সাড়ে চার বছর বয়সে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা গিয়েছিল তাকে। অভিনীত প্রথম ধারাবাহিকের নাম 'দুয়োরানী'। তবে টেলিভিশনের দর্শকদের কাছে আজও ‘জুজু’ নামেই চেনা। পোশাকী নাম অস্মি ঘোষ। সম্প্রতি জিয়ো বাংলার টলিকথায় অস্মি ঘোষ জানালেন টেলিভিশনে তাঁর দিন শুরুর গল্প।
প্র: ছোট থেকেই তুমি অভিনয় করছ। কিন্তু শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
অস্মি: শুরু একদমই প্ল্যানড ওয়েতে হয়নি। আমি ২০১০ সাল থেকে কাজ করা শুরু করেছি। তখন আমার বয়স সাড়ে চার বছর। আমার মা ছোটবেলা থেকে আমাকে নিয়ে খুব অবসেসড থাকতেন। কোথাও কোনও 'গো অ্যাজ ইউ লাইক' হচ্ছে বা জামা-কাপড়ের দোকানে তখন ছোট শিশুদের মডেল থাকত। সেখানে আমি যেতাম মডেল হিসেবে কাজ করার জন্য। এরকমই একটা ম্যাগাজিনের অ্যাড দেখেই মা আমার ছবি পাঠিয়ে ছিল। তারপর সেখান থেকে আমাকে ডাকা হয়। আমাকে 'দুয়োরানী' সিরিয়ালে অভিনয় করার জন্য সিলেক্ট করা হয়েছিল। সেটাই আমার প্রথম কাজ।
প্র: প্রথম যখন ক্যামেরা ফেস করলে তখন কী মনে হয়েছিল?
অস্মি: ক্যামেরা যে ফেস করছি সেটাই বুঝতে পারিনি। প্রথম সিনে শুট করার সময় একটা বাগানে আমাকে পুতুল নিয়ে খেলতে বলা হয়েছিল। আমি বুঝতেই পারিনি যে এটা শুট করা হচ্ছে। অনেক দিন পর যখন চ্যানেলে টেলিকাস্ট হল তখন বুঝলাম যে ওরা আমাকে শুট করছিল। সত্যি বলতে ব্যাপারটা এতটা স্পনটেনিয়াস যার ফলে আমি খুব কনসাস ছিলাম না। তাই চিন্তাও হয়নি।
প্র: তুমি অনেকগুলো চরিত্র করেছ। কিন্তু তার মধ্যে জুজু চরিত্রটা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল। জুজু কেমন ছিল?
অস্মি: জুজু একদমই আমার মতো ছিল। শুধু মানুষ কেন আমি নিজেও জুজু চরিত্রটাকে বেশি গ্ৰহণ করেছি। জুজু একটা বাস্তববাদী মেয়ে সে সবসময় সত্যি কথা বলতে পছন্দ করে। কখনই অন্যায়কে সাপোর্ট করেনি। চরিত্রের সেই প্র্যাক্টিক্যালিটির সঙ্গে আমি রিলেট করতে পারতাম। জুজু আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। অনেক সময় আমার একটা সিন শুট করার পর মনে হয়েছে আমি এটা নিজের জীবনেও করতে পারি।
প্র: 'অন্দরমহল' সিরিয়ালে তুমি অনেক গুণী শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছ। প্রথম যখন সেটে গিয়েছিলে তখন কী টেনশন হয়েছিল?
অস্মি: হ্যাঁ, এটা ডেফিনেটলি। কারণ 'অন্দরমহল'-এ যারা অভিনয় করেছিলেন তাঁরা প্রত্যেকই আমার থেকে প্রায় তিরিশ, চল্লিশ বছরের সিনিয়র। তাই তাদের সঙ্গে স্কিন শেয়ার করাটা খুব একটা সহজ কাজ নয়। শুটিংয়ের সময় আমার মাথায় চলছিল এন.জি দেওয়া যাবে না। তাই ভালো করে সিন পড়ার কথা ভাবছিলাম। আর ওই সিরিয়ালে আমার বাবার চরিত্রে অভিনয়ে করেছিলেন কৌশিকদা। প্রায় সব সিরিয়ালেই রাগী রাগী চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেছি তাকে। তাই আমার মনে হতো বকা খাবো। কিন্তু বাস্তবে একদমই তার উল্টো, খুবই শান্ত ছিলেন কৌশকদা। মানে রাগের এক পার্সেন্টও তার মধ্যে ছিল না। এছাড়াও কলিদির সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।
প্র: এমন কিছু গ্ৰিনরুম ডাইরিজ আমাদের সঙ্গে শেয়ার করো যাতে তুমি মজা পেয়েছ?
