অ্যাংজাইটি কমাতে রেইকি হিলিং থেরাপি কীভাবে উপকার দেয়?

রেইকি হিলিং থেরাপি কী? অ্যাংজাইটি-মানসিক চাপ কমাতে এই থেরাপি কীভাবে উপকার দেয়? কীভাবে করা হয় রেইকি? এই বিশেষ এনার্জি হিলিং থেরাপি সম্পর্কে জানালেন রেইকি মাস্টার রিকি রায় (Ricky Ray, Reiki Master)

রেইকি শব্দটির বাংলা পরিভাষা 'মহাবিশ্বব্যাপী প্রাণশক্তি'। এই প্রাণ শক্তি সবার মধ্যে আছে। একটা জড় বস্তুর মধ্যেও আছে, জীবন্ত বস্তুর মধ্যেও আছে। জড় বস্তুর মধ্যে কীভাবে আছে? কেউ যদি একটা বাড়ির প্রতিটা ঘরে ঢোকে, প্রতিটা ঘর একই বস্তু দিয়ে তৈরি হলেও আলাদা আলাদা ঘরে ঢোকার পর আলাদা আলাদা অনুভূতি হয়। প্রতিটা ঘরের ব্যক্তিগত প্রাণশক্তি আছে। তেমনি প্রতিটা মানুষের মধ্যে, জীব জগতের প্রতিটা প্রাণীর মধ্যে প্রাণ শক্তি আছে। প্রাণশক্তি ফিঙ্গার প্রিন্টের মতো, কারও সঙ্গে কারও মিলবে না ব্যক্তিগত প্রাণশক্তি। এই প্রাণশক্তি নিয়েই মানুষ চলে। এছাড়া আরও একটি প্রাণ শক্তি আছে যা মহাবিশ্ব চেতনা থেকে সেই প্রাণশক্তি উদগত হয়। প্রাণশক্তির জগতে যাকে সর্ব শ্রেষ্ঠ বা রাজা বলা যেতে পারে। মহাবিশ্ব ব্যাপী প্রাণ শক্তি আর এই প্রাণ শক্তিকেই জাপানি ভাষায় বলে রেইকি। রেইকিকে সাধারণভাবে মনে করা হয় স্পর্শ চিকিৎসা, কিন্তু রেইকি হল শক্তিটার নাম।

রেইকি চিকিৎসা পদ্ধতিতে স্পর্শ করে চিকিৎসা করা হয়। এই পদ্ধতির মধ্যে যে শক্তি প্রয়োগ করা হয় সেই শক্তি রেইকি।

আমাদের অবচেতন মনে এই শিক্ষার বীজ বোপিত আছে। আমরা যখন কাউকে আশীর্বাদ করি তখন হাত তুলি। টিভি সিরিয়াল সিনেমায় পুরাণ ভিত্তিক কাহিনিতে দেখা যায় যখন কেউ কাউকে আশীর্বাদ দেয় তখন হাত থেকে জ্যোতি বের হয়ে সামনের মানুষটার জীবনে উপকার করছে। আমরা যদি সেই লজিকে ভাবি তার মানে আমাদের হাতের মধ্যে জন্ম অবস্থা থেকে একটা চ্যানেল করে দেওয়া হয়েছে প্রকৃতি প্রদত্ত যার মাধ্যমে একটা এনার্জি বেরতে পারে। আমরা তাকে ধাপে ধাপে ব্যবহার করি।

আমাদের শরীরটা একটা স্মার্ট ফোনের মতো। আমাদের মধ্যে বিভিন্ন গুণ রয়েছে। সেগুলো কিন্তু আমরা সব ব্যবহার করতে জানি না। এই ব্যবহার না করা পদ্ধতির মধ্যে একটি পদ্ধতি হল হাতের তালুর মধ্যে দিয়ে প্রাণ শক্তির প্রবাহ করার একটা ক্ষমতা প্রত্যেকটা মানুষকে প্রকৃতি দিয়েছে। কিন্তু তা 'ডাউনলোড' করা থাকলেও 'ইনস্টল' করা হয়নি। রেইকি থেরাপির কাজ সেই শক্তিকে বের  করে আনা। রেইকি প্রাচীন ভারত থেকে প্রচলিত। গৌতম বুদ্ধের আমলেও এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল। কালক্রমে তা জাপানে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ডাঃ মিকাওসুর দ্বারা গোটা বিশ্ব ব্যাপী খ্যাতি লাভ করে।

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে এই থেরাপি বিশেষ কাজ করে। টক্সিক সম্পর্ক, প্রতিকূল পরিস্থিতি, হয়রানি, আর্থিক, পারিবারিক টানাপোড়েন, নিগ্রহ ইত্যাদি নেতিবাচক ঘটনার কারণে শরীরের চারপাশে যে মনের আবারণ আছে তাতে প্রাণশক্তি আছে তা কমে যাচ্ছে। মানে একটা ঘড়া জলে পূর্ণ থাকার কথা আমরা যদি সেই ঘড়ার জল যদি বেরিয়ে যায় তাহলে সেই ঘড়াটাকে না ভরে জলের ছবি লাগিয়ে দিই তাতে তাহলে কিন্তু সেই ঘড়া পূর্ণ হবে না। রেইকি শরীরে যাওয়া মাত্র চেতনার দ্বার খুলে যায় জীবনকে  বিস্তৃতভাবে দেখার সুযোগ পাওয়া যায়। তখন জীবনের ফাইট এন্ড ফ্লাইট মোড থেকে ক্রিয়েটিভ মোডে চলে আসে মন।  জীবনের হয়রানি কমে। সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা পাওয়া যায়। মন তরতাজা হয়ে ওঠে। শিশুরাও এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারে। তাদের ওপর সবচেয়ে তাড়াতাড়ি কাজ হয়। সাধারণত রেইকি চিকিৎসা যখন করা হয় তখন হাতের মধ্যে রেইকি ক্ষমতাকে আহ্বান করা হয়। রেইকি চিকিৎসা নিজের ওপর নিজে করলে সবচেয়ে বেশি ফল পাওয়া যায়। একজন রোগী মানুষও নিজের ওপর নিজের রেইকি করে ফল পেতে পারে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...