পেডিয়াট্রিক সফট টিস্যু সারকোমা (Pediatric Soft Tissue Sarcomas) বা এসটিএস কী ধরনের রোগ? শিশুরা কীভাবে আক্রান্ত হয়? বিরল গোত্রের এই ক্যানসারের (Rare Cancer) প্রধান উপসর্গগুলি (Sarcoma Symptoms) কী কী? এই রোগ কি জিনগত? শিশুদের ক্ষেত্রে এসটিএস-এর (STS) চিকিৎসা পদ্ধতি কী? সারকোমা সচেতনতা মাসে (Sarcoma Awareness Month) এই রোগ ও তার চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন হেমাটোলজি ও অঙ্কোলজির অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডাঃ প্রীতম সিংহ রায় (Dr Pritam Singha Roy, Associate Consultant Pediatric Hematology-Oncology)
ডাঃ প্রীতম সিংহ রায় জানিয়েছেন, শিশুদের যত রকমের ক্যানসার হয় তার মধ্যে ১০-১৫ শতাংশ ক্যানসার হল সারকোমা। ‘সারকো’ শব্দটির বাংলা অর্থ 'মাংসল'। সারকোমা এমন ধরনের ক্যানসারাস টিউমার যা বাইরে থেকে দেখতে মাংসল। সেগুলিই সারকোমা। যে কোনও বয়সী শিশুদের মূলত দু ধরনের টিস্যু থেকে সারকোমা হতে পারে। হাড় ও নরম মাংসপেশী থেকে। ত্বক ও হাড়ের মাঝের অংশে। হাড় থেকে যেসব টিউমার তৈরি হয় তাদের বোন সারকোমা বলা হয়। তার আবার দুটি ভাগ আছে। অস্টিও সারকোমা এবং ইভিন সারকোমা। হাতের এবং পায়ের যেসব লম্বা হাড় থেকে উৎপন্ন হয়। সব থেকে বেশি দেখা যায় হাঁটুর চারপাশের হাড়ে। ইভিং সারকোমা দেখা যায় বুক ও ঘাড়, মেরুদন্ডের হাড়ে। তবে লম্বা হাড় থেকে হয় না এমন নয়। সফট টিস্যু সারকোমা শরীরের যে কোনও অংশে হতে পারে। নাকের ভিতর, চোখে, জিভ, মূত্র থলি, প্রস্টেট, স্ত্রী জনন অঙ্গে।
বোন সারকোমার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি থাকে বয়ঃসন্ধি কালে। ১৩-৩০ বছর বয়সে সর্বাধিক সম্ভাবনা থাকে। তার চেয়ে কম বয়সী শিশুদের মধ্যে দেখা যায় না।
কিন্তু সফট টিস্যু সারকোমার ক্ষেত্রে ৬০-৭০ শতাংশ হয়ে থাকে শিশুদের। ১০ বছর বয়সের কম শিশুদের হয়। বয়সন্ধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। জন্মগত সারকোমাও দেখা যায়। এমনকি ১ মাস বয়সেও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা আছে। রোগের লক্ষণ নির্ভর করে শরীরের কোন অংশে হয়েছে তার ওপর। যেমন বোন সারকোমা যদি হাঁটু সংলগ্ন হাড়ে হয় তাহলে হাঁটু ফুলতে থাকবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যথা থাকে না। ঘুষঘুষে জ্বর থাকতে পারে।
সফট টিস্যু সারকোমার ক্ষেত্রেও লক্ষণ নির্ভর করে শরীরের কোন অংশে হয়েছে তার ওপর। যেমন নাকে হলে বারবার নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক ডাকা, নাকে রক্ত এরকম ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। সারকোমায় জিনের ভূমিকা গৌণ। মাত্র ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে জিনের প্রভাবে এই রোগ আসে।
সারকোমার চিকিৎসার তিনটে ভাগ আছে। কেমোথেরাপি, সার্জারি ও রেডিয়োথেরাপি। তিনটিরই ভূমিকা একে ওপরের পরিপূরক। কেমোথেরাপির ভূমিকা অপরিহার্য। সার্জারি ছাড়া সারকোমার চিকিৎসা হয় না। সেটা যে ধরনের সারকোমা আর শরীরের যে অংশেই হোক না কেন। ৬০-৬৫ শতাংশ শিশু চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে যায়। সম্পূর্ণ রোগমুক্তি ঘটে। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে সুস্থতায় ফেরা একটু কঠিন হয়ে যায়।