কথায় বলে মাথা থাকলেই মাথা-ব্যথা হবে। কিন্তু এই মাথা ব্যথা কী কী কারণে হয় সে বিষয়ে আমাদের তেমন স্বচ্ছ ধারণা নেই। মাথা ব্যথা সাধারণত দু’ধরনের।
একটা সাধারণ মাথা ব্যথা যেটা গ্যাস অম্বল থেকে হয় বা অনেক সময় ঠান্ডা লাগলে হয়। কিন্তু আরও এক ধরণের মাথা ব্যথা আছে যার নাম মাইগ্রেন বা আধকপালি। এই দুই মাথা ব্যথার মধ্যে সাধারণভাবে কোনও পার্থক্য বোঝা না গেলেও চরিত্রগত কিছু পার্থক্য রয়েছে।
ডঃ সুচির মৈত্রের কথায়, মাইগ্রেনের ব্যথা দুরকমের। অউরা আর উইথআউট অউরা। অউরা অর্থাৎ লক্ষণাক্রান্ত। কারও ক্ষেত্রে অ্যাটাক হওয়ার আগে সে বুঝতে পারে। অর্থাৎ সাধারণ কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো ঘটলে রোগী বুঝতে পারে তার ব্যথা শুরু হতে চলেছে। যেমন চোখে ফ্ল্যাসিং লাইট বা হঠাৎ করে চোখে কালো স্পট দেখতে পাওয়া, হাত ঝিনঝিন করা বা কোনও একটা হাত অবশ লাগা ইত্যাদি হতে পারে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে ব্যথার শুরু হওয়ার আগে কোনও নির্দিষ্ট লক্ষণ স্পষ্ট হয় না।
তবে মাইগ্রেনের রোগীর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন মাথার একদিকটা ব্যথা করা, গা বমিভাব, তীব্র আলো, তীব্র আওয়াজ, সিনেমা হলের লাইট, বা ডিস্কোর ফ্ল্যাশিং লাইট, চোখের সামনে কোনও চলন্ত বস্তু দেখা প্রভৃতি জিনিসগুলো রোগীকে সমস্যায় ফেলে। সেই যন্ত্রণার সময় রুগী অন্ধকারে থাকতে বেশী পছন্দ করে।
সমীক্ষা বলছে, মাইগ্রেনের সমস্যা পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের বেশী হয়। তবে ঠিক কী কারণে এই ব্যথা হয় তার সন্তোষজনক কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সাধারণতঃ দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকা, কড়া রোদ, প্রচন্ড স্ট্রেস, টেনশন, রাত জাগা-এইসবের কারণে মাইগ্রেন অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মহিলাদের পিরিয়ডসের সময়, এবং হরমোনাল পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও এই ব্যথা বেশ ভোগায়। তবে সকলের ক্ষেত্রে একরকম হয় না। অনেকের আবার মাইগ্রেনের ব্যথার সঙ্গে হাত পা অবশ অর্থাৎ প্যারালাইসিসের মত হয়ে যায় যাকে বলা হয় হেমোফ্লেজিক মাইগ্রেন বলে।
কারও কারও বিভিন্ন খাবার থেকেও ব্যথা হতে পারে। যেমন চকোলেট, ক্যাফিন ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে সেই সব খাবার বর্জন করাই উচিত।
মাইগ্রেন প্রধানত স্নায়ুর অসুখ। মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেস বা টেনশনের কারণে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে চাপ পড়ে এবং মাথার মধ্যে রক্তনালী ফুলে কিছু কেমিক্যাল নিঃসৃত হয়ে ওঠে তখনই আমাদের ব্যথা অনুভূত হয়। কথায় বলে প্রিভেনশন ইস বেটার দ্যান কিয়োর।
তাই মাইগ্রেনের অ্যাটাক বারবার হতে থাকলে তার ‘প্রিভেনশন’ নেওয়া যেমন জরুরী তেমনই সেই ব্যথাকে ফেলে না রেখে অতি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।