স্ট্রোক হলে পরবর্তীকালে অনেকেই অনেক সমস্যায় ভোগেন। কী কী সমস্যা হয় তাদের? সেগুলো কী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় করা সম্ভব? এই নিয়েই পরামর্শ দিলেন, ফিজিওথেরাপিস্ট ড: কাজি জোয়াইফ ইসলাম...
হাইলাইটস:
১। স্ট্রোক কী কী ধরনের হয়?
২। স্ট্রোক হলে কী কী শারীরিক পরিবর্তন হয়?
৩। এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি কতটা সাহায্য করে?
স্ট্রোকের পরে মূলত কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে?
স্ট্রোকের সম্পূর্ণ কথা হল, Cerebral Vascular Accident (CVA)। যদি হঠাৎ কোন মানুষের মুখ, হাত, পা অবশ হয়ে আসে এবং কথা বলতে সমস্যা হয় বা কথা জড়িয়ে যায় তবে তাকে সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী হসপিটালে নিয়ে যাওয়া উচিত। কারণ, এই সমস্যাগুলি স্ট্রোক হওয়ার লক্ষণ।
যদি এই অ্যাটাক হওয়ার ৪ থেকে সাড়ে ৪ ঘন্টার মধ্যে রোগী উপযুক্ত চিকিৎসা পায়, তবে শারীরিক ঝুঁকি অনেক কম হয়ে যায়, আর রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে।
স্ট্রোক কী কী ধরনের হয়?
স্ট্রোক মূলত দুই ধরনের হয়।
১। স্টিমিক (Ischemic)
২। হিমোরেজিক (Hemorrhagic)
স্টিমিক স্ট্রোকের পরিমাণ সাধারণত খুব বেশি হয়। প্রায় ৮০% থেকে ৮৭% মানুষের এই স্ট্রোক হয়। কিন্তু ১৩% থেকে ১৫% মানুষের মধ্যে হিমোরেজিক স্ট্রোক হয়।
স্ট্রোক হলে কী কী শারীরিক পরিবর্তন হয়?
এই অ্যাটাক হলে, সেটি মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে মুখের আকার বদলে যেতে পারে, কারণ মুখ হালকা বেঁকে যায়। স্পিচ সমস্যা হয় অনেকের, অর্থাৎ কথা জড়িয়ে যায়, বা কথা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, যেমন হাত-পা প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। অনেকের চোখের সমস্যাও দেখা দেয়।
এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি কতটা সাহায্য করে?
এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে, প্রথমেই স্ট্রোক হওয়ার ফলে তার শরীরে কী কী সমস্যা দেখা দিয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করা হয় হয়। তার মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখা হয় সেটি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত। তারপর সেই সমস্যাগুলির উপর নির্ভর করে তার চিকিৎসা শুরু করা হয়।
কিন্তু সর্বপ্রথম এই কথাটাই মনে রাখতে হবে, ফিজিওথেরাপি যেন খুব সাবধান এবং সঠিক পদ্ধতিতে করা হয়। প্রথম থেকেই যেন অভিজ্ঞ ডাক্তার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা করে। কারণ, কোন কোন ডাক্তার প্যাসিভ মুভমেন্ট বেশি করায়, ফলে রোগীর সেরে উঠতে অনেক বেশি সময় লাগে।
অন্য কেউ রোগীর বডি মুভমেন্ট করানোর থেকে যদি পেশেন্ট নিজে বডি মুভমেন্ট বা ব্যায়ামগুলো করে, তবে তা রোগীর পক্ষে উপকারী।
এই সমস্যার কারণে কতদিন ফিজিওথেরাপি নিতে হবে?
ফিজিওথেরাপির সময়কাল নির্ভর করে রোগী কতটা অসুস্থ বা কতটা সমস্যার মধ্যে রয়েছে, তার উপর। প্রত্যেক পেশেন্টের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। সেই হিসাবেই ডাক্তার ফিজিওথেরাপির সময় নির্ধারণ করে।
বাড়িতে কোন ব্যায়ামের করলে কী স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা কমে?
কেউ যদি পূর্বে কোন এক্সারসাইজ প্রতিদিন অভ্যাস করত, তাহলে স্ট্রোকের পর তাকে সেই একই ধরনের ব্যায়াম করানো হলে সে কিছুটা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।
এছাড়াও যারা কোন এক্সারসাইজের সাথে যুক্ত ছিল না, তারা যদি পছন্দের কোনো এক্সারসাইজ সুস্থ হওয়ার পর প্রতিদিন অভ্যাস করে, তবে তা শরীরের পক্ষে ভালো।
কখন বোঝা যাবে ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন?
প্রথমে নিশ্চিত হতে হবে সেটি স্ট্রোক হয়েছে কিনা। শরীরে স্রোকের মতো অনেক চেমটম দেখা দেয়, অনেকে সেটা স্ট্রোক বলে ভুল করে। মুখ বেঁকে গেছে বা হাত-পা প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়ার অর্থই স্ট্রোক নয়। তাই চিকিৎসকদের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়েই ফিজিওথেরাপি নিতে হবে।
এই থেরাপি মানসিকভাবে সুস্থ হতে কতটা সাহায্য করে?
কোন রোগ হওয়ার পর অনেকে ডিপ্রেশনে চলে যায়। নিজের শরীর নিয়ে মানসিক সমস্যায় ভোগে। এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি তাদের মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে অনেক সাহায্য করে। সেই স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে আসে।