বাংলা লেখক ও কবি শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়ের লেখা বহু বাঙালিই পড়েছে। এবার তার পরিচালনায় নির্মিত হয়েছে বাংলা ছবি 'মানবজমিন'। পরিচালক হিসেবে এটাই তার প্রথম কাজ। ছবি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা সরকার। এই ছবির শ্যুটিংয়ের নানা ঘটনা 'জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার' অনুষ্ঠানে-এ শেয়ার করলেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা ও পরিচালক শ্রীজাত।
প্র: 'মানবজমিন' নামটাই অসম্ভব ভাল।
শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়: তার পুরো কৃতিত্ব রামপ্রসাদ সেনের। উনি গানটা লিখে গিয়েছেন প্রায় ৩০০ বছর আগে। আমরা শুধু নামটাকে ধার নিয়েছি।
প্র: অদ্ভুত একটা সোশ্যাল মেসেজ দেওয়া হয়েছে এই ছবির মাধ্যমে। এছাড়াও এই ছবির একটা রোমান্টিক ও কমেডি টাচও রয়েছে।
প্রিয়াঙ্কা সরকার: এই গল্পটা খুব সরল ও সাদাসিধে ভাবে বলার চেষ্টা করা হয়েছে। আর রোম্যান্স তো সব কিছুতেই রয়েছে। কিন্তু ছবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্ট হল এই সোশ্যাল মেসেজ। দর্শকরা এন্টারটেইনমেন্টের সঙ্গে সঙ্গেই এটা দেখতে পাবে।
প্র: শ্রীজাতদা আমরা তোমাকে সঞ্চালনা করতে দেখেছি, তোমার লেখা পড়েছি। কিন্তু ছবি করার কথা কখন ভেবেছিলে তুমি?
শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়: যখন থেকে ছবি দেখা শুরু করেছিলাম তখন থেকেই ছবি করবার ইচ্ছা জন্মেছিল। যেহেতু ছবির মধ্যে সব শিল্প মাধ্যমের একটা সংমিশ্রণ আছে, ফলে অনেক সহজে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়। তাই সেটা বানাতেও তো অনেক অর্থ লাগে, সময় লাগে, পরিশ্রম লাগে। তাই যখন রানা ছবিটা প্রযোজনা করতে রাজী হল, পরম ‘হ্যাঁ’ বললো, প্রিয়াঙ্কাকে পেলাম, পরাণ দাও খুব আশা দেখালেন, আর সুরের দিক থেকে জয়কে পেলাম তখন ছবিটা করার কথা ভাবলাম।
প্র: একটা দৃশ্য খুব ভাল লেগেছে, যেখানে একটা ফাঁকা মাঠের মধ্যে একটা গেট খুলতে দেখা যাচ্ছে।
শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়: ঐ দরজাটাকে ঘিরেই আমাদের ছবির পুরো কাহিনী। ঐ দরজার এপার আর ওপারের দুটো পৃথিবীর মধ্যে অনেক ফারাক রয়েছে।
প্র: অনেক সময় কিছু স্ক্রিপ্ট আর গল্প অভিনেতাদের ভাবায়। তাই শ্রীজাতদা'র লেখা পড়ে আমার মনে হয় তোমরাও সেটা ফিল করেছ।
প্রিয়াঙ্কা সরকার: অবশ্যই, নতুন একটা আইডিয়াকে সিনেমার পর্দায় নিয়ে আসাটা সত্যিই একটা বড় কাজ। শ্রীজাতদা এটা পেরেছেন। এই ছবি শ্রীজাতদা'র প্রথম কাজ এমনটা মনে হয়নি। কারণ সেই ভাবনা চিন্তাটা আর জ্ঞানটা শ্রীজাতদা'র আছে। তাই প্লিজ দেখো ছবিটা।
প্র: এই যে স্ক্রিপ্ট ভালো লাগা বা গল্প ভালো লাগা- এটা একজন অভিনেতার ও পরিচালকের বড় পাওয়া
শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়: শুধুমাত্র একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রী নয়, একজন পরিচালকের কাছেও এটা বড় পাওয়া। কারণ ছবির কলাকুশলীরা যদি জিনিসটা স্বচ্ছ ভাবে দেখতে পান তাহলে পরিচালকের কাছেও কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে। আমার মনে হয় একটা ছবির আত্মা হচ্ছে তার চিত্রনাট্য। তাই সেটা যদি ঠিক না থাকে, তাহলে রবার্ট ডি নিরো’কে কাস্ট করলেও ছবি ভাল হবে না। তাই স্ক্রিপ্টটার পিছনে অনেকটা সময় দিতে হয়েছে। এছাড়াও সকল অভিনেতাই খুব সহজ ভাবে নিজের কাজটা করেছেন।
প্র: এই ছবিতে কী প্রথমবার রামপ্রসাদ সেনের গান গাইলেন অরিজিৎ সিং?
শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়: না গাননি। সম্প্রতি কয়েক বছরে মুক্তি পাওয়া বাংলা ছবিতেও রামপ্রসাদ সেনের কোনও ব্যবহার হতে দেখা যায়নি। আগে হয়তো হয়েছিল।
প্র: এই ছবিটা করতে গিয়ে কি প্রিয়াঙ্কার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল?
প্রিয়াঙ্কা সরকার: না, এই ছবি করতে গিয়ে নয়। এই ছবির শ্যুটিং শুরু হওয়ার অনেক আগে একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল আমার। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই 'মানবজমিন' ছবির পুরো টিমকে। শ্যুটিংয়ের সময়েও আমার অনেক সমস্যা হয়েছিল কিন্তু তারা সকলেই আমার পাশে থেকেছে। আমার জন্য ছবির শ্যুটিংয়ের শিডিউল চেঞ্জও করা হয়েছে অনেকবার।
শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায়: ও কিন্তু খুব কষ্ট করে কাজ করেছে। ব্যথা নিয়েও শ্যুটিং চালিয়ে গিয়েছে ও।
প্রিয়াঙ্কা সরকার: আমার মনে হয়, যখন ক্যামেরাটা চলছে ঐ সময়টুকু আমাদের ব্রেক। তখন আমাদের কোনও সেন্স থাকে না।