‘গুড বয়’ ইমেজ থেকে বেরিয়ে এবার ধূসর চরিত্রে অভিনয় করছেন অভিনেতা গৌরব চক্রবর্তী। 'বিসমিল্লা' ছবিতে তিনি কালোয়-সাদায় শিবু। এই চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নিজেকে বারবার ভেঙেছেন তিনি। চরিত্রের ভাষা ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজটা রপ্ত করতে হয়েছে। কেমন ছিল শিবু হয়ে ওঠার প্রস্তুতি পর্ব, সেই কাহিনি জিয়ো বাংলার দর্শকদের জানালেন গৌরব।
প্র: এই ছবিতে কাজ করে তোমার কী অভিজ্ঞতা?
গৌরব চক্রবর্তী: এই ছবিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা দারুণ। এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ আমি বেশি পাই না। ছবিতে আমার চরিত্রটা একটু ধুসর। এর আগে আমি রাজ চক্রবর্তীর 'পরিনীতা' ছবিতেই আমি এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আমার লুক ও কথা বলার ধরন চেঞ্জ করতে হয়েছে এই চরিত্রের জন্য।
প্র: তোমাকে দর্শকরা গুড বয় ইমেজে দেখেই অভ্যস্থ। সেখান থেকে কি করে প্রস্তুতি নিয়েছিলে?
গৌরব চক্রবর্তী: গুড বয়ে চরিত্রের পাশাপাশি আরবান চরিত্রে অভিনয় করার জন্য আমাকে ডাকা হতো। তাই এই ছবিতে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমাকে চরিত্রের ভাষা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজটা রপ্ত করতে হয়েছে। আমাদের ছবিতে খুব বেশি যে সময় পাওয়া যায় এমনটা নয়। তাই এই কম সময়ের মধ্যেই আমাকে প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। এই চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ করে দেওয়া জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই ছবির পরিচালক ও প্রযোজককে। কিন্তু আমার অভিনয় কেমন হয়েছে সেটা দর্শকরাই বলতে পারবেন।
প্র: ছবির কনটেন্ট নিয়ে তুমি কী বলবে?
গৌরব চক্রবর্তী: এই ছবিতে বার্তা দেওয়া হয়েছে যে "সব ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ হল সবচেয়ে বড়। যখন ধর্মের কোনও বিষয়ে চলে আসে তখন বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কিন্তু তাও পরিচালক এই সাহসী বিষয়ে নিয়ে কাজ করেছেন। বিশেষ করে এই সময় ছবিটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্র: ছবির ট্রেলার ও গান মুক্তি পেয়েছে। তোমার পরিবারের সকলে তোমায় দেখে কী প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে?
গৌরব চক্রবর্তী: তারা সকলেই বলেছেন যে ট্রেলারে আমাকে খুব অন্যরকম দেখতে লাগছে। ভালোই লেগেছে তাদের। এখন অপেক্ষায় আছি কবে ছবিটা রিলিজ করবে। তারপর তাদের পরিবারের সকলকে নিয়ে ছবিটা দেখতে যাবো।
প্র: শুধু এই ছবির ক্ষেত্রেই নয়, অন্য কাজের সময় সব্যসাচী স্যার তোমাকে কতটা গাইড করে?
গৌরব চক্রবর্তী: বাড়িতে আমাদের মধ্যে কাজ নিয়ে খুব বেশি কথা হয় না। কিন্তু যখন কোনও প্রশ্ন থাকে তখন বাবা গাইড করে দেন। আর আমাকেই ডিসাইড করতে বলেন এবং নিজের ভুল থেকে শিখতে বলেন। আর যদি সেটা সঠিক হয় তাহলে তোমার কৃতিত্ব এবং ভুল হলে সেই ভুল শেখার অ্যাডভাইস দেন।
প্র: সব্যসাচী স্যারের সঙ্গে তোমার অভিনয়ের একটা তুলনা করা হয়। এই বিষয়েটা তুমি কীভাবে দেখো?
গৌরব চক্রবর্তী: আমার কাছে ব্যাপারটা খুব পজিটিভ। আমার সঙ্গে যদি বাবার অভিনয়ের তুলনা করা হয় তার মানে আমার অভিনয়কে আরও ভালো বলা যেতে পারে। বাবার মতো অভিনয় করার ক্ষমতা আমার আছে বলে মনে হয়না। কিন্তু তার ধারে কাছেও যদি যাওয়া যেতে পারি তাহলেও অনেক বড় পাওয়া হবে। তাই বিষয়টাকে আমি খারাপ ভাবে দেখি না। আমি বরং মনে করি এটা আমার অভিনয়কে স্বীকৃতি দেওয়া।
প্র: কখনও যদি ফেলুদার চরিত্রে তোমাকে কাস্ট করা হয় তুমি কী করবে?
