'জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' শোয়ে আজ অতিথি রাফিয়াত রশিদ মিথিলা (Rafiath Rashid Mithila) অভিনেত্রী, গায়িকা, লেখিকা, শিশু উন্নয়ন সব মিলিয়ে বৈচিত্র্যে ভরপুর তাঁর কাজের পৃথিবী। দুই বঙ্গের পেশার দুনিয়ার ‘শিল্পী মিথিলা’কে সবাই চেনেন, কিন্তু নিজের দুনিয়ায় ‘ঘরের মেয়ে’ মিথিলা কেমন? প্রাণখোলা আড্ডায় জানালেন তাঁর মনের কথা
প্রঃ শেক্সপিয়রের ম্যাথবেথ অবলম্বনে পরিচালক রাজর্ষি দে’র ‘মায়া’য় তুমি একদম অন্যরকম লুকে। আগে কখনও তোমায় এভাবে দেখা যায়নি। চরিত্রটা করে লেগেছে?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলাঃ আমিও সত্যি বলতে আগে কখনও এরকম ধরনের চরিত্র করিনি। বহু বছর ধরে অভিনয় করছি। বাংলাদেশে বেশির ভাগ পাশের বাড়ির মেয়ে, প্রেমিকা- এই ধরনের চরিত্রে দেখা গিয়েছে। কিন্তু শেষ পাঁচ বছর ঠিক করেছিলাম আমি একটি এক্সপেরিমেন্ট করতে চাই। নাহলে একঘেঁয়ে হয়ে যাচ্ছে। তাই ওয়েবসিরিজ হোক সিনেমা হোক আমি এমন ধরনের চরিত্র করতে চাইছি যাতে আমি নিজেকে নতুনভাবে এক্সপ্লোর করতে পারব। ‘মায়া’ কলকাতায় আমার প্রথম ছবি। মায়ার চরিত্রটায় অনেক লেয়ার আছে। তিনধরনের বয়সের চরিত্র অভিনয় করতে হয়েছে। এই তিন ধরনের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমার অভিনয়ের স্টাইল, গেটআপ বদলাতে হয়েছে। আমি ভীষণ এনজয় করেছি। রাজর্ষিদার সঙ্গে প্রথম কাজ, বহু গুণি শিল্পী আছেন ছবিতে। কিন্তু আমার একবারও প্রথম মনে হয়নি সবাই এতো আন্তরিক ছিলেন। একটা বড় পরিবারের মতো করে আমরা কাজ করছি। ‘মায়া’ আমার কাছে নতুন কিছু পাওয়া।
প্রঃ শোনা যাচ্ছে ‘হ্যামলেট’ নিয়েও কাজ করবেন রাজর্ষিদা, সেখানেও তুমি আছো, এরকম চরিত্র পরপর আসছে তুমি কি নিজেকে লাকি মনে করছ?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলাঃ আসলে হয় কী, একবার কাজ করার পর যখন সিঙ্কটা ভাল হয়, ডিরেক্টর বুঝতে পারে অ্যাক্টর কী দিতে পারবে, আর অ্যাক্টরও যখন বুঝতে পারে ডিরেক্টর কী চাইছি তখন একটা টেন্ডেন্সি থাকে সেই কমফোর্ট জোনে কাজ করার। রাজর্ষিদা কিছুদিন আগে একটা ছবির শ্যুট শেষ করেছেন, সেই ছবির জন্যও আমাকে বল ছিলেন কিন্তু আমি সময় দিতে পারিনি। শেক্সপিয়র নিয়ে নিয়ে আরও কিছু প্ল্যান করছেন। আমকে ‘আপা’ ডাকেন, সব সময় বলেন ‘আপা তুমি কি ফ্রি আছ? এই রোলটা করতে চাও?...’। আমরা কেউ কাউকে চিনতাম না কিন্তু বিশ্বাসটা যে রেখেছেন, ‘মায়া’র মতো জটিল চরিত্র আমি করতে পারব তার জন্য আমি খুব কৃতজ্ঞ।
প্রঃ তুমি ‘ব্রাক’এ চাইল্ড ডেভলপমেন্ট নিয়ে কাজ করো, তোমায় তার জন্য সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াতে হয় সেই অভিজ্ঞতার কথা কিছু বলো
রাফিয়াত রশিদ মিথিলাঃ ওটাই আমার প্রাইমারি প্রফেশন। অভিনয়টা আমি ভালবাসার জায়গা থেকে করি। প্রফেশনালি করলেও সেটা ফুলটাইম প্রফেশন নয়। আমি শুরু থেকেই খুব বেছে অভিনয়ের কাজ করেছি। আমার আসল পেশা আমি একজন এনজিও কর্মী। ‘ব্রাক’ বাংলাদেশী এনজিও কিন্তু ব্রাক বিশ্বের বৃহত্তম এনজিও। বাংলাদেশের বাইরে আরও এগারোটা দেশে কাজ করে। সেই দেশগুলোতে আর্লি চাইল্ডহুড ডেভলপমেন্টের বিষয়গুলো আমি দেখি। এখন প্রোজেক্ট আছে উগান্ডা, তাঞ্জানিয়া, সেরেলিওন, সামনে শুরু হবে ফিলিপিন্সে। সেই জন্য আমায় প্রচুর ট্রাভেল করতে হয়। প্রায় পনেরো বছর ধরে কাজ করছি। বারো বছর ইন্টারন্যাশানাল পোর্টফোলিও নিয়ে কাজ করছি। প্রতি মাসে আফ্রিকা যেতে হয়।
প্রঃ আফ্রিকা এখনও মানুষ প্রচন্ড কষ্টে থাকে, চরম দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব মিলিয়ে। তোমার অভিজ্ঞতা একটু শেয়ার করো...
