কীভাবে বাড়িতেই করবেন ম্যালিরিয়ার চিকিৎসা?

বর্ষার মরসুমে বৃষ্টির জমা জলে বাড়ছে ম্যালেরিয়ার সমস্যা,  কীভাবে বাড়িতেই করবেন ম্যালিরিয়ার চিকিৎসা? শিশুদের ক্ষেত্রে কি বাড়তি সাবধানতা জরুরি? ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিলেন ডাঃ ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় (Dr. Dhruba Banerjee, MBBS, Ex- Junior resident) 

ডাঃ ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন,  ম্যালেরিয়ার তিনটি লক্ষণ প্রধান। প্রথমে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। রোগীর ঠান্ডা লাগবে। তারপর প্রচন্ড জ্বর। তারপর জ্বর ঘাম দিয়ে ছেড়ে যাবে। ম্যালেরিয়া হলে লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস হওয়ার কারণে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। প্লীহা ও যকৃত বড় হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এই তিন লক্ষণ হল ম্যালেরিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ।

স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে দেহে প্রবেশ করে স্যালাইভা। তারপর প্রোটিস্ট নামক অনুজীবের মাধ্যমে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে পরজীবি। এর ফলে দেখা দেয় ম্যালেরিয়া।

তাই দেখতে হবে যাতে মশা না জন্মায়। বাড়ির আশেপাশে জল যাতে না জমে সেদিকে নজর রাখতে হবে। জমা জলে ম্যালেরিয়ার মশা ডিম পাড়ে। মশারি ব্যবহার করতে হবে। খোলা ড্রেন যে অঞ্চলে আছে, বর্ষায় জল জমে সেখানকার নাগরিকদের বেশি সচেতন থাকতে হবে। মশা প্রতিরোধক মলম ব্যবহার করতে পারে।

ল্যাবরেটারিতে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় রোগী ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছে কি না। প্রাথমিক পর্যায়ে যদি রোগ সংক্রান্ত জটিলতা না থাকে তাহলে রোগীকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা সম্ভব। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ায় হেমারেজ সমস্যা হতে পারে। সেরিব্রাল ম্যালেরিয়া হতে পারে। সেরকম ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করাই ভাল। কো মর্বিডিটিজ না থাকলে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করা যায়।

ম্যালেরিয়া একটা সময় সত্যিই মারণ রোগ ছিল। এখনও ভারতের বাইরে আফ্রিকায় এই রোগে বহু প্রাণহানি ঘটে। চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি ও সমবেত সচেতনতার কারণে এই রোগকে ভারতে অনেকটা সামলানো গেছে। মৃত্যু হারও কমেছে। আশা করা যায় আরও কমিয়ে আনা যাবে।

ছোটদের শুরু থেকেই বোঝাতে হবে মশার কামড় ভাল জিনিস নয়। যেসব অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ অনেক বেশি সেখানে মানুষের উচিত বাচ্চাদের এ রোগের ব্যাপারে সচেতন করে তোলা যাতে তারা মশার কামড় থেকে দূরে থাকে। জমা জল, ঝোপ ঝাড়ে খেলাধূলা এড়িয়ে চলে। কারণ শিশুদের ক্ষেত্রে এই রোগে জটিলতা বেশি হয়।

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করতে পারে এমন কোনও ডায়েট নেই। তবে যারা ক্যানসারের মতো রোগে আক্রান্ত,  রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল তাদের বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে।

কারও বাড়িতে যদি কোনও সদস্য ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয় তাহলে রোগী যতদিন না পুরো সুস্থ হচ্ছে ততদিন রোগীকে মশারির মধ্যে রাখতে হবে। কারণ ওই রোগীকে যদি ফের মশা কামড়ায় এবং তা অন্য কাউকে কামড়ায় তাহলে এক দেহ থেকে অন্য দেহে জীবাণু বাহিত হবে।

ভারত বর্ষা প্রধান দেশ। দীর্ঘস্থায়ী ভারী বর্ষা হয় এখানে। ম্যালিরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ এই সময় বেশি হয়। জল জমে থাকা তার একটা বড় কারণ। এই তিন রোগকে যদি কাবু করতে হয় তাহলে সতর্ক থাকাই প্রধান অস্ত্র।

এছাড়া খাবার গরম করে খাওয়া, জল ফুটিয়ে খাওয়া, জলে না ভেজা এইগুলো মেনে চললে বর্ষায় সুস্থ ও নীরোগ থাকা সম্ভব

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...