কখনও অভিনেতা কখনও মডেল আবার কখনও ফটোগ্ৰাফার। নানারকম পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকার পাশাপাশি শহরের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী প্রিয়া সিনেমা হলের কর্ণধার তিনি। এই শহর তাঁকে এক ডাকে চেনে- ‘অরিজিৎ দত্ত’। ছোটবেলা থেকেই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পরিবার। তাই ফিল্ম দুনিয়া থেকে দূরে রাখতে বোর্ডিং পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মা। তাঁর নিজের জীবনটাও সিনেমার মতোই। জীবনের গল্পে এবার জিয়ো বাংলার টলিকথা অনুষ্ঠানে মুখোমুখি অরিজিৎ দত্ত।
প্র: ২০২০'তে অতিমারী পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর প্রিয়া সিনেমা হলে দর্শকরা আসতে পারছিলেন না। সেই সময়টা কেমন ছিল ?
অরিজিৎ দত্ত: প্রিয়া সিনেমা হল তার আগেও বন্ধ ছিল প্রায় সাত মাসের জন্য। শুধুমাত্র একটা দোকানে আগুন লেগে গিয়েছিল। তাই আমরা আগে থেকেই এই প্রবলেম ফেস করছি। সেই কারণেই আমরা হল বন্ধ করার ব্যাপারটায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হয়েছে। অনেকদিন ধরেই মিডিয়া তরফ থেকে একটা চেষ্টা করা হচ্ছিল ওটিটি আর সিনেমার মধ্যে একটা ব্যবধান তৈরি করার। একটা কথা ঠিক যে ওটিটি অনেক নতুনদের কাজের সুযোগ করে দিচ্ছিল। সব সিনেমা মোবাইলে দেখতে ভালো লাগবে না কিছু ছবি বিগ স্ক্রিনেই বেশি ভালো লাগে। তাই সাউথ ইন্ডিয়ান ছবিগুলো একটি বড় ফরম্যাটে তৈরি করা হচ্ছে। ছবিগুলো ভালোই চলছে। এবার বলিউডকেও নিজেদের ফরমেট চেঞ্জ করতে হবে।
প্র: তাহলে কী ওটিটিকে লাইম লাইটে আনার জন্য আপনার হল সাত মাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল?
অরিজিৎ দত্ত: না না ওটিটির সঙ্গে ওটার কোনও সম্পর্ক নেই। কোভিড পরিস্থিতির সময় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম অনেক গ্ৰো করেছিল। আসলে সেই সময়ে সকলেই বাড়িতে বসে ছবি দেখতে পাচ্ছিল তাই আর হলে যেতে হচ্ছিল না। আর সিনেমার ক্ষেত্রে এখনও অনেক পরিচালক বোঝেনি যে সিনেমা বানানোই সব নয়। মার্কেটিং, পিআর এই সবকিছু দরকার।
প্র: একজন জনপ্রিয় পরিচালক বলেছেন অতিমারী পরিস্থিতির সময় মানুষ বাড়িতে বসেই ছবি দেখতে শুরু করেছিলেন। এখনও তারা জানেন সব ছবি ওটিটিতে মুক্তি পাবে। তাই আর হলে আসেন না। আপনার কী মত এই বিষয়ে?
অরিজিৎ দত্ত: শুধু ওটিটি কেন? তার আগে স্যাটেলাইট চ্যানেল ছিল কিন্তু তাও মানুষ হলে ছবি দেখতে আসতেন। শুধু কনটেন্ট কোয়ালিটির জন্য ওটিটিতে ছবি দেখছে সবাই। তা বলে হলে ছবি চলছে এমন তো নয়। তাই ছবি যদি ভালো হয় তাহলে মানুষ বেশি টাকা খরচা করেও দেখবে।
প্র: এখন একটা মুভমেন্ট চলছে যে ‘বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান’। কারণ বাংলা সিনেমা হল পাচ্ছে না। কী বিষয় আপনি কী বলবেন?
অরিজিৎ দত্ত: প্রথমে প্রিয়া, অজন্তা , মিত্রর মতো কিছু হলে আমরা বাংলা ছবি চালানো শুরু করেছিলাম। বাকিরা কেউ চালাতো না। তারপর যখন গ্ৰো করতে শুরু করল তখন সব হলেই বাংলা সিনেমা দেখানো শুরু হয়েছিল। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল আমাদের ব্যালেন্স করতে হবে হিন্দি ও বাংলা ছবির মধ্যে। নিজেদের মধ্যে অ্যাডজাস্ট করে চলতে হবে। কিন্তু তাই তো হবে না। ছবি তৈরির পর আর্টিস্ট ও টেকনিশিয়ান সকলে টাকা পেয়ে যান। কিন্তু হল মালিকরা পান না। তাই শুধু তারা কেন লোকসান করবে!
প্র: আমরা শুনেছি অনেক হল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রিয়াকে কী এমন অবস্থা ফেস করতে হয়েছে?
অরিজিৎ দত্ত: সত্যি কথা বলতে যাদের অন্য ইনকাম রয়েছে তারাই এখন হলগুলো চালিয়ে নিয়ে যেতে পারছে। কারণ এখান থেকে ইনকাম নেই বললেই চলে। তবে কতদিন এভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে বলতে পারছি না।
প্র: 'পূর্ণিমা পিকচার্স'-এর প্রযোজনায় 'গুপী গাইন-বাঘা বাইন', 'প্রতিদ্বন্দ্বী'র মতো ছবি এসেছে। এই জার্নিটা আমাদের সঙ্গে একটু শেয়ার করুন।
অরিজিৎ দত্ত: সেই সময় আমাকে মা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। তাই জন্য আমাকে বোর্ডিং চলে যেতে হয়েছিল। 'গুপি গাইন-বাঘা বাইন' করার কথা ছিল আর ডি বনসলের। কিন্তু উনি করেননি।
প্র: বোর্ডিং-এ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে সরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু কেন?
অরিজিৎ দত্ত: কেন জানি না। কিন্তু বোর্ডিং-এ গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমাদের বোর্ডিং-এর পরিবেশটা সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। আমাদের প্রিন্সিপাল ছিলেন ব্রিটিশ। এছাড়াও সারা বিশ্ব থেকে অনেকে এখানে পড়তে আসতেন। সেখানে আমাদের সব ধরনের খেলা খেলতে হত। সেই থেকেই খেলাধূলার প্রতি একটা ইচ্ছা জন্মেছিল। তারপর যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর কিছু দিন হকি খেলেছিলাম। কিছুদিন ক্রিকেটও খেলেছিলাম। কিন্তু কন্টিনিউ করা হয়নি। তবে রোয়িংটা করেছি মন দিয়ে।
প্র: জীবনে কোন নীতি আপনাকে এখনও এতো হ্যান্ডসাম করে রেখেছে? আপনি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজ করেছেন? সেই নিয়ে কী বলবেন?
অরিজিৎ দত্ত: ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতেও বাই চান্স কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। গৌরব শর্মা একবার একটা ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করেছিল কলকাতায়। সেখানে আমাকে 'ফেস অফ দ্য ফ্যাশন উইক' করার হয়েছিল। সেই ফ্যাশন শোয়ের জন্য আমাকে র্যাম্প ওয়ার্ক করতে হয়েছিল। তারপর এতবছর ধরে চলছে। আমি একটা কথা বিশ্বাস করি যে তোমার পরিবার ও তোমার বন্ধুরা কী বলছে সেটা না শুনে তোমার মন যেটা চায় সেটাই করা উচিত।