গৌরব চক্রবর্তী: আমার মনে হয় না এই চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলে কেউ না বলবে না। কিন্তু ফেলুদার ফ্যান হিসেবে আমি চাইব না সেই চরিত্রে অভিনয় করতে। কারণ সত্যজিৎ রায় লিখে গিয়েছেন যে ফেলুদার হাইট ছয় ফুট দুই ইঞ্চি। কিন্তু আমার হাইট পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি। তাই শারীরিক গঠনের দিক থেকে ফেলুদার সঙ্গে আমার কোনও মিল নেই।
এবার একটা মজার খেলা খেলতে চলেছে অভিনেতা গৌরব চক্রবর্তী। যেখানে কয়েকটা কুইক কোয়েশ্চেনের উত্তর দেবেন অভিনেতা।
প্র: তোমার অভিনয়ে করা প্রিয় চরিত্র কী?
গৌরব চক্রবর্তী: প্রত্যেকটা চরিত্র খুব কাছের। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রিয় হল 'বিসমিল্লা'র শিবু।
প্র: কখনও কোনও ছবি সাইন করার পর রিগ্ৰেট করেছ?
গৌরব চক্রবর্তী: না, নট রিয়েলি। অনেক সময় যেটা করতে চেয়েছি সেটার হয়তো কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছতে পারিনি। সেই সময় মন খারাপ হয় কিন্তু রিগ্ৰেট হয় না।
প্র: ঋদ্ধিমাদি'র রান্না করা তোমার প্রিয় খাবার কী?
গৌরব চক্রবর্তী: আমি ওর বেকিংয়ের অনেক বড় ফ্যান। ঋদ্ধিমা কেক, ব্রাউনি বা কোনও সুইট ডিশ বানালে সেটা দারুণ খেতে লাগে আমার।
প্র: তুমি কী কখনও বেকিং করেছ?
গৌরব চক্রবর্তী: না রান্না ঘরের থেকে অনেকটা দূরেই থাকি আমি। তবে লকডাউনের সময় একবার রান্না করেছিলাম আমি। ঋদ্ধিমা বলেছিল ‘ভালো হয়েছে’।
প্র: কী নিয়ে বাবার কাছে সবচেয়ে বেশি বকা খেয়েছ?
গৌরব চক্রবর্তী: বাবা খুব একটা বকা বকি করেছেন এমনটা নয়। অনেকগুলো বিষয়ে ছোটবেলা থেকে গাইড করেছেন। আমাদের উচ্চারণ নিয়ে বাবা ছোটবেলা বকাবকি করেছেন। সব সময় বলতেন স্পষ্ট ভাবে উচ্চারণ করতে। তাই এখন লোকেরা যখন বলেন যে আমার উচ্চারণ খুব স্পষ্ট তার সমস্ত কৃতিত্ব যায় বাবার কাছে।
প্র: জীবনের সবচেয়ে এম্বারেসিং মোমেন্ট কী?
গৌরব চক্রবর্তী: আমি একবার অঙ্কে ২৩ পেয়েছিলাম। মানে ফেল করেছিলাম। সেটাই সবচেয়ে এম্বারেসিং ছিল আমার কাছে।
প্র: কোন জিনিসটা তোমার সঙ্গে সব সময় থাকে?
গৌরব চক্রবর্তী: আমার ফোন আর আমার ব্যাগ।
প্র: ভাইয়ের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি কী নিয়ে ঝগড়া বাধে?
গৌরব চক্রবর্তী: ছোটবেলায় কম্পিউটার নিয়ে ঝগড়া হত আমাদের মধ্যে। কিন্তু এখন সময় পেলেই আড্ডা দিই আমি। সপ্তাহে একদিন বাবা-মায়ের বাড়ি গিয়ে আমরা সকলে আড্ডা দিই।
প্র: টি না কফি?
গৌরব চক্রবর্তী: কফি।
প্র: মাউন্টইনস না ফরেস্ট?
গৌরব চক্রবর্তী: ফরেস্ট।
প্র: ঋদ্ধিমাদি'র থেকে পাওয়া বেস্ট সারপ্রাইজ গিফট?
গৌরব চক্রবর্তী: আমাকে ঋদ্ধিমা অনেক গিফট দিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে ওর দেওয়া সব গিফটই প্রিয়।
প্র: নিজেকে দেওয়া লাস্ট গিফট কী?
গৌরব চক্রবর্তী: আমার ফোনটা।