অ্যাডিনো ভাইরাসের সাধারণ লক্ষণগুলি কী কী?

শেষ বসন্ত এবং গ্রীষ্মের মুখে শিশুদের মধ্যে অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দুশ্চিন্তায় রেখেছে মানুষকে। এখনও তরতাজা করোনা ভাইরাসের স্মৃতি তাই যে কোনও ধরনের জ্বর হলেও যেন শুরু হয়ে যায় ভয়। পাঁচ বছরের কম শিশুদের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশি ঘটছে। তবে শুধু শিশু নয়, পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যেও সংক্রমিত হওয়ার ঘটনা নজরে আসছে চিকিৎসকদের।  

 অ্যাডিনো ভাইরাসের সাধারণ লক্ষণগুলি কী কী? কীভাবে এই রোগ থেকে সাবধানে রাখবেন আপনার শিশুকে, চিকিৎসা কী, পরামর্শ দিলেন পেডিয়াট্রিশিয়ান ডাঃ রোমি রায় (Dr. Romi Ray, Consultant Pediatrician)

ডাঃ রোমি রায় জানিয়েছেন, অ্যাডিনো ভাইরাস হল এক ধরনের ভাইরাস। এই ভাইরাস নতুন কিছু নয়। ১৯৫৩তে প্রথম দেখা গিয়েছিল। অ্যাডিনয়েড মানে আমাদের টনসিলের একটু ওপরে নাসোফারিএনক্স –এর পিছনে থাকে সেই গ্ল্যান্ডে প্রথম দেখা যায়। অ্যাডিনয়েড গ্ল্যান্ড থেকে প্রথম দেখা গিয়েছিল বলে নাম হয় অ্যাডিনো ভাইরাস।

সর্দি-কাশি, রেসপিরেটরি ট্র্যাক থেকে এটি বেশি হয়। ভাইরাস সবচেয়ে বেশি আক্রমণ করে আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক থেকে। তারপর সেটা নিচেও যায়।  সেই কারণে আমাদের গলা ব্যথা, জ্বর, সর্দিকাশি এগুলো শুরু হয়। তারপর তা ভিতরে ছড়ালে একটু গলা খাঁ খাঁ করে। যেমন নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিউলাইটিস দেখা দিতে পারে।

ড্রপলেট ইনফেকশনে হাঁচলে, কাশলে, কথা বললে সেই সময় বেরিয়ে এসে হাওয়ায় মিশে ছড়ায়। শিশু এবং পূর্ণবয়স্ক যে কেউ আক্রান্ত হতে পারে। স্পর্শের মাধ্যমেও এই রোগ বাহিত হতে পারে। এছাড়া খাবার বা জল থেকেও। মা বা খুব কাছে থাকা লোকজনের সূত্রেও ছড়াতে পারে। তবে মা থেকে শিশুর আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশ কম।

যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্যান্য ভাইরাসজনিত আর পাঁচটা ভাইরাল ইনফেকশনের মতোই এই ইনফেকশন। অ্যাডিনো ভাইরাসের সে রকম আলাদা করে বিশেষ লক্ষণ বোঝা যায় না। তবে এ বছর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেশ বেড়ছে।

অতিমাত্রায় জ্বর, গলা ব্যথা শিশুদের কিছু ক্ষেত্রে বমি, তার সঙ্গে ডায়েরিয়া, ইউরিন ইনফেকশন, ইউরিনারি টড়্যাক আক্রমণ করলে-এরকম লক্ষণ দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। এই মুহূর্তে যা অবস্থা তাতে আরও বেশি সচেতন হওয়া দরকার।

জ্বরের জন্য স্নান করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা প্রয়োজন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ভাল করে খাওয়াদাওয়া। এই ধরনের অসুস্থতা থেকে দূরে থাকতে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বাড়ে সেদিকে নজর দেওয়া উচিত। মরসুমি ফল, শাকসবজি, দুধ ন্যম করে শিশুদের খাওয়া দরকার। অ্যাডিনো ভাইরাস তো বটেই যে কোনও ধরনের জ্বরে ডিহাইড্রেশন যেন না হয়। ওআরএস, ডাবের জল, বাতাসা জল বেশি করে খেতে হবে। ইউরিন আউটপুট ভাল হওয়া দরকার। এটাও চিকিৎসার মধ্যে পড়ে।

কোনও কারণে শারীরিক জটিলতা দেখা না দিলে ভাইরাসের জোর স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। এই ভাইরাসের ঘরোয়া চিকিৎসা আলাদা করে তেমন নেই। জ্বর এলে ওষুধ খেতে হবে। সঙ্গে কাশি থাকলে তার জন্যও। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের মতামত নিয়ে। ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ এনে খেলে চলবে না।

পাঁচ বছর বয়সের নিচের শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয় যেমন এই ভাইরাসে তেমনি বয়স্ক মানুষ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, কঠিন অসুখে ভুগছেন তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তবে জ্বর হলেই যে অ্যাডিনো ভাইরাস এমন ভাবার কারণ নেই। জ্বরের মাত্রা বেশি থাকলে অযথা আতঙ্ক না করে শিশুকে স্নান করিয়ে গা স্পঞ্জ করে ওষুধ দিতে হবে এবং হাইড্রেশন ঠিক রাখতে হবে। অ্যাডিনো ভাইরাস টেস্ট সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। সেই প্রক্রিয়ায় প্রবেশের আগে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং শিশুর কষ্ট কমানোর জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন     

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...