, এখানে তুমি একজন লেসবিয়ানের চরিত্রে অভিনয় করেছ। এই চরিত্রের জন্য তুমি নিজেকে কীভাবে প্রিপেয়ার করলে?

রাতশ্রী দত্ত: এই চরিত্রটা আমার কাছে প্রথম এসেছে। এই জন্য ধন্যবাদ জানাই রাজর্ষি দা'কে। একজন লেসবিয়ানের জীবনের চলার পথটা তো খুব সহজ নয়। তাই আমি সেটা জানার চেষ্টা করেছি। অনেক কিছু শিখেছি। তাই চরিত্রটার প্রস্তুতির সময় আমি সব থেকে বেশি আনন্দ পেয়েছি।

প্র: আমাদের দর্শকদের জন্য কী বলবে 'মায়া' সিনেমাটা নিয়ে?

রাজর্ষি দে: দর্শকদের বলবো শেক্সপিয়ারের লেখা নিয়ে বাংলায় কাজ হয়েছে। কিন্তু ম্যাকবেথ নিয়ে বাংলা ভাষায় সিনেমার জন্য এটা প্রথম কাজ। আগে ওয়েব সিরিজ করেছিল অনির্বাণ। নাম হল 'মন্দার'। তবে সিনেমার জন্য প্রথমবার বাংলা ভাষায় ম্যাকবেথ হচ্ছে। সব মিলিয়ে একটা দারুণ কাজ হয়েছে। এখন আবার 'হ্যাশট্যাগ বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান' বলে এখন একটা ট্রেন্ড চলছে। কিন্তু শুধু দাঁড়ালেই হবে না, দয়া করে টিকিট কাটুন। আর সিনেমা হলের সিটে বসে পড়ুন। আমি আগে একটা চ্যানেলের সঙ্গে আগে যুক্ত ছিলাম সেখানে একটা প্রোজেক্টের পোস্টারে আমি একজন মহিলাকে দেখিয়েছিলাম যার হাতে বন্দুক ছিল। সেটা দারুণ ফিড ব্যাক পেয়েছিল। তাই আমি আশা করছি এখানে সব মহিলাদের হাতেই বন্দুক রয়েছে। যা আরও ভালো লাগবে।

রাতশ্রী দত্ত: খুব প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের শ্যুটিং হয়েছিল। তাও আমাদের কাজটা খুব সততার সঙ্গে করার চেষ্টা করেছি। তাই ছবি মুক্তির পর আপনারা সকলে দেখতে আসুন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...