রাফিয়াত রশিদ মিথিলাঃ আফ্রিকার এক এক দেশে এক একরকম পরিস্থিতি। কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া, উগান্ডা সেদিন থেকে আমাদের মতোই দেশ। অর্থনৈতিকভাবে যদিও একটু পিছিয়ে। আবার দক্ষিণ সুদানে খুবই খারাপ পরিস্থিতি। ২০১১ সালে স্বাধীন হয়েছে। সেদিক থেকে বিশ্বের কনিষ্ঠতম। অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমি দক্ষিণ সুদানে গিয়েছিলাম ২০১১তেই। তার ঠিক ছ’মাস আগে স্বাধীন হয়েছে দেশ। সেটা একটা অদভুত অভিজ্ঞতা। একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ কেমন হয়, মানুষ কীসের মধ্যে দিয়ে যায়। অর্থনীতি তো বটেই, সামাজিক এবং আবেগের দিক থেকেও কী ধ্রনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে দেখেছিলাম। শিশুরা ওখানে যেভাবে বেড়ে উঠছে-এসব দেখার পর মনে হয় আমি ভাগ্যবান যে একটা স্বাধীন দেশে জন্মেছি। জীবন সম্পর্কে ধারণা বদলে যায়। আমার মেয়েকে আমি নিরাপত্তা দিতে পারছি, সে ভাল স্কুলে পড়ছে আর ওখানে মানুষকে ভাবতে হয় একবেলার খাবারও কীভাবে পাবে, আবার কখন যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে-সারাক্ষণ ভয়। ভীষণ ট্রমা। এই পরিস্থিতিতে সেটা সারিয়ে কীভাবে তুলনামূলক ভাল জীবনে ফেরানো যায়, এই শিশু ও বাবা-মাকে নিয়েই আমার কাজ।
প্রঃ তুমি বাংলাদেশের ইন্ড্রাস্ট্রিতে কাজ করেছ, এখানেও করছ- দুই জায়গার কাজের পদ্ধতিগত তফাৎ আছে, তুমি আলাদা কিছু করতে পারো, নাকি এক?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলাঃ মিল অনেক আছে, কাজের পদ্ধতির দিক থেকে। কিন্তু আমি বলব বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি বিশেষ করে ওটিটি খুব ভাল কাজ করছে। বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটক সব সময়ই ভাল ছিল। এগুলো ভীষণ অরগ্যানিক এখনও। সবাই ভীষণ প্যাশনেট। অনেক তরুণ পরিচালক কাজ করছেন, তাঁরা চোখে পড়ার মত ভাল কাজ করছেন। বাংলাদেশ হইচই-এর কাজগুলো যারা দেখেছেন তাঁরা জানেন। ‘চরকি’ বলে একটা ওটিটি আছে। কিছু আগে হল ‘হাওয়া’।
প্রঃ ‘চরকি’তে তোমার ‘মাইসেলফ অ্যালেন’ খুব সাড়া ফেলেছে...
রাফিয়াত রশিদ মিথিলাঃ হ্যাঁ, ওটা সবাই খুব ভাল বলেছে। বাংলাদেশে সবাই খুব প্যাশন দিয়ে কাজ করে। এখানের ইন্ড্রাস্ট্রিতেও প্যাশন আছে কিন্তু অনেক বেশি প্রফেশনাল, অরগ্যানাইজড। গিল্ড আছে। সব নিয়মকানুন লিখিত আছে। অনেক প্রফেশনাল ইন্ড্রাস্ট্রি কলকাতা।
প্রঃ কাস্টিং-এর সময় মহিলা অভিনেত্রীর ক্ষেত্রে যদি জানা যায় তিনি বিবাহিতা, সন্তান আছে, পার্সনাল স্টেটাসটা ট্যাবু করে কাস্টিং-এ একটা প্রভাব পড়ে। মুম্বইতে সেটা হয় না। তুমি যখন ইন্ড্রাস্ট্রিতে এলে তখন সন্তানের মা, কাস্টিংইয়ের ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয়েছে?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলাঃ আমি এখনও পর্যন্ত ফেস করিনি। পার্সনাল স্টেটাসের ওপর কাস্টিং ব্যাপারটা হয়, বাংলাদেশেও দেখেছি। তবে আমাকে ফেস করতে হয়নি। কারণ আমার একটা না বলার জায়গা আছে, যেহেতু অভিনয় আমার ফুলটাইম প্রফেশন নয়।
প্রঃ তোমাকে আমরা অ্যাঙ্কর হিসেবেও দেখেছি। বাংলাদেশে জনপ্রিয় একটা শোয়ে অ্যাঙ্করিং করতে। তোমায় টানে উপস্থাপনা, ভাল লাগে কথা বলতে?
রাফিয়াত রশিদ মিথিলাঃ অ্যাঙ্করিং আমার কাছে আড্ডার মতো। ‘আমার আমি’ বলে যে শোটা হোস্ট করতাম ওটা সেলিব্রিটি টক শো। আমার ইন্ড্রাস্ট্রির কলিগরা আসত। আমরা চুটিয়ে আড্ডা দিতাম।