সিনেমায় অবদানের জন্য পেয়েছেন দেশ বিদেশের অজস্র সম্মান। যার মধ্যে অন্যতম হল ইতালি সরকারের দেওয়া 'ভিটোরিও ডি সিকা'। তিনিই একমাত্র ভারতীয় যিনি এই সম্মান পেয়েছেন। জনপ্রিয় পরিচালক ও অভিনেতা গৌতম ঘোষ। খুব তাড়াতাড়ি আসছে 'কলকাতায় মুজিব' ও 'রাহগির' মতো ছবি। ‘জিয়ো আড্ডা উইথ অনিন্দিতা সরকার’এ জানালেন নতুন ছবি ও আগামী প্রজেক্ট তাঁর ভাবনাচিন্তার কথা।
প্র: আপনার নতুন কী প্রজেক্ট আসতে চলেছে?
গৌতম ঘোষ: হ্যাঁ অবশ্যই, আমি যে ধরনের ছবি করি সেগুলোকে মানুষ অনেক সময় ফিচার আবার অনেক সময় তথ্যচিত্র বলেন। কিন্তু এখন আর আমি এর কোনও পার্থক্য বুঝি না। কারণ এখন আধুনিক সিনেমা সব এক সঙ্গে মিশে গিয়েছে। আমার ক্ষেত্রে কোনও ফিচার ছবি তৈরি করার পর আমি বেরিয়ে পড়ি কোনও এডুকেশনাল প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করার জন্য। কিন্তু কোভিডের জন্য আমার একটা ছবি রিলিজ হয়েনি। যার নাম 'রাহগির'। ২০১৯ সালে ছবির শ্যুটিং শেষ হয়েছিল। শুনছি ছবিটা নেটফ্লিক্স বা অ্যামাজন প্রাইমে আসবে। অন্যদিকে একটা ম্যাল্টি-ল্যাঙ্গুয়েজ ছবি শ্যুটিং চলছে। এছাড়াও 'কলকাতায় মুজিব' বলে একটা ছবি আসবে। অনেকে জানেন না যে মুজিব কলকাতায় বহু ছিলেন। সেই নিয়েই এই ছবির গল্প।
প্র: আপনার প্রতিটা কাজ আমাদের মনে একটা দাগ কেটে যায়।
গৌতম ঘোষ: আসলে আমার যেটা মনে হয়, আমরা একটা জিনিস নিয়ে গভীর ভাবে ভাবি না। আমরা কেন সিনেমা দেখতে যাই? কিছু জানার জন্য, সময় কাটানোর জন্য। আমাকে যদি এই প্রশ্নটা করা হয় তাহলে আমি বলবো, একটা সময়ের অভিজ্ঞতাকে আমরা উপভোগ করতে যাই। একটা ছবি যখন তৈরি হয়ে তখন তার স্ক্রিপ্ট লেখা হয়েছে, শ্যুটিং হয়েছে, এডিটিং হয়েছে। এই সব কিছুই অতীত। কিন্তু যখন ছবিটা দেখছি তখন মনে হচ্ছে আমাদের সামনেই সব কিছু হচ্ছে। তাই পৃথিবীতে যে ছবিগুলোকে শ্রেষ্ঠ ছবি বলা হয়। সেগুলো কিন্তু দর্শকদের একটা নতুন অভিজ্ঞতা দিয়েছে। সেই কারণেই দীর্ঘস্থায়ী হয়।
প্র: আপনার ছেলে ঈশান 'ঝিল্লি'র মতো ছবি বানিয়েছে। যেটার প্রযোজনা করেছেন আপনি। 'ঝিল্লি' নিয়ে কিছু বলুন?
গৌতম ঘোষ: আমি যেটা বললাম, 'ঝিল্লি'তেও সেই সময়ের অভিজ্ঞতা পাবে। সম্পূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা। যে ভাষায় ঈশান এই ছবিটা তৈরি করেছে, সেই ভাষায় এর আগে ছবি হয়নি। আমার সন্তান হিসেবে আমি ওকে নিয়ে গর্বিত এই জন্য যে ও কোনও গতানুগতিক ছবি করেনি। একটা পরীক্ষামূলক অত্যন্ত সাহসী ছবি করেছে ঈশান। নিজের ছবির মধ্যে দিয়ে একটা কমিউনিটির জীবনকে দেখিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এটা সম্পূর্ণ ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি। আর হয়তো ভালো ছবি বলেই টপ ইন্টারন্যাশনাল ছবিগুলোর মধ্যে সেরার পুরস্কার জিতে নিয়েছে 'ঝিল্লি'।
প্র: এখন অনেক ছেলে-মেয়েরা আসছেন অভিনেতা-অভিনেত্রী বা পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। তাদের কী সাজেশন দেবেন আপনি?
গৌতম ঘোষ: আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারবো। আমার মনে হয় প্রাথমিক ভাবে যে কাজ সে করতে আসছে তার জন্য একটা হোমওয়ার্ক করা দরকার। অভিনয়টা মন দিয়ে শিখতে হয়। আর সবচেয়ে বড় কথা সব সময় চোখ কান খোলা রাখতে হবে। একটা চরিত্রে অভিনয় করতে হলে আমি কী কী দেখেছি ও অবজার্ভ করেছি, সেটা কাজে লাগাতে হবে। আমি 'পার' ছবির শ্যুটিংয়ের আগে নাসিরকে বলেছিলাম মিরাটের দলিত মানুষদের জীবন কেমন সেটা দেখতে। তাই প্রতিটি ডিপার্টমেন্টে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। যাতে আমি যখন কাজ শুরু করব তখন যাতে কোনও ভুল না হয়।
প্র: এই সব কিছুর জন্য অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষারও প্রয়োজন হয়।
গৌতম ঘোষ: হ্যাঁ, দরকার তো আছেই। আমাদের একটা সমাজ যেখানে এত বৈষম্য রয়েছে অনেক রকমের শ্রেণী রয়েছে। কে কী রকম সুযোগ পায় সেটার উপরেও অনেকটা নির্ভর করছে। আমাদের বাড়িতে ছোটবেলা থেকেই ছেলে-মেয়েরা একটা ভাল পরিবেশ পেয়েছে সাহিত্যচর্চার, চিত্রকলা জন্য। আবার অনেকে হয়তো সেটা পায়নি কিন্তু তাও সে দারুন কাজ করেছে। তবে এটা ঠিক যে, পরিবেশ, পরিবার ও ভাল বন্ধুবান্ধব থাকাটা ম্যাটার করে।