কোন কোন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন ‘দাদাজী’ অভিনেতা অভিজিৎ লাহিড়ী

নিজের জন্মভূমি বাংলাতেই অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল অভিনেতা অভিজিৎ লাহিড়ীর। হিন্দি ধারাবাহিক 'ইয়ে রিস্তা কেয়া কেহেলাতা হ্যায়'-তে দাদাজি'র চরিত্রে অভিনয় করার সুবাদে তিনি আজও ‘দাদাজী’ নামে পরিচিত। অভিনেতা অভিজিৎ লাহিড়ী ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা থেকে স্নাতক প্রথম বাঙালি অভিনেতা। অভিনয় জীবনের সূচনার সময় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে সেই গল্প টলিকথার আড্ডায় শেয়ার করলেন অভিনেতা।

প্র: জানুয়ারি ২০২০ সালে কলকাতায় এসেছিলেন। তারপর আবার এখন এলেন। আবার নিজের শহরে ফিরে কেমন লাগছে?

অভিজিৎ লাহিড়ী: আমার জন্য এটা সত্যিই অনেক বড় ব্যাপার। কারণ আগরপাড়ায় আমি বড় হয়েছি। আজ আমি যেখানে পৌঁছেছি সেটা আগরপাড়ার দৌলতেই। তাই এখানের যে লাইফটা আছে সেটা আমি বম্বেতে খুব মিস করি।

প্র: কলকাতায় প্রথম কোন স্ট্রিট ফুড বা মিষ্টির কথা আগে মাথায় আসে?

অভিজিৎ লাহিড়ী: নলেন গুড়ের সন্দেশ। আর এখানকার ছোট মাছের স্বাদ আমি খুব মিস করি।

প্র: আপনি প্রথম বাঙালি অভিনেতা যিনি 'এনএসডি' থেকে পাস আউট হয়েছেন। ১৯৮০ সালে আপনি পাস আউট হয়েছিলেন। আপনার অভিনয় জীবনের জার্নি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করুন।

অভিজিৎ লাহিড়ী: আমার ১৯৮০ সাল থেকে অ্যাক্টিং কেরিয়ার শুরু হয়নি। ১৯৭২ সালে শুরু হয়েছে। আমি হাই সেকেন্ডারি পাস করার পর মিউজিক নিয়ে ছয় বছর পড়াশোনা করেছিলাম। তারপর আমি নজরুল গীতি নিয়ে স্পেশালাইজড করেছিলাম। কিন্তু একটা জিনিস নিয়ে আমার মনের মধ্যে খটকা লাগত যে গান, নাচ এই সব কিছু একা একা করা যায়। কিন্তু সবাইকে নিয়ে কাজ করার একমাত্র উপায় হল অভিনয়। তাই আমি বাবাকে বললাম যে অভিনয় শিখব। তখন বললেন, করো। কিন্তু হাই সেকেন্ডারি পাস করেছ এরপর গ্ৰ্যাজুয়েশন কমপ্লিট করতে হবে। তখন দক্ষিণেশ্বরের একটা থিয়েটার গ্ৰুপে আমি অভিনয় করা শুরু করেছিলাম। পরবর্তীকালে আমি ‘ইন্সটিটিউট অফ ইন্ডিয়ান থিয়েটার’-এ দু'বছর অ্যাক্টিংয়ের একটা কোর্স করেছিলাম। তারপর আমি ন্যাশনাল স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করেছিলাম। আমার সঙ্গে এই স্কলারশিপের লিস্টে নাম ছিল রমা প্রসাদেরও। কিন্তু তিনি যেহেতু শম্ভু মিত্রের থেকে ট্রেনিং নিতে চেয়েছিলেন তাই তাকে কলকাতায় রাখা হল। আর আমকে সিলেক্ট করা হল 'এনএসডি'র জন্য। সেখানে গিয়ে আমি দেশের প্রায় সব প্রদেশের মানুষকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম। 'এনএসডি' থেকে কলকাতায় ফিরে এসে আমি প্রচন্ড স্ট্রাগল করেছিলাম। কলকাতায় সেই সময় শুধু গ্ৰুপ থিয়েটার ছিল আর কমার্শিয়াল থিয়েটার ছাড়া কিছু ছিল না। আমার দুটোর একটাও পছন্দ হয়নি। আমি নিজেই একটা থিয়েটার গ্ৰুপ তৈরি করেছিলাম তখন। এই প্রফেশনাল থিয়েটার করতে গিয়েই আমার সেই সময় প্রায় দেড় লাখ টাকা চলে গিয়েছিল আমার হাত থেকে। সেই টাকা তোলার জন্য আমি পাঁচ বছর যাত্রা করেছিলাম। আমি যাত্রা করতে গিয়েই একজন মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো লেখকের সঙ্গে দেখা কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। যার নাম ছিল ভৈরব বন্দোপাধ্যায়। তিনি একদিনে ১০টা যাত্রার পালা লিখে দিতে পারতেন। তার লেখা একটি সুপারহিট যাত্রায় আমি কাজও করেছিলাম। যাত্রাটার নাম ছিল 'ঠিকানা পশ্চিমবঙ্গ'। সেই বছরেই আমি প্রথম 'উত্তম কুমার পুরস্কার' পেয়েছিলাম। তারপর ১৯৮৬ সালে আমি টেলিভিশনে কাজ করা শুরু করেছিলাম।

প্র: বিশেষ করে 'ইয়ে রিস্তা কেয়া কেহেলাতা হ্যায়'-এর দাদাজী'র চরিত্রটা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল আপনার?

অভিজিৎ লাহিড়ী: তবে এই ধারাবাহিকের আগে আমি 'বালিকা বধূ' ধারাবাহিকেও অভিনয় করেছিলাম। সেটাও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। কিন্তু চরিত্রটা ছিল নেগিটিভ। আর সেই জন্য মহিলারা আমাকে অনেক গালিগালাজ করতেন। এই নেগিটিভ ব্যাপারটা কাটালো দাদাজী'র চরিত্রটা। আজও বহু মানুষ আমাকে ‘দাদাজী’ বলে ডাকেন। বিশেষ করে গুজরাট, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের মানুষরা।

প্র: আগে অ্যাক্টিংয়ের যে টেকনিক্যালিটিগুলো ছিল এখন সেগুলো অনেকটাই চেঞ্জ হয়েছে। এখন কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে?

অভিজিৎ লাহিড়ী: এখনকার অভিনয় অনেক বেশি ন্যাচরাল হয়েছে। রিয়েলিস্টিক হয়েছে। নরম্যালি আমরা যে ভাবে কথা বলি সেটা বোঝা দরকার। আগে এর মধ্যে একটা নাটকীয়তা ছিল। অভিনয় করলে হবে ন্যাচরাল থাকতে হবে, রিয়েল থাকতে হবে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...