আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় পাইলস থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়?

পাইলস বা অর্শ কেন হয়? আয়ুর্বেদিক উপায়ে পাইলসের সমস্যা থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যায়? এই রোগে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করালে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে? প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত জানালেন ডাঃ বি. লক্ষ্মীনারায়ণ(Dr. B. Lakshmi Narayan, MD Ayurveda)

ডাঃ বি. লক্ষ্মীনারায়ণ জানিয়েছেন, পাইলসের প্রধান লক্ষণ হল যন্ত্রণাহীন রক্তপাত। কাঁচা রক্ত পাত হবে। সংক্রমন হলে কোনও কোনও সময় যন্ত্রণা হয়। এই দুই লক্ষণ হল সাধারণ এবং প্রাথমিক। এই রোগ অতি প্রাচীন। আয়ুর্বেদে তার চিকিৎসাও পুরনো। সেখানে পাইলসকে বলা হয় অর্শ। দু ধরনের অর্শ দেখা যায়। শুষ্ক এবং আদ্র। শুষ্ক অর্শে রক্তপাত হয় না। আদ্র অর্শে রক্তপাত হয়। দুই ধরনের সমস্যারই আয়ুর্বেদিক প্রতিকার সম্ভব। ট্যাবলেট, সিরাপ, চূর্ণ দিয়ে রোগের নিরাময় করা হয়। অর্শর একটি ভাগ সহজ অর্শ। এটি জিনগত সমস্যা। এধরনের অর্শ সহজে সারে না। পাইলসের সমস্যা অনেকটাই জীবনযাত্রা থেকে আসে। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। সেটাই অর্শ বা পাইলসের অন্যতম কারণ। নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মল নিষ্কাশনের সময় অতিরিক্ত চাপ পড়ে তখন অর্শ হয়।

তাই পাইলসের সমস্যা থাকলে প্রথম পরামর্শ জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন। জল বেশি করে খেতে হবে। লম্বা কাজে একটানা বসে না থেকে ব্রেক নিতে হবে। এবড়োখেবড়ো জায়গায় বসলেও অর্শ হতে পারে। ওষুধ, চিকিৎসার সঙ্গে জীবন যাত্রার বদল ঘটালে তবেই সেরে ওঠা সম্ভব। মাল্টিপেল পাইলস থাকলে নিরাময় দেরী হয়। বাকি বেশিরভাগ সেরে যায়। এই রোগের ঘরোয়া টোটকাও সঠিক জীবনযাত্রা। ফাইবার আছে এমন খাবার খেতে হবে। খুব বেশি রক্তপাত হলে সেই স্থানে কাঁচা হলুদ দেওয়া যায়। কাঁচা হলুদ খাওয়া উপকারী। মরিচ, শুট ছাড়াও বহু বিকল্প আছে। খুব বেশি মাছ, মাংস ডিম জাতীয় খাবার খেলেও অর্শ হতে পারে। বিশেষ করে ডিম আর মাংসে বিপদ বেশি। ডিমের কুসুম সবথেকে মারাত্মক। সব নিয়ম মেনে চললে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ১-২ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ সেরে যায় অর্শ। নব্য অর্শ মানে এক বছরের মধ্যে অর্শ হলে সেটা ওষুধে সারে। পুরনো অর্শ বা ক্রনিক পাইলস ওষুধের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। রক্তপাত, ব্যথা কমে। কিন্তু পাইল মাস তৈরি হয়ে গেলে সেটা আর ঠিক হয় না। তবে তার জন্য আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা আছে। তাকে খারসূত্র বলা হয়, ছুরি কাঁচি বিহীন সার্জারি। এনাস্থেশিয়া করেই যা করা হয়। সার্জারিতে এই ধরণের অর্শ ১০০ শতাংশ সেরে যায়।

এখন কমবয়সীদের মধ্যে জাঙ্ক ফুড খাওয়ার কারণে পাইলসের সমস্যা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিনের জীবন যাত্রার অভ্যাস যদি ঠিক থাকে অর্শ হলেও তাতে ভোগান্তি কম হয়। চিকিৎসায় সামলে দেওয়া যায় তাড়াতাড়ি।

আয়ুর্বেদিক ওষুধের দ্বারা চিকিৎসা হলে কম পক্ষে এক মাস সময় লাগে সেরে উঠতে। ব্লিডিং পাইলস হলে ওষুধের মাধ্যমে সাতদিনে রক্তপাত পাকাপাকিভাবে বন্ধ করা যায়। পুরো সারতে মাস চারেক সময় লাগে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ হলে সময় লাগে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...