অস্মি: আমি, কলিদি আর দেবলীনাদি আমারা তিনজনেই ভয়ঙ্কর হাসির রোগী ছিলাম। অনেক সময় কোনও সিন শুট করার সময় আমরা হাসি শুরু করতাম আর একবার হাসতে শুরু করলে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে হাসতাম। যার ফলে অনেক বকাও খেতে হয়েছে আমাকে।
প্র: তুমি কৌশিকদা, সন্তু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেছ। এই গ্ৰুপ সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল তোমার?
অস্মি: 'অন্দরমহল'-এ যে গ্ৰুপটা পেয়েছিলাম সেটা আমি আর কোথাও পাইনি। একটা ফ্যামিলি বলতে যা বোঝায় সেটা একমাত্র আমি 'অন্দরমহল'-এ পেয়েছিলাম।
প্র: অস্মি বাস্তবে কী রকম?
অস্মি: বাস্তবেও আমি জুজুর চরিত্রটার মতো। আমি প্রাকটিক্যালিটিতে বিশ্বাস করি। আমার নিজের কিছু এথিক্স আর প্রিন্সিপাল রয়েছে যেগুলো আমি নিজের মোর্যালসের উপর ডেভলপ করি। আর আমি সেগুলির মধ্যেই থাকতে পছন্দ করি।
প্র: তুমি নিজেকে একটা শব্দে ডেসক্রাইব করবে কীভাবে?
অস্মি: মিস্ট্রি।
প্র: প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে আপস অ্যান্ড ডাউন রয়েছে। তুমি এটাকে ওভার কাম করেছ কীভাবে? তোমার লাইফটা কী রকম কেটেছে?
অস্মি: লাইফ নিয়ে বললে, বলতে হবে এটা ইজি না। মাত্র সতেরো বছরে যা আমি এক্সপিরিয়েন্স করেছি। সেটা হয়তো অন্য জায়গায় নাও হতে পারত। যার উপর অনেক দায়িত্ব থাকে সে এমনিই ম্যাচিওর হয়ে যায়। কিন্তু আমার মনে হয় আরও একটু দেরি হলেও হতে পারত। তাহলে আমি হয়তো আরও কিছুটা সময় এনজয় করতে পারতাম। আমি অনেক কম বয়সেই অনেকগুলো ভালো চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তবে যখন আমি একটু বড় হলাম তখন আমি বুঝলাম নিজের জায়গাটা ধরে রাখতে গেলে আমার প্রত্যেক দিনই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। কারণ তোমার জায়গা রিপ্লেস করার জন্য একশো জন ওয়েট করছে। তাই প্রত্যেক দিনের এই লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। সময় এমনও এসেছে যে আমার মনে হয়েছে আর হয়তো আমি শুটিং করতে পারবো না। আর হয়তো অভিনয় হবে না। সব কিছু মনে হয় শেষ হয়ে গিয়েছে। তবে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর এই লেসেনগুলো মাথায় রেখেই এগিয়ে চলেছি।
প্র: তুমি অনেক দিন ধরেই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছ। ইদানিং কালে আমরা দেখতে পাই ইন্ডাস্ট্রির নামে অনেক রকম বিজনেস
স্টার্ট আপ হয়েছে যেখানে নিউ কামার্সদের মিস গাইড করা হচ্ছে। তাই তুমি নতুনদের কী উদ্দেশ্যে কী বলতে চাও?
অস্মি: আমার কাছে অনেক বন্ধুরা এসেছে আর আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে যে আমি কত টাকা দিয়েছি অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি তো টাকা দিইনি। তাদেরকে বলা হয়েছে টাকা দিলে লিড রোল দেওয়া হবে। এগুলো সবই স্ক্যাম। কোনও প্রোডাকাশন হাউস শুধুমাত্র তোমার ট্যালেন্টের দৌলতেই তোমাকে কাস্ট করবে।
প্র: মায়ের সাথে কেমন বন্ডিং তোমার?
অস্মি: মায়ের সাথে প্রচন্ডই একটা খুনসুটির সম্পর্ক।
প্র: অস্মি কী ‘ড্যাডিস লিটিল প্রিন্সেস’ নাকি ‘মামাস গার্ল’?
অস্মি: মামাস গার্ল।
প্র: তোমার অভিনীত সবচেয়ে পছন্দের চরিত্র কোনটা?
অস্মি: জুজু।
প্র: শুটিং ফ্লোর বা গ্ৰিনরুমে সব থেকে ফানিয়েস্ট মোমেন্ট যেটা তোমার মনে আছে।
অস্মি: প্রত্যেক দিনের কথাই বলতে হয়। সেটের মধ্যে হাসির জন্য বকা খেতে হতো। পরিচালক মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে এমন যে কতবার হয়েছে।
প্র: তোমার সেলিব্রেটি ক্রাশ কে?
অস্মি: জনাথন বেলি।